অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সহজে বহন, ব্যবহারযোগ্য এবং স্বল্প মূল্যে জ্বালানী সরবরাহ করবে নিলয়ের পোর্টেবল বায়োগ্যাস প্লান্ট


নিলয় দাশ, পেশায় প্রকৌশলী। ছোট বেলা থেকেই লক্ষ্য মানুষের জন্য কাজ করা। লক্ষ্য পূরনের স্বপ্নে বিভোর থেকে অদম্য ইচ্ছা আর অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছেন গন্তব্যের দিকে। নিলয় বর্তমানে নিজের দুটি প্রতিষ্ঠানে দুটি আলাদা বিষয়ের উপর কাজ করছেন। একটি “সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং”- যেখানে স্বল্প খরচে নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার, বায়োগ্যাস ও এনার্জী এনালিটি) সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করছেন। অন্যটি, স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন যেটি একটি অবৈতনিক কমিউনিটি স্কুল। এই স্কুলের অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা তিনি।

bd biogas
bd biogas

আমরা জানি গ্লোবাল ওয়ার্মিং দ্বারা পুরো বিশ্ব আজ চিন্তিত। এই গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর মূল কারণ খনিজ জ্বালানির ব্যবহার, যার কোন বিকল্প এখনো বাংলাদেশে আসেনি। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এখনও মূল জ্বালানি হিসেবে লাকড়ি কিংবা অন্যান্য জ্বালানি-ই ব্যবহৃত হচ্ছে। যার কারণে গ্রীন হাউজ গ্যাস উৎপাদন ত্বরান্বিত হচ্ছে। এই খনিজ জ্বালানির ব্যবহার বিকল্প হিসেবে দেশীয় কোন টেকনোলজি উদ্ভাবন করা যায় কিনা - এটা নিয়ে নিলয় এর প্রতিষ্ঠান “সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং” কাজ করছেন ২০১৬ সাল থেকে। ফল পেতেও খুব একটা দেরি হয়নি। তারা সফলভাবে উদ্ভাবন করেছেন 'পোর্টেবল বায়োগ্যাস প্লান্ট' নামে একটি দেশীয় টেকনোলজি। নিলয় জানান, ‘পোর্টেবল বায়োগ্যাস প্লান্ট' মূলত তিনটি বৈশিষ্ট্যের সমন্বয় সাধন করে - সহজে বহনযোগ্য, ব্যবহারযোগ্য এবং স্বল্প মূল্যে এটি জ্বালানী সরবরাহ করবে। এই জ্বালানি রান্না এবং বাতি জ্বালানোর কাজে ব্যবহার করা যাবে। এই বায়োগ্যাস প্লান্টটি ওজনে খুবই হাল্কা, এই কারণে এটি যেকোন দুর্গম জায়গায় (পাহাড়ী এলাকা, চরাঞ্চল ইত্যাদি) খুব সহজে নিয়ে যাওয়া যায়। ‘প্লাগ এন্ড পে­ টাইপ’ হওয়ার কারণে যে কোন ব্যবহারকারী প্লান্টটিকে সহজেই ব্যবহার ও পরিচালনা করতে পারে। প্রচলিত বায়োগ্যাস প্লান্টগুলোর সাথে মূলত এখানেই পার্থক্য ‘পোর্টেবল বায়োগ্যাস প্লান্ট’ এর। সম্পূর্ন দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি বলে এই প্লান্ট এর খরচ তুলনামূলক ভাবে কম।”

বর্তমানে এই প্লান্ট এর পাইলট প্রজেক্ট চলছে। সার্জ ইঞ্জিনিয়ারিং এর তৈরি ‘পোর্টেবল বায়োগ্যাস প্লান্ট’ ইতিমধ্যে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃতি পেয়েছে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ফেলোশিপ, ২০১৭ সালে ফিনল্যান্ডের SLUSH প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের একমাত্র উদ্ভাবনী প্রজেক্ট হিসেবে নির্বাচিত হওয়া এবং ২০১৮ সালে বাংলাদেশ সরকারের আইডিয়া প্রজেক্ট কর্তৃক গবেষণা ফান্ড লাভ করা - ইত্যাদি এই প্রজেক্টটির সম্ভাবনার দিকটি নির্দেশ করে।

নিলয় স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন এর অন্যতম সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসাবেও কাজ করছে। স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন একটি অবৈতনিক কমিউনিটি স্কুল যা চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে অবস্থিত। গ্রামটির অধিবাসীরা একটি অবহেলিত জনগোষ্ঠী যারা জীবনের ন্যুনতম আয়োজন (শিক্ষা, মেডিকেল সুবিধা, স্যানিটারি ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, সুপেয় পানির উৎস ইত্যাদি) থেকে বঞ্চিত ছিল। প্রায় দশ বছর ধরে এই গ্রামে স্কুলটি পরিচালনা করতে গিয়ে নিলয় ও তার সহযাত্রী অন্যান্য সংগঠকরা শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই যুক্ত ছিল না, বরং অধিবাসীদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ভূমিকা রাখছেন।

bd biogas
bd biogas

টিউবওয়েল স্থাপন, মেডিকেল ক্যাম্প, সোলার সিস্টেম, স্যানিটারি সুবিধা প্রভৃতি স্থাপনের মাধ্যমে স্বপ্ননগর পুরো গ্রামটির পরিবর্তনে ভূমিকা রাখে। শিক্ষাক্ষেত্রে নতুন কিছু ধারনা যুক্ত করে গ্রামীণ স্কুলগুলোর মান উন্নয়নের চেষ্টা করছে স্বপ্ননগরের সংগঠকেরা। শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ প্রদান, পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে একটিভ লার্নিং প্রচলনের মাধ্যমে শিক্ষা দান করা। স্বপ্ননগর বিদ্যানিকেতন বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করে থাকে, ভবিষ্যতে এস.এস.সি এবং এইচ.এস.সি পর্যন্ত ক্লাস চালু করার পরিকল্পনা আছে।

XS
SM
MD
LG