অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবার চরমে উঠেছে


ভারত জুড়ে করোনার আবহে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও রাজ্যপালের মধ্যে দ্বন্দ্ব আবার চরমে উঠেছে। মনে থাকতে পারে, কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের দ্বন্দ্ব রীতিমত ব্যক্তিগত হয়ে দাঁড়িয়েছিল। কিছুদিন ভাটা পড়ার পর করোনার কারণে আবার সেই দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়েছে এবং চিঠি চালাচালির মাধ্যমে দুজন-দুজনকে চরম অপমান করতেও ছাড়ছেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি পাঁচ পাতার চিঠি লিখে রাজ্যপালকে বলেন, আপনি আপনার মতো করে থাকুন, রাজ্যের প্রশাসনিক কাজে মাথা গলাবেন না। বারবার হস্তক্ষেপ করে আপনি আমাদের কাজকে আরো অসুবিধাজনক করে তুলছেন। মনে রাখবেন আপনি কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত একজন প্রতিনিধি আর আমি জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধি। এর উত্তরে গতকাল রাতে একটি পাঁচ পাতার চিঠি দেন রাজ্যপালও। তাতে তিনি বলেন, আমরা দু'জনেই সাংবিধানিক প্রতিনিধি। সংবিধান অনুযায়ী আমরা কাজ করতে বাধ্য। আপনি সংবিধান অনুযায়ী চলুন, আমিও সংবিধান অনুযায়ী আমার কাজ করি। এইখানেই না থেমে জগদীপ ধনকর হুমকি দেন, আজ এই পর্যন্ত, কিন্তু আগামীকাল আমি আরো কিছু কথা বলবো।

সেই অনুযায়ী আজ শুক্রবার সকালে আর একটি সাত পাতার চিঠি লিখেছেন রাজ্যপাল। তাতে মুখ্যমন্ত্রীকে তিনি তুলোধোনা করে বলেছেন, আপনি আপনার রাজ্যে যেভাবে করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করছেন, সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক এবং আমি সেই দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করায় আপনার অসুবিধে মনে হচ্ছে। কিন্তু আমি আমার কাজ করবো কারণ এটা আমার কর্তব্য। আরো বলি, আমি মনোনীত নই, কেন্দ্র থেকে এই সাংবিধানিক পদে নিযুক্ত। আপনি মুসলিম তোষণে এত বেশি ব্যস্ত যে রাজ্যের কাজে সময় দিতে পারছেন না। আরো বহু উত্তেজক কথাবার্তা লিখেছেন জগদীপ ধনকর। তবে এককালের দুঁদে আইনজীবী এবং রাজনৈতিক কর্মী এবারে যথেষ্ট সচেতন হয়ে শব্দ প্রয়োগ করেছেন। আজকে মুখ্যমন্ত্রী যদি এই চিঠির উত্তর দেন, তা হলে এই ঝগড়া আরো গড়াবে। আর যদি উপেক্ষা করেন তা হলে ব্যাপারটা থামলেও থামতে পারে‌।

তবে শুধুমাত্র রাজ্যপালই নয়, কেন্দ্রের যে প্রতিনিধিদল এই সপ্তাহেই পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যের প্রশাসন কতটা কী করছে দেখে গিয়েছে, সেই দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র আজকে আবার একটি কড়া চিঠি লিখেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিবকে। তাতে তিনি খুব পরিষ্কার ভাবে বলেছেন যে রাজ্য সরকার করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে কী লুকোতে চাইছে সেটা বোঝা যাচ্ছে না। কেনইবা রাজ্যের নির্দেশে অন্য একটি অডিট গোষ্ঠী হয়েছে যারা করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে কিনা তা নির্ধারণ করে দেবে। এটা তো তাদের কাজ নয়, এটা করার কথা ডাক্তারের। চিকিৎসকের বদলে অন্য কাউকে দিয়ে কেন এটা করানো হচ্ছে আমরা তা জানতে চাই। রাজ্যের এই সিদ্ধান্ত ঠিক নয়। প্রায় একই কথা বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ থেকে গিয়ে ভিন্ন রাজ্যে কর্মরত চিকিৎসকদের বেশ কয়েকজন। তাঁরা রাজ্য সরকারকে খোলা চিঠি লিখে জানতে চেয়েছেন, এভাবে একটি রোগের বদলে অন্য রোগে মৃত্যু হয়েছে লিখে দেওয়াটা আইন সম্মত কিনা। করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হলে মৃত্যুর প্রাথমিক কারণ হিসেবে সেটাই লিখতে হয়। যা হচ্ছে সেটা অন্যায় তো বটেই, এই ব্যবস্থার অবিলম্বে পরিবর্তন চেয়েছেন তাঁরা। সুতরাং বলা যেতে পারে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নীতি এখন ঘরে বাইরে সমালোচিত হচ্ছে।

XS
SM
MD
LG