অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

এইডসের উন্নত চিকিৎসা থাকলেও নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছেনা


চল্লিশ বছর আগে যখন প্রথম এইডস চিহ্নিত হয় তখন যার শরীরে এই সংক্রমক ব্যাধি ধরা পড়তো তার কাছে মনে হতো তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। কেননা সেই সময়ে এই রোগের কোন চিকিৎসা ছিলোনা। তবে বর্তমানে এই রোগের এখন উন্নত চিকিৎসা থাকলেও পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়।জাতিসংঘের শিশু তহবিল জানিয়েছে প্রতিদিন ৩০০এর ও বেশী শিশু এইডস এবং এইডস সম্পর্কিত রোগে মারা যাচ্ছে।

প্রতি বছর ডিসেম্বরের পহেলা তারিখ বিশ্ব এইডস দিবস পালন করা হয়। জনসাধারণকে এই রোগের বিষয়ে সচেতন হবার জন্য বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সতর্ক করা হয়ে থাকে। ভয়েস অফ আমেরিকার ক্যারোল পিয়ারসন এবং এনিটা পাওয়েলের প্রতিবেদন সহ বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানাচ্ছেন সানজানা ফিরোজ।

প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে সমাজের বিভিন্ন মানুষ যারা এইডস নিয়ে কাজ করেন তারা চেষ্টা করেন জনসাধারণকে সচেতন করতে। রোগটি পরীক্ষা এবং প্রতিরোধ করার বিষয়ে নানা তথ্য দিয়ে থাকেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এই রোগ প্রতিরোধ করার সবচেয়ে সহজ উপায় হচ্ছে সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করা।

এইডস কোন সাধারণ ব্যাধি নয় বুঝতে পেরে স্বাস্থ্যমন্ত্রীরা ডিসেম্বরের পহেলা তারিখ বিশ্ব এইডস দিবস হিসেবে মনোনীত করেন। এইচ অ্যাই ভি ভাইরাসটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পরার আশংকা করেন তারা।

পল কাওয়াটা শুরু থেকেই এইডস নিয়ে কাজ করছেন, বলেন, আমি রোগের উৎপত্তি থেকেই কাজ করে আসছি। অনেক প্রিয়জনদের হারিয়েছি।

এইডসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডঃ এন্থনি ফসি শুরু থেকেই কাজ করছেন। তিনি এইচ অ্যাই ভি ভাইরাসের চিকিৎসা বিকাশে কাজ করেছেন। এই চিকিৎসা এতই কার্যকর যে একটি পিল সেবনের কারণে ভাইরাসটি অন্যদের শরীরে সংক্রমিত হয়না। রয়েছে ট্রুভাডা নামক আরেকটি ঔষধ যা সংক্রমণ প্রতিরোধ করে। ডঃ ফসির মতে খুব সহজেই এইডসকে নিঃশেষ করা সম্ভব।

পল কাওয়াটা বলেন, আমাদের বুঝতে হবে যে এইডসের কারণে অনেকে বৈষম্যের শিকার। তাদের নানা সামাজিক কলঙ্কের মাঝ দিয়ে যেতে হয়। কাওয়াটা এনএমসি নামক একটি সংস্থায় কাজ করেন। এইডসের লড়াইয়ে স্বাস্থ্য সাম্যতা এবং জাতিগত বিচারের পক্ষে কাজ করেন তিনি। পল বলেন এই রোগটি সেখানেই ছড়ায় বেশী যেখানে মানুষ বৈষম্যের শিকার। পল বলেন,এই রোগে আক্রান্ত হয় বিভিন্ন বর্ণের মানুষ, পুরুষ সমকামীরা এবং দরিদ্র মানুষেরা।

ডঃ এন্থনি ফসি বলেন, তিনি বলেন, দুটি উপায়ে এইডস নিঃশেষ করতে পারেন। একটি হচ্ছে, যারা সংক্রমিত হয়েছেন তারা যদি সময় মতো চিকিৎসা করান তাহলে অন্যান্যদের শরীরে এই ভাইরাস সংক্রমিত হবার আশংকা থাকেনা। এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে যারা ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা যদি প্রতিরোধক ঔষধ সেবন করেন।

খুব আশ্চর্যজনকভাবে এই প্রতিরোধক ঔষধের কারণে নতুন করে সংক্রমিত ব্যক্তিদের সংখ্যা কমে গেছে। ২০০৪ সাল থেকে এই পর্যন্ত এইডস রোগে মৃত্যুর হার ৫৫ শতাংশের কম। তবে এইচ অ্যাইভি সংক্রমিত ব্যক্তিরা যারা চিকিৎসা নেন তাদের হারও কম। ৬০ শতাংশের ও কম সংক্রমিত ব্যক্তিরা চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।

যুক্তরাষ্ট্রে এইচ আইভি আক্রান্ত মানুষেরা বেশিরভাগই দরিদ্র। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে যারা আক্রান্ত তারা নিম্ন এবং মধ্য আয়ের দেশে বসবাস করে। উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা হুমকির মুখে রয়েছে। রোগ পরীক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা যেকোনো বিষয়ে পরামর্শ নেবার মতো সুযোগ তেমন তারা পায় না। এবং তাই ডঃ ফসির অভিমত ঔষধ ছাড়া অন্য কোন পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন।তিনি বলেন, টিকা ছাড়া এইচআইভি নির্মূল সম্ভব নয়।ডঃ ফসি বলেন টিকা দিয়ে এই রোগ নির্মূলের আশা দেখছেন তিনি। তবে এই মুহূর্তে যেটি প্রয়োজন তা হচ্ছে প্রতিটি মানুষের রক্ত পরীক্ষা করে এই ভাইরাসের উপস্থিতি নির্ণয় করা। যাদের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যাবে তারা চিকিৎসা নেয়া শুরু করবেন এবং যারা এই রোগ সংক্রমনের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা ট্রুভাডা সেবন করবেন। এইচঅ্যাইভিকে কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক সমস্যা হিসেবে না দেখে একটি রোগ হিসেবেই দেখা দরকার।

জোহ্যানেসবার্গের জেইন মাবাসা এই অনাথশালাতে আসেন ৯ বছর বয়সে যখন তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। জেইন মারা যাবেন এমনটা ধরে নিয়ে তাকে এখানে আনা হয়েছিলো। ১৯৮৭ সাল থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে এই অনাথশালাতে প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৯টি শিশুর মৃত্যু হয়। মাবাসা মনে করেছিলেন তিনিও ঐ শিশুদের মতো মারা যাবেন।

মাবাসা বলেন, আমি খুব অসুস্থ ছিলাম। শুধু মনে হতো যে মৃত্যুই একমাত্র আমাকে স্বস্তি দিতে পারে। যখন আমার বয়স ১৪ হলো তখন এখানকার মানুষ আমাকে বোঝাল যে আমি দুর্ভাগ্যবশত আমার শরীরে এই রোগ নিয়ে জন্মেছি এবং এই সত্য মেনে নিয়েই আমার জীবন কাটাতে হবে।এবং সে তাই করেছে। আজ তার ২২ বছর বয়স। চিকিৎসা নিয়ে এখন সে সুস্থ আছে। ২০০৩ সাল থেকে এই অনাথশালাতে এইচআইভি ভাইরাসে এই পর্যন্ত একটি শিশু মারা গেছে। কিন্তু জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে শিশুদের মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক। বিশ্বে প্রতিদিন ৩২০টি শিশু মারা যাচ্ছে। অথচ গোড়াতে এই ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেলে এবং তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা করালে রোগীরা সুস্থ ও দীর্ঘ জীবন পেতে পারে।

জাতিসংঘের শিশু তহবিলের ডঃ চেও লু বলেন, বিশ্বব্যাপী চিকিৎসা ক্ষেত্রে শিশুরা পিছিয়ে পড়ছে। এবং বর্তমানে প্রায় ৫৪ শতাংশ শিশু এই চিকিৎসা গ্রহন করছে।মৃত্যুর হার শিশুদের মধ্যে এখনো অনেক বেশী। তবে এক্ষেত্রে যেহেতু আমরা প্রাপ্তবয়স্কদের চিকিৎসা দিচ্ছি সেহেতু আমাদের সেবার ধরন পরিবর্তন করা প্রয়োজন। যে প্রাপ্তবয়স্কদের আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি তাদের শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কে কি আমরা প্রশ্ন করছি?

নমপুমেলেলো মাডোনসেলা তরুণদের সঙ্গে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী একটি সংস্থাতে চাকরি করেন। এই সংস্থা মূলত এইডস এবং এইচআইভি নিয়ে কাজ করে। তিনি বলেন ২০১৯ সালেও তাদেরকে যুবসচেতনতা নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

নমপুমেলেলো মাডোনসেলা বলেন, মানুষ মনে করে রক্ত পরীক্ষা করে যদি দেখা যায় যে তার শরীরে এইচআইভি ভাইরাস রয়েছে তাহলে তারা অবশ্যই মারা যাবে। আর যদি রক্ত পরীক্ষা না করে তা হলে তারা জানবেনা শরীরে ভাইরাস আছে কি নেই, অতয়েব তারা বেঁচে থাকবেন।

২০ বছর বয়সী জোহানা মোগোটসি এই ভাইরাস শরীরে নিয়ে জন্মেছিলেন। তাকে এই কারণে অনাথশালাতে ফেলে রেখে যাওয়া হয়।জোহানা মোগোটসি বলেন, আমাকে বোঝানো হলো যে জীবনের এখানেই শেষ নয় এবং বলা হলো আমি যদি ঔষধ সেবন করি তাহলে আমি সুস্থ হয়ে উঠবো। তারা আমকে প্রতিদিন ঔষধ সেবন করতে মনে করিয়ে দিত। এখানে সবাই আমাকে তাদের নিজেদের এইচআইভি নিয়ে অভিজ্ঞতা জানায়।আমার কাছে বিষয়টি তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়নি কেননা আমই জানতাম এই রোগ ভালো হয়ে যায়। কেননা আমি দেখতে পাচ্ছিলাম অন্যরা ঔষধ সেবন করে সুস্থ আছে।

জোহানা মোগোটসি এখন ভবিষ্যতে সেবিকা হবার স্বপ্ন দেখে। তার মাঝে মধ্যে ইচ্ছে করে ছোটবেলায় ফিরে গিয়ে সেই মোগোটসির সঙ্গে কথা বলতে।জোহানা মোগোটসি বলেন, আমি ঐ ৯ বছর বয়সী মোগোটসিকে নিয়ে গর্ব বোধ করি। কারণ সে ঐ সত্যকে মেনে নিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে। আমার বিশ্বাস আমি অনেক স্বপ্ন নিয়ে জন্মেছি। এবং এইচঅ্যাইভির বিরুদ্ধে লড়াই করে আমি নিশ্চিত করেছি যে আমার স্বপ্ন আমারইরয়েছে, কেউ কেড়ে নিতে পারেনি।​

পুরো বিশ্বের এইডস নিয়ে যখন আলাপ আলোচনা চলছে তখন বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি কি, তা জানতে কথা বলি বক্ষব্যাধি হাসপাতালের ডঃ মাহামুদুল হাসানের সঙ্গে। যিনি নিজে চিকিৎসা দিয়েছেন ছয়জন আক্রান্ত ব্যক্তিকে।

এইডসের উন্নত চিকিৎসা থাকা সত্ত্বেও নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছেনা
please wait

No media source currently available

0:00 0:12:54 0:00

XS
SM
MD
LG