আজকের নারী কন্ঠ অনুষ্ঠানে আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেব মেরিল্যান্ড রাজ্যের আইন সভার ওয়েস অ্যান্ড নিন্স কমিটির সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে চেয়ারম্যান এমিরিটাস ডেলিগেট শীলা হিকসানকে।
যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড রাজ্যের ২০১৮ সালের আইন সভার অধিবেশন শুরু হয় বুধবার ১০ই জানুয়ারী। চেয়ারম্যান এমিরিটাস ডেলিগেট শীলা হিকসানের জন্য এটিই হবে সব শেষ সেশন বা অধিবেশন।
ডেলিগেট শীলা হিকসান প্রায় ৪২ বছর মেরিল্যান্ড আইন সভায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি একমাত্র মহিলা আইন প্রণেতা যিনি এত দীর্ঘ সময় মেরিল্যান্ড আইন সভায় জনগনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
ডেলিগেট হিকসান একজন ডেমোক্র্যাট। তিনি ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সেন্টাল কমিটিতে এক সময় কাজ করতেন। ১৯৭৬ সালে মেরিল্যান্ড আইন পরিষদের নিম্ন সভায় একটি সদস্য পদ শূন্য হয় এবং তখন হিকসানকে ওই পদে নিয়োগ করা হয়। দু বছর পর তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং জয়ী হন। সেই থেকে তিনি ৪ দশক ধরে নির্বাচনে জয়লাভ করছেন এবং পুরুষ প্রধান মেরিল্যান্ড আইন সভায় গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
ডেলিগেট শীলা হিকসান নারী কন্ঠ অনুষ্ঠানে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে রাজনীতিতে এবং মেরিল্যান্ড আইন পরিষদে তাঁর অভিজ্ঞতার কথা বলেন।
১৯৭০ এর দশকে, একজন মহিলা আইন প্রণেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন শীলা হিকসান। তাঁর কাছে জানতে চাই তখনকার পরিস্থিতি কেমন ছিল?
আমি ক্যাপিটল হিলে কাজ করেছি, ওয়াশিংটনে lobbyist হিসেবে কাজ করেছি। আমার, রাজনীতিকদের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা ছিল। লোকজন তাই সহজে আমাকে গ্রহণ করেছে। পুরুষরাও আমাকে ভাল ভাবেই গ্রহণ করেছেন কারণ তারা জানতেন যে আমার অভিজ্ঞতা আছে।
আইন প্রণেতা হিসেবে ডেলিগেট শীলা হিকসানের দীর্ঘ কর্ম জীবনে বহু উল্লেখযোগ্য আইন প্রস্তাব তিনি উথ্থাপন করেছেন এবং পাশ করেছেন।
তাঁকে প্রশ্ন করেছিলাম কোন বিলটি তাঁর জন্য বিশেষ ভাবে উল্লেখ যোগ্য?
“আমার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল Right to Die Bill। ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার। আমি যখন প্রথম আইন সভায় ঢুকি তখন আপনি ওই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন না। আমাদের একটা আইন পাস করতে হলো যার অধীনে একটি নথিপত্রে আপনি বলবেন যে কৃত্রিম উপায় আপনাকে বাচিয়ে রাখা যাবে না। আমি প্রথমে যে সব আইন প্রস্তাব উথ্থাপন করেছি সেটি তার মধ্যে অন্যতম। প্রায় ৫ বছর লেগেছে ওই বিল পাশ করাতে।”
আইন প্রণেতা হিকসান কর সংক্রান্ত আইন নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন।
তিনি বলেন, “আমি যেহেতু কর সংক্রান্ত কমিটিতে ছিলাম বহু কর বিষয়ক বিল নিয়ে আমি কাজ করেছি। আমি মনে করি উদারপন্থী ও প্রগতিশীল আইন প্রস্তাবের অর্থায়নের জন্য এবং প্রগতিশীল কার্যক্রমগুলো যাতে এগিয়ে যেতে পারে সে জন্য কর আরোপের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
ডেলিগেট শীলা হিকসান ২০ বছরের বেশী সময় কর আরোপের গুরুত্বপূর্ণ Ways and Means কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন।
তিনি বলেন, “কার্যক্রমগুলো যাতে ঠিক মত কাজ করে সে জন্য Ways and Means খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন কার্যক্রম চালু রাখার জন্য সেটা প্রয়োজন। আমি মনে করি আইন সভার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কমিটির অন্যতম সেটি।”
১৯৭০ এর দশকে মেরিল্যান্ডে মহিলা আইন প্রণেতাদের সংখ্যা এত কম ছিল যে তাদের জন্য নির্দিষ্ট সৌচাগারের ব্যবস্থা ছিল না। শীলা হিকসান Potty Parity Bill নামের একটি আইন প্রস্তাব উথ্থাপন করেন।
তিনি বলেন, “হ্যা আমি Potty Parity Bill উথ্থাপন করি।. ১৯৭৬ সামে আমি যখন প্রথম আইন সভায় যাই তখন মহিলাদের জন্য গণ সৌচাগার ছিল কিন্তু মহিলা আইন প্রণেতাদের জন্য তা ছিল না। নির্বাচিত মহিলা সাংসদদের অনেক দূরে হেটে গিয়ে সৌচাগার ব্যবহার করতে হতো। কিন্তু পুরুষ সাংসদদের সেই অসুবিধা ছিল না। যখন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিল নিয়ে ভোটাভুটি হতো তখন মহিলা সাংসদরা আটকে যেতেন। Potty Parity billটি তাই খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।”
বলা বাহুল্য Potty Parity Billটির কারণেই মেরিল্যান্ডের বিভিন্ন গণভবনে মহিলাদের জন্য অধিক সংখ্যায় সৌচাগারের ব্যাবস্থা করা হয়।
রাজনীতিতে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীরা এখনও অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হন। এ সম্পর্কে চেয়ারম্যান এমিরিটাস ডেলিগেট শীলা হিকসান বলেন।
তিনি বলেন, “আমি এখনও মনে করি যে পুরুষরা চ্যালেঞ্জ বোধ করেন যখন নারীরা ওই প্রক্রিয়ায় থাকেন। তারা হয়ত মনে করেন মেয়েরা বিশেষ সুবিধা পান। দরুন আপনি একটি রুমে ঢুকলেন আপনাকে একজন আসন ছেড়ে দিলেন। ভদ্র ব্যবহার। কিন্তু মহিলারা যখন নির্বাচিত হতে শুরু করেন তখন আদব কায়দার অভাব দেখা যায়। পুরুষরা হয়ত চান না যে মহিলারা অতিরিক্ত কিছু পান।”
ডেলিগেট শীলা হিকসান বলেন মহিলা আইন প্রণেতাদের সোচ্চার হতে হয়েছে। সব কিছু তাদের চাইতে হয়েছে। তাদের হাতে কিছু তুলে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন কমিটিতে মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করার দাবী তাদের করতে হয়েছে। তিনি বলেন পুরুষ আইন প্রণেতারা অনেক সময় বলতেন অভিজ্ঞতা ছাড়া তারা কিভাবে কাজ করবেন? শীলা হিকসান বলেন সুযোগ না পেলে আমরা অভিজ্ঞতা কি ভাবে অর্জন করব?
আইন সভায় মহিলাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় মহিলাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয় না।
তিনি বলেন, “আমি দীর্ঘ সময় ধরে নেতৃত্বে আছি। আমি মনে করি একটা বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে অভ্যন্তরীন বৈঠকগুলো অর্থাৎ একটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বার বার যে সব বৈঠক হয় তাতে মহিলাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হতো না। আমাদের অনেক সময় লেগেছে ওই সব বৈঠকে অন্তর্ভুক্ত হতে। আপনি যদি একটা আইন প্রস্তবের ব্যাপারে কিছু সুক্ষ বিষয় না জানেন আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না।”
এখন যে মহিলারা রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার কথা ভাবছেন তাদের জন্য বর্তমানের পরিস্থিতি সম্পর্কে শীলা হিকসান অনেক আস্থাবান।
তিনি বলেন, “সরকারে এখন যে একটা সচ্ছতা আছে, তা, কি ঘটছে তা বোঝার জন্য মহিলা বা সাধারণ লোকজনের জন্য অনেক সহজ হয়ে গেছে। এই স্বচ্ছতার জন্য আমি গর্বিত। মেরিল্যান্ড সরকার জনগনের সরকার। টেলিভিশনে আপনি দেখতে পাচ্ছেন শুনতে পাচ্ছে কি ঘটছে। এর ফলে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় সবার অংশ নেওয়া সহজ।”
ডেমোক্রাটিক পার্টির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ডেলিগেট হিকসানের মতামত জিজ্ঞেস করি।
তিনি বলেন, “আমি চাই যে আমরা আরও আগ্রাসী হই। আমি মনে করি আমরা একটু বেশী চুপচাপ। আনেক কিছু করতে হবে অনেক কিছু রক্ষা করতে হবে। আমরা ইতিমধ্যে যা অর্জন করেছি তা কেউ মুছে ফেলুক আমরা তা চাই না। লোকজনের যা প্রয়োজন তা আমাদের জানতে হবে।”
তিনি বলেন পরিবেশের ক্ষেত্রে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। পৃথীবী অনেক এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
হিকসান বলেন জনগন যাতে ভোট দেন ডেমোক্রাটিক পার্টির সে ব্যাপারে আরও তৎপর হতে হবে।
তিনি বলেন, “আরও লোকজন যাতে ভোট দেন আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছি। জনগন কেন ভোট দেন না সেটা আমি বুঝতে পারি না। লোকজন যখন বলেন ভোট না দিলে কিছু এসে যায় না তা একেবারেই ঠিক নয়। একটা ভোটের ব্যবধানে একজন নির্বাচিত হতে পারেন। লোকজনকে সচেতন করার জন্য আমাদের আরও চেষ্টা করতে হবে।”
ডেলিগেট শীলা হিকসান ঘোষণা করেছেন তিনি আর নির্বাচনে দাড়াবেন না।
একজন আইন প্রণেতা, একজন রাজনীতিক হিসেবে, তিনি কি চান --- লোকজন তাঁকে কিভাবে মনে রাখবেন?
তিনি বলেন, “আমি চাই লোকজন আমাকে স্মরণ রাখবেন যে আমি মহিলাদের উন্নতি দেখতে চেয়েছি। আমি শুধু মহিলাদের প্রার্থী ছিলাম না বা এখও তা নই। মেরিল্যান্ড রাজ্যের সবচাইতে উদারপন্থী এলাকা District 20 থেকে আমি নির্বাচনে দাড়িয়েছি। আমি আশা করছি District 20 এবং Montgomery County থেকে আমরা মেরিল্যান্ড রাজ্যের জন্য যে উদারপন্থী কার্যক্রম ও ধারণা তুলে ধরেছি সেটাই অটুট থাকবে। উদারপন্থী আইনের ক্ষেত্রে মেরিল্যান্ড হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০টি রাজ্যের মধ্যে একটি। সেটাই আমার সবচাইতে বড় গর্ব।”
মেরিল্যান্ড রাজ্যের ২০১৮ সালের আইনসভার অধিবেশনে, ৮৪ বছর বয়স্কা, উদারপন্থী ও প্রগতিশীল চেয়ারম্যান এমিরিটাস ডেলিগেট শীলা হিকসানের সাফল্য কামনা করি।