অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মার্টিন লুথার কিং এর অহিংস আন্দোলন


যুক্তরাষ্ট্রে আজ এক ঐতিহাসিক ভাষণের ৫০তম বার্ষিকী।
নাগরিক অধিকার নেতা মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র যে অহিংস আন্দোলন শুরু করে, সারা দেশে কৃষ্ণাঙ্গ মানুষের জন্যে সমান অধিকারের দাবী পূরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই দিনটি পালিত হচ্ছে। ১৯৬৩ সালের ২৮শে আগস্ট তার অসাধারণ ভাষণে ডঃ কিং কেবল আমেরিকা নয়, বিশ্ববাসীকে জাগিয়ে তুলেছিলেন। ডঃ কিং এর অহিংস আন্দোলন প্রসঙ্গে ভয়েস অফ আমেরিকার ক্রিস সিমকিন্সের প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে এই পরিবেশনা।
রেভারেন্ড মার্টিন লুথার কিং তাঁর অহিংস আন্দোলনের প্রেরণা পেয়েছিলেন, ভারতীয় নেতা মহাত্মা গান্ধীর শিক্ষা থেকে।
আমেরিকার দক্ষিণ অঞ্চল জুড়ে তিনি মূলত আলোকপাত করেছেন সমাজের গোঁড়ামির ওপর।
ডঃ কিং বলেছিলেন,
“নিজেদের বর্ণবাদ নিরসনের সব ধরনের চেষ্টাই রুখে দিয়েছে মিসিসিপি রাজ্য”।
কিংএর নেতৃত্বে, লক্ষ লক্ষ কৃষ্ণাঙ্গ রাস্তায় নেমে এসেছিলেন শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাতে। সেইসাথে ছিল তাঁদের অহিংস অর্থনৈতিক অসহযোগ এবং নাগরিক অবাধ্যতা কর্মসূচী।
এই ধরনের অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া কতটা কঠিন তা প্রমাণিত হয়েছিল অ্যালাবামা রাজ্যের বার্মিংহামে।
সেই শহরের বর্তমান মেয়র উইলিয়াম বেল। বেলের মতে, সে সময় অবস্থা খুব খারাপ ছিল। মানুষ খুন হচ্ছিল, বাড়িতে, গীর্জায় মারা হচ্ছিল বোমা। মনে হচ্ছিল নরক নেমে এসেছে।
১৯৬৫ সালে, অ্যালাবামা রাজ্যের সেলমায়, কৃষ্ণাঙ্গরা অংশ নেয় ভোটাধিকারের দাবীতে পদযাত্রায়। এই পদযাত্রার নেতৃত্ব দেন কংগ্রেস সদস্য জন লুইস। দিনটি ইতিহাসে ‘রক্তাক্ত রবিবার’ নামে পরিচিত।
দিনটি স্মরণ করতে গিয়ে, লুইস বলেছেন, “ওরা আমাদের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল লাঠি নিয়ে। আমাদের ওপর ঘোড়া চালিয়ে যেতে চেষ্টা করেছে। কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়েছে। রাজ্যের এক পুলিশ কর্মী আমার মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। আমার মাথায় মারাত্মক আঘাত লেগেছিল, মনে হচ্ছিল আমি সেদিন মরেই যাব”।
নাগরিক অধিকার আন্দোলনের নেতা, ডঃ কিং-এর ঘনিষ্ঠ সহচর অ্যান্ডড়ু ইয়ং সেসময় এই সহিংসতার প্রেক্ষিতে সবাইকে শান্ত রাখার চেষ্টা করেছেন। তাঁর মতে, সেদিন যদি আমেরিকার শহরে শহরে গেরিলা যুদ্ধ শুরু হত, তাঁরা যদি সন্ত্রাসবাদের পথে চলে যেতেন তাহলে কখনই জয় অর্জিত হত না। আর আমেরিকাও টিকে থাকত না।
বার্মিংহামের ঐ সহিংস ঘটনা সারা পৃথিবীতে প্রচার হয়। ঐদিন পুলিশ যেভাবে স্কুল ছাত্রদের ওপর কুকুর লেলিয়ে দিয়েছিল, তাতে শিহরিত হয়েছিল সারা পৃথিবীর মানুষ।
১৯৬৩ সালের আগস্ট মাসে, হাজার হাজার কৃষ্ণাঙ্গ এবং শ্বেতাঙ্গ, সব বর্ণের মানুষ জড়ো হয় ওয়াশিংটনে, পদযাত্রায় অংশ নেবার জন্যে। ঐ দিনটিতে শান্তিপূর্ণভাবেই সবকিছু শেষ হয়, কোন গ্রেফতার ছাড়া।
কিন্তু তার কয়েক সপ্তাহ পরেই আবারো শোকের ছায়া নামে বার্মিংহামে। রোববারের বিশেষ স্কুল চলার সময় একটি ব্যাপ্টিস্ট গীর্জায় বোমা বিস্ফোরিত হয়। ঐ বিস্ফোরনে ৪ জন স্কুলছাত্রী মারা যায়। আহত হয় ২৩ জন।
যারা সেদিন মারা গেছে, তাদের একজনের বান্ধবী নাগরিক আন্দোলনের নেত্রী শার্লি গ্যাভিন ফ্লয়েড। এই ঘৃণ্য হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করেছেন তিনি।
“আমি এতই আতংকিত হয়ে পড়েছিলাম, যেকোন শ্বেতাংগ ব্যক্তি দেখলেই আমি ভয় পেতাম। আমি ভয়ে কোথাও যেতে পারতাম না। শুধু মনে হত আমারও এরকম পরিণতি হতে পারে”।
অনেক নেতা এই অহিংস আন্দোলনকে বর্ণনা করেন অ্যামেরিকার দ্বিতীয় গৃহযুদ্ধ হিসেবে।
ঐতিহাসিকদের মতে, অহিংস আন্দোলনকে অনেক সময় চেষ্টা করা হয়েছে, সহিংসতা দিয়ে দাবিয়ে রাখার। তবে, অ্যামেরিকার সর্বস্তরের সব নাগরিকের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় ও মুক্তি নিশ্চিত করার পেছনে এই আন্দোলন বহুদিন ধরে ভূমিকা রেখেছে।

please wait

No media source currently available

0:00 0:04:58 0:00
সরাসরি লিংক
XS
SM
MD
LG