নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা প্রায় ৭ লাখ রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসনে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি চুক্তি হয়েছে। আশা করা হচ্ছে এই চুক্তির আওতায় কিছুসংখ্যক রোহিঙ্গার দেশে ফেরা অবিলম্বে নিশ্চিত হতে পারে। অবশ্য গত নভেম্বরে প্রত্যাবাসন শুরু করতে বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল তার বাস্তবায়নে অনিশ্চয়তা কাটেনি। বুধবার স্বাক্ষরিত জাতিসংঘ-মিয়ানমারের সমঝোতা চুক্তিতে একটি ‘সহযোগিতার রূপরেখা’ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি রয়েছে, যার লক্ষ্য হলো ‘‘স্বেচ্ছামূলক, নিরাপদ, মর্যাদাকর এবং টেকসই’’ প্রত্যাবাসন। মিয়ানমারে জাতিসংঘের রেসিডেন্ট এন্ড হিউম্যানিটারিয়ান কো-অর্ডিনেটর নাট অস্টবি বলেছেন, ‘সংকট সমাধানের পথে এই চুক্তি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ অবশ্য বার্মা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্কের নির্বাহী পরিচালক কিও উইন বলেছেন, বর্মী সরকার কিভাবে নিশ্চয়তা দেবে যে, তারা সেখানে গিয়ে পুণরায় একই অবস্থার কবলে পড়বে না?
এদিকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালত আইসিসির স্বাক্ষরদাতা দেশের ভূখ-ে জোরপূর্বক রোহিঙ্গা বিতাড়ন আইসিসিতে বিচার্য কিনা, সে বিষয়ে বাংলাদেশের জবাব পেতে গত ৯ এপ্রিল আইসিসির দেওয়া চিঠির উত্তর বাংলাদেশকে আগামী ১১ জুনের মধ্যে দিতে হবে। কিন্তু খবর বেরিয়েছে যে, বাংলাদেশ এ বিষয়ে উত্তরদানে বিরত থাকতে পারে। মিয়ানমার ইতিমধ্যে বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যে, রোহিঙ্গা বিতাড়নকে মানবাতার বিরুদ্ধে অপরাধ গণ্যে তার তদন্ত ও বিচারের বিষয়ে বাংলাদেশ যদি আইসিসির এখতিয়ার আশা করে তাহলে চলমান প্রত্যাবাসনে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে চীন, রাশিয়া ও ভারত বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে সমস্যা সমাধানে পরামর্শ দিয়েছে বলেও মনে করা হয়।
বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী কোনো মন্তব্য না করে বলেছেন, রোহিঙ্গা ও দেশের স্বার্থ রক্ষা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন কবে কখন শুরু হবে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জান নেই। বাংলাদশ প্রথম তালিকায় ৮ হাজার উদ্বাস্তুর নাম পাঠালেও মিয়ানমার এ পর্যন্ত মাত্র এক হাজারের নাম ছাড়া করেছে, যা নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ ঢাকায় প্রত্যাবাসন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি নতুন করে আহবান জানিয়েছেন।