অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

তুরস্কে তীব্র দাবানল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে


তুরস্কের কয়েক হাজার দমকলকর্মী পঞ্চম দিনের জন্য ভয়াবহ দাবানলের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে। তুরস্কের এই দাবানলের ফলে কয়েকটি প্রধান পর্যটন কেন্দ্র হুমকির মুখে পড়েছে। দাবানল ইতিমধ্যেই কেড়ে নিয়েছে ছয়জনের প্রাণ।

তুরস্কের মারমারিস এলাকায় একটি পরিবার রাতের বেলা চারদিকের দাবানল থেকে প্রাণে বাঁচতে পালানোর সময় সেখানে আগুন আগুন বলে ক্রন্দনরত একটি শিশুর ছবি সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়।

তুরস্কের ভূমধ্যসাগরীয় এবং ইজিয়ান অঞ্চল, যেখানে ইউরোপের বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য পর্যটন কেন্দ্র রয়েছে, সেখানে আগুনের সাথে লড়াই করছে দমকলকর্মীরা। পাশাপাশি হেলিকপ্টার থেকে পানি নিক্ষেপ করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। তবে রেকর্ড উচ্চ তাপমাত্রা এবং জোরালো শুষ্ক বাতাস তাদের প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। কর্তৃপক্ষ কিছু রিসোর্টের পর্যটকদের সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলির মধ্যে একটি হল তুরস্কের বোড্রাম রিসোর্ট। বোড্রামের বাসিন্দা মেলিস বার্ডার রবিবার ভিওএ-কে বলেন:

“আমার খুব খারাপ লাগছে; প্রচণ্ড গরমের কারণে মানসিক অস্থিরতাও বাড়ছে। এখনও বোড্রামের বিমানবন্দর সড়কের আগুন বিপদজনক ভাবে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। বাতাসের গতি বাড়ার সাথে সাথে সেটি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে। কিছু মানুষ খুব মানসিক চাপে আছে, এটা দুঃখজনক। অন্যদিকে গত রাতে সাগরের তীর থেকে গানবাজনার শব্দ শুনতে পাচ্ছিলাম”।

এই দাবানল তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন শিল্পের উপর অনেক বড় একটা আঘাত হানছে, যা কিনা এখনও কভিড মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে। আগুনের কারনে দেশটির অনেক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তুরস্কের মানবগাট অঞ্চলে পরিচয় দিতে অনিচ্ছুক এক কৃষক তাঁর ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

তিনি বলেন: “আমার একটি গাড়ি কিংবা বাড়ি পুড়ে গেলেও আমি পরোয়া করতাম না, কিন্তু এই প্রাণীগুলোর দিকে তাকান। তারা তাদের জীবন হারিয়েছে, তারা আমার জীবন, এগুলি ছিল আমার বাড়ির সৌন্দর্য, এগুলি ছিল আমার আশা। তিনি আরও বলেন: এতো সব বিশৃঙ্খলার মধ্যেও আমার একটি বাছুর জন্ম নিয়েছে। এই বাছুরটিকে আমি আগুন থেকে উদ্ধার করি, আমার সন্তানরা সেটিকে বাহুতে জড়িয়ে বাঁচিয়ে রাখতে পারলেও, ওর মাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান শনিবার ৩০টি গাড়ির বহর নিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কিছু রিসোর্ট পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষয়ক্ষতির শিকার ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে এই অঞ্চলটিকে ‘দুর্গত এলাকা’ বলে ঘোষণা দেন। ১০০ টিরও বেশি অগ্নিকাণ্ডের সাথে নাশকতার কোনও যোগসূত্র আছে কিনা, তা তদন্ত করে দেখছে কর্তৃপক্ষ। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান অপরাধীদের প্রতি কড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন।

তিনি বলেন: “যদি কেউ আমাদের হৃৎপিণ্ড উপড়ে নেয়, আমি শপথ করে বলছি, আমরাও তার হৃৎপিণ্ড উপড়ে ফেলব; যদি নাশকতার সেরকম কোন যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায়। যার কিছু আভাস আমরা ইতিমধ্যে পেয়েছি – এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে”।

অগ্নিনির্বাপক বিমানগুলির কার্যকারিতা নিয়ে সরকার ক্রমবর্ধমান সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছে। বর্তমানে তিনটি ভাড়া করা রুশ বিমানের উপর নির্ভর করে চলছে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ। এরদোয়ান বলেছেন, প্রতিবেশী ইউক্রেন, রাশিয়া এবং আজারবাইজান থেকে আরও বিমান এসেছে এবং আরও আসার কথা রয়েছে। ১০০ টিরও বেশি সংখ্যক আগুনের বেশিরভাগ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ দাবী করেছে। তবে বেশ কিছু রিসোর্ট এখনো হুমকির মধ্যে রয়েছে, এবং আগামী দিনে তাপমাত্রা নতুন রেকর্ড মাত্রায় উন্নীত হওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া গেছে। সেটি হলে আগুনের সাথে লড়াইটা আরো দীর্ঘস্থায়ী হবে বলেই মনে হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG