প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর কার্যভার গ্রহণ করার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে ইওরোপের প্রাগে হাজার হাজার মানুষের এক সমাবেশে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র একমাত্র দেশ যে কিনা পারমানবিক অস্ত্র ব্যবহার করেছে, এবং এখন বিশ্বকে পরমাণু অস্ত্রমুক্ত করাটা সেই দেশেরই নৈতিক দায়িত্ব। আজ রাজধানী ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পারমানবিক শীর্ষ সম্মেলন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত শুনুন রোকেয়া হায়দারের কাছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁর কার্যমেয়াদে শেষ পারমানবিক শীর্ষ সম্মেলনে বিশ্ববাসীর কাছে তার নীতিমালা, ধ্যানধারণা তুলে ধরবেন। ২০০৯ সালে প্রাগের হ্রাদসানি স্কোয়ারে তিনি যে কথা বলেছিলেন –‘একটি পারমানবিক অসত্র কোন একটি শহর – তা নিউইয়র্ক, ইসলামাবাদ, মুম্বাই, অথবা টোকিও বা তেলআভিভ, প্যারিস, বা প্রাগ যেখানেই বিস্ফোরিত হোক না কেন, তা লক্ষ হাজার মানুষের প্রাননাশ করতে পারে।আর তা যেখানেই ঘটুক না কেন, আমাদের বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য, আমাদের সমাজ, আমাদের অর্থনীতি এবং আমাদের বেঁচে থাকার জন্য তার পরিণাম হবে সুদূরপ্রসারী।’।
সেই ভাষণের পর থেকে ২০১০, ২০১২, এবং ২০১৪ সালে অনেক আন্তর্জাতিক পারমানবিক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছে, যেখানে বহু দেশের প্রতি তাদের পরমানু স্থাপনা, বিভিন্ন উপকরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য চাপ দেওয়া হয়, যাতে সেইসব সরঞ্জাম কোন সন্ত্রাসীর হাতে না যায়।তবে এ ক্ষেত্রে উন্নতি হলেও, শীর্ষ সম্মেলনের মুল লক্ষ্য এখনও অর্জিত হয়নি।২০০৯ সালের ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেছিলেন, কোন সন্তরাসী যদি পারমানবিক অস্ত্র সংগ্রহ করে তা হলে সেটা হবে তার কথায় ‘বিশ্ব নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আশু এবং চরম এক হুমকী’।
সেই পরিস্থিতি যাতে না হয় তার জন্য, বিভিন্ন সম্মেলনে অংশগ্রহণকরীরা যে সব জায়গায় পারমানবিক সরঞ্জাম, তেজষ্ক্রিয় উপকরণ রয়েছে সেই সকল স্থানের নিরাপত্তা রক্ষা করা এবং পারমানিক উপকরণের মজুদ হ্রাস করার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।যাতে কেউ তা চুরি না করতে পারে। উগ্রবাদীরা তাদের সাফল্যের কথা বিবেচনা করে যুক্তরাষ্ট্রে কোন সামরিক ঘাঁটি থেকে পারমানবিক অস্ত্র চুরি করবে না, তবে তারা কোন চিকিৎসা গবেষণাগারে যেতে পারে যেখানে পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য তেজষ্ক্রিয় আইসোটপ রাখা আছে।
২০১৪ সালের শীর্ষ সম্মেলনে ২৩টি দেশ তাদের কাছে সবচাইতে বিপজ্জনক যে সব তেজষ্ক্রিয় উপকরণ রয়েছে, যা দিয়ে সন্ত্রাসীরা প্রচলিত কোন বিস্ফোরকের সঙ্গে মিশিয়ে সাংঘাতিক বোমা তৈরী করতে পারে, তা একেবারে নিরাপদভাবে বন্ধ রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। ২০১৬ সালের শীর্ষ সম্মেলনের আগে পর্যন্ত ২২টি দেশ তাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে। তবে তেজষ্ক্রিয় পদার্থের নিরাপত্তা বিষয়ে এক রিপোর্টে পারমানবিক হুমকী প্রতিরোধের উল্লেখ করে বলা হয়েছে যে, জাতিসংঘের পারমানবিক নজরদারী সংক্রান্ত ১৬৮টি দেশের মধ্যে ৬৩টি দেশ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিয়েছে তার মানে আরও অনেক দেশকে এ ক্ষেত্রে কার্যব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
নিউক্লিয়ার থ্রেট ইনিশিয়েটিভ বা এনটিআই-এর প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন সেনেটার স্যাম নান বলেন,‘এটা উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি এবং যে সকল দেশ অগ্রণী ভুমিকা পালনে আগ্রহী আমি তাদের সাধুবাদ জানাই।তবে ১শোরটিরও বেশী দেশে অসংখ্য স্থাপনায় এই তেজষ্ক্রিয় পদার্থে তৈরী কোন না কোন ধরণের বিপজ্জনক বোমা রয়েছে, যা নিরাপদে রাখা নেই এবং তা চুরি হয়ে যেতে পারে’।
পরিশোধিত ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম দিয়ে তৈরী কোন বোমা পাওয়া তেমন সহজ না হলেও তা একবার কারও হাতে গিয়ে পড়লে শোচণীয় পরিণাম হতে পারে।এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় অস্ত্র তৈরীর ক্ষমতাসম্পন্ন প্রায় ১৪ হাজার টন ইউরেনিয়াম আছে। যা কিনা সেই ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র জাপানের হিরোশিমার ওপর যে বোমা ফেলেছিল সেই ধরণের ২০ হাজার বোমা তৈরীর জন্য যথেষ্ট।
তবে হোয়াইট হাউস থেকে বলা হয়েছে, শীর্ষ সম্মেলনের ফলে – পরমানূ উপকরণ মজুদ রাখার অনেক স্থাপনা এখন কমে গেছে। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জশ আরনেস্ট বুধবার বলেছেন, যে গত বছর ইরানের সঙ্গে পারমানবিক চুক্তি অর্জনে রাশিয়া সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, ‘তাদের মজুদ করা পরিশোধিত ইউরেনিয়ামের বিরাট অংশ প্রায় ৯৮ শতাংশ দেশের বাইরে পাঠানো হয়।এবং তা সুরক্ষিত সেটা একটা ভাল উদাহরণ’।
শীর্ষ সম্মেলন এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় আলোচনা গবেষণা সত্ত্বেও, যারা পরমানু অস্ত্রের বিরোধী, যেমন গ্লোবাল যিরো গ্রুপ তারা বলছে – যতদিন পারমানবিক অস্ত্র থাকবে সে পর্যন্ত পারমানবিক নিরাপত্তা বলতে কিছুই থাকবে না।