অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের কিউবা নীতি ঢেলে সাজালেন ট্রাম্প: একটি প্রতিবেদন


প্রায় অর্ধ শতক ধরেই কিউবার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের পর , সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্পর্ক অনেকখানি স্বাভাবিক করার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন , প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সেই সমঝোতার বেশ অনেকটাই খারিজ করে দিয়েছেন। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার অভিযানের সময়ে ডনাল্ড ট্রাম্প তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ওবামার যে সব পদক্ষেপ বাতিল করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম ছিল , কিউবার সঙ্গে ওবামা প্রশাসনের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঐতিহাসিক উদ্যোগ । গতকাল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে , যেন মনে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার মধ্যকার সম্পর্ক সেই আগেকার শীতল সম্পর্কের দিকে ফিরে যাচ্ছে।

ট্রাম্প বললেন এখন, যখন, আমি আপনাদের প্রেসিডেন্ট, আমেরিকা ক্যাস্ট্রো আমলের অপরাধগুলোকে তুলে ধরবে এবং কিউবার জনগণের মুক্তি সংগ্রামে তাদের পাশে থাকবে।

মায়ামির লিটল হাভানায় , প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কিউবার উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার প্রতি তাঁর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন যার ফলে দু দেশের মধ্যে দু বছর আগে যে স্বাভাবিক সম্পর্কের সূচনা হয়েছিল তা কার্যত থমকে গেল। কিউবার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে পূর্ব শর্ত আরোপ করে ডনাল্ড ট্রাম্প বলেন কিউবায় যে পর্যন্ত না সকল রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দেওয়া হয় , মত প্রকাশ ও সমাবেশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয় , সব রাজনৈতিক দলকে বৈধ ঘোষণা করা হয় এবং আন্তর্জাতিক তত্বধানে অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় , সে পর্যন্ত আমরা কিউবা সরকারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবো না।

ট্রাম্প যদিও বলছেন, যে কিউবার সঙ্গে ওবামা আমলের, তাঁর কথায়, এক তরফা চুক্তি তিনি বাতিল করছেন, আসলে পুরোপুরিটা তিনি বাতিল করেননি।

বারাক ওবামার কিউবা বিষয়ক নীতির কিছু গুরুত্বপূর্ণ দিক অটুট থাকছে। যেমন ধরুন কুটনৈতিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করা হবে না এবং হাভানা ও ওয়াশিংটনে যথারীতি দূতাবাস চালু থাকবে।

আর যদিও যুক্তরাষ্ট্রের পর্যটকদের উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, কিউবায় বিনিয়োগ করতে ইচ্ছুক ব্যবসায়ীদের ওপর ো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে , সেই পদক্ষেপগুলোও ততটা কড়া নয় , যতটা আশংকা করা হয়েছিল। এ সম্পর্ক ওয়াশিংটন ডিসি তে আমেরিকান ইউনিভার্সিটির , যুক্তরাষ্ট্র-কিউবা সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম লিওগ্র্যান্ড বলেন যে ভ্রমণে যদিও বিধিনিষেধ আছে, এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ নয় । সেই সঙ্গে কিউবার কিছু কিছু সংস্থার সঙ্গে ব্যবসায় বিধিনিষেধ থাকলেও , তা ও নিষিদ্ধ নয়। উইলিয়াম লিওগ্রান্ড সতর্ক করে দিয়েছেন যে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের ফলে মানবাধিকার পরিস্থিতি উন্নয়নের জন্য তার ব্যক্ত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব না ও হতে পারে।

দু দেশের মধ্যে সম্পর্ক যখন খারাপ ছিল, কিউবার জনগণ তখন এক ধরণের অবরুদ্ধ মানসিকতার মধ্যে বন্দি ছিল। আর এর ফলে দেশের ভেতরের সমালোচক, বিরোধী ও ভিন্ন মতাবলম্বীদের জন্য রাজনীতির জায়গাটা ছোট হয়ে আসে। সুতরাং আমার মনে হয় এই নীতির ফলাফলটা সম্পূর্ণ উল্টো হতে পারে।

প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের এই সদ্য ঘোষিত নিষেধাজ্ঞার শিকার হতে পারেন কিউবার ব্যবসায়ীরাও। কিউবা স্টাডি গ্রুপের অ্যান্ড্রু ওটাজো বলছেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে পর্যটকরা ঐ দ্বীপ রাষ্ট্রে ভ্রমণে যাওয়ায়, সেখানকার ব্যবসা যথেষ্ট চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।

তিনি বলছেন আপনি যদি আমেরিকানদের কিউবায় যাবার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেন , তাতে করে আপনি এর প্রতিকুল প্রভাব ফেলছেন কিউবার বেসরকারি ব্যবসায়িদের উপর।

এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ট্রাম্পের কিউবা নীতি তৈরি করেন দু জন রক্ষনশীল বিধায়ক সেনেটর মার্কো রুবিও এবং কংগ্রেসম্যান মারিও দিয়াজ বালার্ট । দিয়াস বালার্ট প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রক্ষার জন্য ধনবাদ জানান।

XS
SM
MD
LG