অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ড. মুহাম্মদ ইউনূস: শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় জামিনের মেয়াদ বাড়লো ২৩ মে পর্যন্ত


শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বাড়লো ২৩ মে পর্যন্ত
শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় ড. ইউনূসের জামিনের মেয়াদ বাড়লো ২৩ মে পর্যন্ত

শ্রম আইন লঙ্ঘনের দায়ে ছয় মাসের সাজাপ্রাপ্ত নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের জামিনের মেয়াদ বাড়িয়েছে শ্রম আপিল আদালত। এক আবেদনে পর, আদালত আগামী ২৩ মে পর্যন্ত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছে।

মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম এ আউয়াল এ আদেশ দেন। তবে, ইউনূসের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন স্থায়ী জামিন চেয়ে আবেদন করলে আদালত তা নামঞ্জুর করে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে বারবার হাজিরা এড়াতে ড. ইউনূস স্থায়ী জামিন চেয়েছিলেন। গত ২৮ জানুয়ারি শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার রায় চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন আইনজীরা। পরে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনকে জামিন দেয় শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল।

একইসঙ্গে আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করে আদালত। সেদিন শ্রম আদালতের দেয়া সাজা স্থগিত করে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনাল; জানান আইনজীবী আব্দুল্লাহ আল মামুন।

এর আগে শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গত ১ জানুয়ারি ছয় মাসের সাজা হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের। রায় প্রদানকারী বিচারক শেখ মেরিনা সুলতানার সই করার পর, ৮৪ পৃষ্ঠার এ রায় প্রকাশ করা হয়।

মামলা এবং আপিল

এ বছরের ১ জানুয়ারি ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে একটি ধারায় ছয় মাসের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দেয় ঢাকার একটি শ্রম আদালত। আরেকটি ধারায়, তাদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরো ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর এই মামলা দায়ের করেছিলো কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।

দণ্ডাদেশ ঘোষণার পর, ড. ইউনুসের আইনজীবীরা জামিন আবেদন করেন। আদালত আবেদন মঞ্জুর করলে কারাগারে যেতে হয়নি ড. ইউনূসকে।

রায়ের পর প্রতিক্রিয়ায় আদালতে সাংবাদিকদের ড. ইউনূস বলেছিলেন, “যে অপরাধ করিনি, সেই অপরাধর জন্য শাস্তি পেলাম।”

শ্রম আদালতের দেয়া ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায় চ্যালেঞ্জ করে, ২৮ জানুয়ারি (রবিবার) শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস ।

এই মামলা ছাড়াও, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাকে হয়রানিমূলক বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূসের পক্ষের আইনজীবীরা।

দুদকের মামলা

গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে, বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের করা মামলায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে দেয়া অভিযোগপত্র গ্রহণ করেছে আদালত।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ আস সামছ জগলুল হোসেনের আদালত এ অভিযোগপত্র গ্রহণ করে। সেই সঙ্গে পরবর্তী বিচার কার্যক্রমের জন্য ঢাকার বিশেষ জজ আদালত- ৪ এ মামলাটি বদলির আদেশ দেন। আগামী ২ মে মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।

মামলার অন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিরা হলেন; গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম, পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ, নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান, নূরজাহান বেগম, এস এম হুজ্জাতুল ইসলাম লতিফী।

এই মামলায় আরো যারা অভিযুক্ত, তারা হলেন; আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী, জাফরুল হাসান শরীফ, গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান, সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান, ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম ও দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসান।

মামলার শুনানিকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এর আগে, গত ৩ মার্চ এ মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন পান ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত ১ ফেব্রুয়ারি অর্থ আত্মসাত মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

উল্লেখ্য, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক-কর্মচারীদের কল্যাণ তহবিলের ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে, গত বছরের ৩০ মে দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্য

বাংলাদেশের আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। ১ ফেব্রুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

আনিসুল হক বলেন, “ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে হয়রানি করার জন্য সরকার কিছু করছে না। তার বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে না। যে মামলা হয়েছে, সেটা শ্রমিকরা করেছিলো, তারপর শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিদপ্তর তার বিরুদ্ধে একটা মামলা করেছে। আমি কেবল বলবো, দেশ আমাদের সবার। নির্বাহী, আইনসভা কিংবা বিচার বিভাগ সব বিষয়ে দেশের অর্জনই দেশের মানুষের।”

আনিসুল হক আরো বলেন, “অকাট্য প্রমাণ থাকার পরও বিদেশে ছড়ানো হচ্ছে; তার (ড. ইউনূস) বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আরো বলা হচ্ছে, আমরা তাকে হয়রানির জন্য এটা করছি।”

এ ছাড়া, সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলার বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিচার বিভাগ অত্যন্ত স্বচ্ছ। অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে বিচার চলছে।”

তিনি আরও বলেন, “তার জামিন পাওয়ার বিষয়টিই প্রমাণ করে বিচার অত্যন্ত স্বচ্ছভাবে চলছে।” হাছান মাহমুদ বলেন, ড. ইউনূসের সংগঠনের বঞ্চিত কর্মীরা তার বিরুদ্ধে মামলাগুলো দায়ের করেছে, সরকার এতে কোনো পক্ষ নয়।

XS
SM
MD
LG