অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট নিয়ে সমঝোতা ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একশ দিন


আসছে শনিবার ২৯শে এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের দায়িত্ব গ্রহণের একশ দিন পূর্ন হচ্ছে। এরই মধ্যে তিনি যেসব কাজকর্ম করেছেন সেগুলো তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি কতোটা পূরণ হয়েছে বা তিনি যা যা করেছেন তা নাগরিকদের চাওয়া অনুযায়ি একজন প্রেসিডেন্টের কাজ হিসাবে কতোটা গ্রহণযোগ্য তা নিয়ে নানা বিতর্ক উঠেছে। এসব নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকার জাতীয় সংবাদদাতা জিম মেলোনের রিপোর্ট।

১৯৩৩ সালের মহামন্দার সময় প্রেসিডেন্ট ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট দায়িত্ব নিয়ে কতোটা সফলতা অর্জন করেছিলেন প্রথম একশ দিনে সেই থেকে পরবর্তীতে প্রেসিডেন্টদের প্রথম একশ দিনের কাজকর্মের সফলতা যাচাই একটা নিয়মের মতো বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এরই ভিত্তিতে প্রেসিডেন্টরা পরবর্তী সময়কার কর্মকান্ডের ধারার একটা ধারণা পান। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একশ দিনের কাজকর্মের বিবরণের ওপর বিরোধী ডেমোক্রেটিক দলের নেতারাও সুযোগ পাবেন নতুন প্রেসিডেন্টের প্রতি তাদের বক্তব্য পেশ করার।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত টাউনহল ফোরামে ডেমোক্রেট নেতারা রিপাবলিকান নেতাদের সমালোচনা করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাজকর্ম সমর্থন করায়। অনেক রিপাবলিকান নেতা অবশ্য তার জবাব দিয়েছেন যথার্থভাবে। যেমন বলছিলেন এ্যারিজোনার রিপাবলিকান সেনেটর জেফ ফ্লেক।

“অনেক বিষয় আছে যেগুলোতে আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে সমর্থন করি; আবার অনেক কিছু আছে যাতে আমি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে একমত নই”।

প্রেসিডেন্টের ট্যাক্স রিটার্ন প্রকাশ না করায় বা প্রকাশে অস্বীকৃতি জানানোর প্রতিবাদে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত সমাবেশে ডেমোক্রেটরা অংশ নেন। তারা জুন মাসে জর্জিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এক বিশেষ কংগ্রেশনাল নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে এগুচ্ছেন। বলা হচ্ছে ঐ নির্বাচন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটি পরীক্ষা হতে যাচ্ছে।

ডেমোক্রেটিক দলের অন্যান্য নেতাদের পাশাপাশি দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী বার্নী স্যান্ডার্স দলকে পূনর্গঠণের চেষ্টা করছেন।

“ডেমোক্রেটিক দল পূনর্গঠণের মাধ্যমে এটিকে মাঠ পর্যায়ের দলে পরিণত করার চেষ্টা করতে হবে; নিন্ম থেকে শীর্ষ পর্যায় পর্যন্ত”।

ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধীতা করলেও, আসন্ন বাজেট সমস্যা সমাধানে প্রেসিডেন্ট ডেমোক্রেটদের সমর্থন চাইছেন। “সরকারের কাজকর্ম সচল রাখতে হবে। আপনারা কি তা মানেন?”

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের রাজনীতি বিশ্লেষক সারাহ বাইন্ডারের মতে ডেমোক্রেট নেতাদের পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ট্রাম্প সরকারের বিরোধীতার যে প্রাবল্য অনুভব করা যাচ্ছে তা; প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সহযোগিতার বিষয়ে যে ইতিবাচক হওয়ার কথা ভেবেছিলেন তাকে জটিল করে তুলতে পারে।

“আমি মনে করি ডেমোক্রেটরা বুঝতে পেরেছেন যে আপনি যতোক্ষন সত্যিকারভাবে সহযোগিতা না চান ততোক্ষন সহযোগীতা করেও লাভ নেই। ফলে সমর্থনের জন্যে ডেমোক্রেটদের ওপর যথেষ্ট রাজনৈতিক চাপ নেই এবং আমি মনে করিনা যথেষ্ট পরিমাণ সহযোগীতা তারা দেবে”।

রিপাবলিকান দলীয় নেতাদের কাছ থেকেও ট্রাম্প তেমনভাবে সহযোগীতা যে পাচ্ছেন সব সময় তা নয়। স্বাস্থ্য সেবা বা অন্যান্য কয়েকটি বিষয়ে তিনি তার দলের নেতাদের সহযোগিতা পান নি। যেমনটি বলছিলেন ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের অপর বিশ্লেষক উইলিয়াম গ্যালস্টন।

“আপনি প্রেসিডেন্ট হয়ে চাচ্ছেন আপনার বন্ধুদের মধ্যে ঐক্য হোক আর শত্রুপক্ষের মধ্যে বিভেদ হোক। এখনো পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট উল্টো কাজ করেছেন, তিনি হয়তো করতে চান নি; কিন্তু করছেন”।

তবে সর্বদাই ডেমক্রটরা যদি ট্রাম্পের বিরোধীতা করে চলে তবে তাতে কিছু ঝুঁকিও আছে। জর্জ মেসন বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষক জেরেমি মায়ার যেমনটি বলেন।

“প্রতি পদে পদে সর্বদা বিরোধীতা করাটা ডেমোক্রেটদের জন্যে সঠিক কৌশল নয়। আমেরিকানরা চায় কিছু একটা হোক; অন্য দল তাতে অবদান রাখুক”।

গত বছর নির্বাচনে হিলারী ক্লিনটনের পরাজয়ের পর ডেমোক্রেটরা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিরোধীতা করে আসছে’ সেখান থেকে সরে এসে কিছুটা নিজেদেরকে গোছানোর কাজে সময় ব্যায় করাটাও প্রয়োজন রয়েছে বলে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন।

ওদিকে ২০১৭ অর্থ বছরের বাজেট বরাদ্দ নিয়ে সমঝোতার জন্যে কংগ্রেসের হাতে মাত্র কয়েকটি দান বাকী। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একশ দিন পূর্ন হওয়ার আগে, ২৮শে এপ্রিল শুক্রবার মধ্যরাতের মধ্যে সমঝোতায় না পৌঁছাতে পারলে সরকারের কাজকর্ম সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে যাকে বলা হয় গভর্ণমেন্ট শাটডাউন।

আইনপ্রণেতাদের হাতে রয়েছে আর মাত্র চারটি কর্মদিবস। তবে প্রেসিডেন্ট আশাবাদী।

“দ্রুত এটি হয়ে যাবার সম্ভাবনা প্রচুর”।

শেষ মিনিটের অনিশ্চয়তা নতুন কিছু নয়। ২০১৩ সালেও কংগ্রেসে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। ১৬দিন সরকারের কাজকর্ম বন্ধ ছিল। অর্থাৎ শাটডাউন ছিল কেন্দ্রীয় সরকারে। ন্যাশনাল পার্ক পর্যন্ত বন্ধ ছিল। তবে এবার বাজেট সমঝোতার শেষ সময়ের সঙ্গে আরেকটি বড় ঘটনা হচ্ছে নতুন প্রেসিডেন্টের একশ দিন পূর্ন হওয়ার সময়ও। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একশ দিনে তাঁর মেক এ্যামেরিকা গ্রেট এ্যাগেইন প্রতিশ্রুতির অগ্রগতি কতোটুকু?

“আমার একশ দিনেক কাজকর্ম make America great again করারই ভিত্তি”।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাজেট যুদ্ধের অন্যতম প্রধান বিতর্কের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁর ৩২০০ কালোমিটার মেক্সিকো সীমান্ত দেয়াল; যা ছিল তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি।

“আমরা দেয়াল নির্মাণ করতে যাচ্ছি। বস্তুত তা শিঘ্রই শুরু হবে- প্রাক্কলিত সময়ের অনেক আগেই”।

তবে এই দেয়াল তোলার খরচ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার – হাজার হাজার কোটি ডলার যার ভার কাঁধে নেয়া রিপাবলিকানদের জন্যে কঠিন চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপরন্তু ডেমোক্রেটদের তরফ থেকে রয়েছে এর কড়া বিরোধীতা।

কে দেবেই এই বিশাল অর্থের যোগান, দেয়াল তোলার খরচ কে বহন করবে- অর্থায়ন কোত্থেকে হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে সতর্ক হয়ে কথা বলা হচ্ছে। যেমনটি বলছিলেন হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র শন স্পাইসার।

“প্রেসিডেন্ট কি করতে পারেন সে ব্যাপারে ক্ষনে ক্ষনে আমার কথা বলাটা ঠিক নয়”।

রিপাবলিকানরা স্বাস্থ্য সেবার নিয়ে ব্যার্থতার ব্যাথা এখনো ভোলেন নি। এতে করে দলের মধ্যেও চাপ বেড়েছে। ব্রুকিংস ইনস্টিটিউটের বিশ্লেষক মলি রেইনল্ডসের মতে

“প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও হোয়াইট হাউজ সম্পর্কে ক্যাপিটল হিলের সকলের মাঝেও খানিকটা শংসয় ও অনিশ্চয়তা রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াশিংটনের সৃষ্ট নন; তাঁর আইন প্রনয়ণ সম্পর্কিত অভিজ্ঞতা অতো নেই’ ফলে এই বাজেট বরাদ্দ নিয়ে কি হয় এখনো বলা কঠিন”।

বাজেট এর পর পরই ক্যাপিটল হিলে আসছে ট্যাক্স রিটার্ন ও স্বাস্থ্য সেবা আইন। এটাতে অন্তত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জেতা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

XS
SM
MD
LG