উত্তর কোরিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ মাধ্যম শনিবার জানায়, উত্তর কোরিয়ার নেতা, কিম জং উন এ সপ্তাহে প্রধান একটি রাজনৈতিক সম্মেলনে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আরো বৃদ্ধি করতে, ভাইরাস বিরোধী প্রবল পদক্ষেপ বজায় রাখতে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক প্রয়াস চালাতে প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
কিমের ভাষণ সম্পর্কে রাষ্ট্রীয় মাধ্যমের প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয় নি।কয়েকজন বিশেষজ্ঞের ধারণা ওয়াশিংটন এবং সোওল'র সঙ্গে আলোচনা পুনরায় শুরু করার কথা তিনি শীঘ্রই ভাবছেন না, বরঞ্চ দেশের সীমান্ত বন্ধ রেখে মহামারী সম্পর্কিত অসুবিধা দমাতে আত্ম-নির্ভরশীল একটি অর্থনীতি গড়ার প্রতি মনোযোগ দিচ্ছেন।
রাষ্ট্রীয় মাধ্যম কেসিএনএ বলেছে কিম উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দক্ষিণ কোরিয়াসহ কিছু দেশের সঙ্গে পররাষ্ট্র সম্পর্কের বিষয়ে কিছু“কৌশলগত নির্দেশনার” ঠিক করেছেন , তবে তারা ‘এর বিশদ কোনো ব্যাখ্যা দেয় নি।
কিম তাঁর ক্ষমতায় আসার ১০ বছর পূর্তিতে দলীয় কেন্দ্রীয় কমিটির এই ৫ দিনের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।২০১১ সালে তাঁর স্বৈরাচারী বাবা'র মৃত্যুর পর, কিম নিজ দেশে তাঁর সর্বময় ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করেন এবং তাঁর পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র সম্ভারের প্রসার ঘটান। তবে মহামারীর কারণে সীমান্ত বন্ধ থাকা, অনবরত জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উত্তর কোরিয়ার অর্থনীতি বিগত দুবছরে বড় ধরণের ক্ষতির মুখোমুখি হয়।
উত্তর কোরিয়ায় রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার কোনোই লক্ষণ নেই, তবে কিছু বিশেষজ্ঞের ধারণা বর্তমানের এই অসুবিধাগুলো অব্যাহত থাকলে কিমের নেতৃত্বের দীর্ঘকালীন স্থিতিশীলতা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। এ ধরণের উচ্চ পর্যায়ের দলীয় সম্মেলন কিমকে তাঁর নেতৃত্বের প্রতি একতা জোরদার করার সুযোগ এনে দেয় এবং প্রমাণ করে যে সরকার তাঁর কঠোর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তবে এটা স্পষ্ট নয় যে এ ধরণের সম্মেলন উত্তর কোরিয়ার সমস্যার মৌলিক কোনো সমাধান দিতে পারবে কিনা, যেসব সমস্যার কারণ বিশেষত বহু দশকের দীর্ঘস্থায়ী অব্যবস্থাপনা, নিজ থেকে দেশটিকে বিচ্ছিন্ন রাখা এবং তার পরমাণু অস্ত্রের অভিলাষ। আর এই কারণে দেশটি বিশ্বের সবচাইতে কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি।
গত বছর জানুয়ারী মাসে পার্টির কংগ্রেসে কিম স্বীকার করেন যে তাঁর পূর্ববর্তী অর্থনৈতিক কর্মসূচি ব্যর্থ হয়েছিল এবং বলেন দেশটিকে “সর্বকালের এক চরম পরিস্থিতির” মুখোমুখি হতে হয়।
কোরিয়ান সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি অনুযায়ী কিম বলেছেন "কোরীয় উপদ্বীপে অব্যাহত অস্থিতিশীল সামরিক পরিস্থিতি এবং সেইসঙ্গে আন্তর্জাতিক রাজনীতি কাল বিলম্ব না করে আমাদের রাষ্ট্রীয় প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণে আমাদের বাধ্য করেছে"।
তবে এ সপ্তাহের বিশেষ সম্মেলনে কিম নতুন উন্নয়ন নীতির সাফল্যের দাবি করেছেন এবং বলেন ২০২১ সালটি ছিল "বিরাট বিজয়ের একটি বছর" যা বৃহত্তর পরিবর্তন ও উন্নয়নের সূচনা বলে গণ্য হতে পারে।কিম কৃষি, নির্মাণ, বিদ্যুৎ, খনিজ, বন-সম্পদ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করেন, তবে স্বতন্ত্রভাবে এসব দাবির সত্যায়ন করা যায় নি।