যুক্তরাষ্ট্রে ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রাশিয়ার সংশ্লিষ্টতা-কথিত হস্তক্ষেপ বিষয়ে উত্থিত অভিযোগের তদন্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিশেষ কৌঁশুলী-অভিশংসক রবার্ট মোলারের দীর্ঘ প্রতিক্ষীত, রিপোর্ট এখন দাখিল হলো যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় সকাশে- এই মাত্রই গতকাল শুক্রবারের অপরাহ্নে-পড়ন্ত বেলায়-সরকারী-অসরকারী দফতর-কার্যালয় সবই প্রায় যখন কিনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বা গিয়েছে। বাইশ মাস সময়কালে মোটমাট ৩৭টি অভিযুক্তকরণ ক্ষেত্রসহ মোলার রিপোর্ট দাখিল হলো আইন মন্ত্রণালয়ে।
আইনমন্ত্রী এ্যাটর্নী জেনারেল উইলিয়াম বার এখন রিপোর্টটি পর্যালোচনা-বিশ্লেষন এবং সর্বোপরি পরখ করে যা যা বা যেটুকু বা যতোখানি সঙ্গত: প্রকাশ করবেন বা কংগ্রেস সমীপে উপস্থাপন করবেন- বলা হচ্ছে সম্ভবত: এই সপ্তাহান্তেই অর্থাৎ কিনা আজ শনিবার বা আগামীকাল রবিবারের ভেতরেই। ২০১৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সঙ্গে রাশিয়ার কোন যোগসাজশ হয়ে থাকলে তার বিস্তৃতি কতোখানি ছিল বা আদৌ কোন সংশ্লিষ্টতা ছিল না বা ছিল কিনা- এসব জিজ্ঞাসার জবাব পেতেই এই মোলার তদন্তানুসন্ধান শুরু হয়েছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের করদাতাদের অর্থে পরিচালিত এ তদন্তানুসন্ধানের রিপোর্ট করদাতারা কতোখানি জানতে পারবেন, কংগ্রেসের জানবার এখতিয়ার কতোটা জায়গা দখল করবে এসবই এখনো নির্ধারিত হওয়া বাকি রয়েছে। তবে, এ অবধি এটুকু জানা গিয়েছে যে মোলার তদন্তানুসদ্ধান এখন খতম হলো এবং এই তদন্তানুসন্ধানের এখতিয়ারের ভেতরে বাইশ মাসের মধ্যে যে ৩৭ সংখ্যক অভিযুক্তকরণ বিধৃত হয়েছে তার বাইরে আর কোন অভিযুক্তকরণেরও এখন আর কোন অবকাশ নেই।
ইতোমধ্যে, দীর্ঘ প্রতিক্ষা-প্রত্যাশা-বিলম্বিত লয়ের পর এখন বিভিন্ন মহল থেকে, সতর্ক প্রতিক্রিয়া শোনা যাচ্ছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আগের মতোই বলছেন, কোন যোগসাজশ কিছু ছিল না- কোন রকম কোন বাধাগ্রস্ততা দেখা দেয়নি- সবটাই ছিলো ছিদ্রান্বেষনের ভাঁওতাবাজি। দেখাই যাক শেষাবধি কি হয়।
মোলার রিপোর্ট এখন গিয়ে পৌঁছুলো আইন মন্ত্রী উইলিয়াম বারের হাতে।
বার্তা সংস্থা এ্যাসোসিয়েটেট প্রেসের এরিক টাকার বলেন, রিপোর্টের কতোটুকু অংশ কংগ্রেসকে জানানো হবে, সাধারন মানুষই বা কতোখানি জানতে পারবেন সে ঐ আইনমন্ত্রী বারই নির্ধারণ করবেন।
বিশেষ অভিশংষক রবার্ট মোলারকে এ তদন্তানুসন্ধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো ২০১৭ সালের মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক এফবিআই ডিরেক্টর জেনস কৌমি বরখাস্ত হবার পর।
২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণা অভিযান চলাকালে শুরু হয়েছিলো যে এফবিআই তদন্তানুসন্ধান, সহকারী আইন মন্ত্রী ডেপুটী এ্যাটর্নী জেনারেল রড রোযেনস্টাইন সে তদন্তানুসন্ধানের দায়িত্ব নিতে বিশেষ কৌঁশুলী রুপে নিযুক্ত করেন মোলারকে।
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণা অভিযানের সঙ্গে রাশিয়ার সম্ভ্যাব্য সংশ্লিষ্ট-যোগসাজস কেন্দ্রীক ৩৭ সংখ্যক ব্যক্তি-সংস্থার অভিযুক্তকরণ দেখা দেয় এই প্রায় ২২ মাস সময়কালে। এর মধ্যে অধিকাংশই ছিল রূশ সংশ্লিষ্টতার– যুক্তরাষ্ট্রের আইনী ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল যার অধিকাংশেরই অবস্থান।
এসবের ভেতর উল্লেখযোগ্য যুক্তরাষ্ট্র কেন্দ্রীক ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ছিলেন– যাঁরা কিনা অভিযুক্ত হয়েছেন বা দোষ স্বীকার করেছেন যেমন সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা পরামর্শক মাইকেল ফ্লীন, ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারাভিযানের প্রাক্তন ম্যানেজার পল ম্যানাফোর্ট এবং ট্রাম্পের প্রাক্তন ব্যক্তিগত আইনী উপদেষ্টা মাইকেল কোয়েন।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটীর পল শিফ বার্মান বলছেন, যোগসাজস বা সংশ্লিষ্টতার সঙ্গে ট্রাম্প নিজে জড়িত ছিলেন কিনা এবং সেটা প্রমান করা যায় কিনা– এ প্রশ্নের উত্তর খোঁজা সহজ নয় মোটে।
কংগ্রেসের ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতারা এই মুহুর্তে ট্রাম্পের অভিশংসন বা ইমপিচমেন্টের সম্ভাবনা নাকচ করে বলছেন, তাঁরা এখন উদগ্রীব হয়ে প্রতিক্ষা করছেন রিপোর্টে কি আছে সেটা জানার জন্যে।
রিপোর্টে কি রয়েছে-মোলার রিপোর্টে কি বলা হয়েছে, উপসংহারে যাওয়ার আগে সেটা আমাদের জানা দরকার- বলেন ডেমোক্র্যাট দলীয় নেতা সেনেটর চাক শুমার।
উপসংহার যাই হোক না কেন মোলার রিপোর্টের ফলোদয় ট্রাম্পের জন্যে, দেশের জন্যে প্রভূত-ব্যাপক বিস্তৃত হবে যে সন্দেহ নেই তাতে- বললেন ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ইলেইন কামার্ক।
রিপোর্ট, এই যে দাখিল হলো আইন মন্ত্রণালয়ে, এতে করে মোলার তদন্তানুসন্ধানের ইতি ঘটলো ঠিকই – কিন্তু একই সঙ্গে এটাও বলা যায় – এখন এই যে প্রতিক্ষার প্রহর গোনা শুরু হয়েছে, উপসংহার জানবার জন্যে, যার ফলোদয়ে রাজনৈতিক ঝড়ের কোনা ইঙ্গিত দেখা দিতে পারে কি!