অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা: ‘ঢাকা-দিল্লি সম্পর্ক লালন করে নতুন উদ্যমে এগিয়ে নিতে হবে’


ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। (ফাইল ফটো)
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। (ফাইল ফটো)

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্কের ধরন এমন যে, একে, পারস্পরিক অব্যাহত সহযোগিতার মাধ্যমে লালন করতে হবে এবং এগিয়ে যেতে হবে। তিনি আরো বলেন, “এই সম্পর্ক শুধু সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে না, দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। নতুন উদ্যমে এই সম্পর্কের গতি ধরে রাখতে হবে।”

বিশ্ব রাজনীতি ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে আলোচনা করতে প্রতিম রঞ্জন বসুর সঙ্গে একটি পডকাস্টে যোগ দেন বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। প্রতিম রঞ্জন বসু একজন মিডিয়া ভাষ্যকার, গবেষক ও পরামর্শদাতা।

২০২২-২৩ সালে ভারতের জি-২০ প্রেসিডেন্সির প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন শ্রিংলা। তিনি বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুবই ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন; যা ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় হিসেবে পরিচিত। দুই দেশ একসঙ্গে সম্পর্কের নানা উত্তেজনাকর পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে।

নতুন করে ভারতীয় ঋণের সম্ভাবনা সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, প্রতিটি দেশের ঋণ পাওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। “ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্ক সন্তোষজনক পর্যায়ে রয়েছে এবং নির্ধারিত ঋণসীমাসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অবশ্যই এগিয়ে যেতে হবে;” যোগ করেন তিনি।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা আরো বলেন যে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য নিবিড়ভাবে কাজ করা খুবই জরুরি।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর 'প্রতিবেশী প্রথম' নীতির প্রশংসা করেন তিনি। বলেন, ভারতীয় ঋণের ৫০ শতাংশ প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্য। “প্রতিবেশীদের বাদ দিয়ে আপনি উন্নতি ও বিকাশের আশা করতে পারেন না;” বলেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ চলাকালে ভ্যাকসিন আদান-প্রদান, পেঁয়াজ রপ্তানিতে সাম্প্রতিক নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি এবং বাণিজ্য সুবিধাগুলো থেকে সুফল আসছে। “নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের সঙ্গে বিদ্যুৎ সহযোগিতার বিকাশ হবে এবং শ্রীলংকায় সমুদ্রের তলদেশ দিয়ে একটি বৈদ্যুতিক ক্যাবল ব্যবস্থা দ্বীপরাষ্ট্রটিতে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা নিয়ে আসবে;” তিনি উল্লেখ করেন।

মালদ্বীপে 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারণা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শ্রিংলা বলেন, সম্পর্ক এতই মজবুত যে 'বয়কট ইন্ডিয়া' প্রচারে তাতে ব্যাঘাত ঘটার সুযোগ নেই।

পর্যটন, চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষা খাতের সম্পৃক্ততার কথা তুলে ধরে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, “আমি আপনাদের খুব নিরাপদে বলতে পারি যে, এই দুই দেশের মানুষের মধ্যে অত্যন্ত দৃঢ় সখ্য ও ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে।”

শ্রিংলা আরো বলেন, জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক প্রধানমন্ত্রী মোদীর নীতিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ; বিশেষ করে প্রতিবেশীদের ক্ষেত্রে অত্যন্ত বিস্তৃত ও দূরদর্শী নীতি।

রাজনীতিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে শ্রিংলা বলেন, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নেই। তবে প্রধানমন্ত্রী মোদীর নির্দেশনায় দেশের জন্য কাজ করতে পেরে তিনি খুশি। ভারতের ব্যাপক রূপান্তর হয়েছে এবং সাফল্য অর্জন করেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারত একটি বহুমেরু বিশ্ব চায়; যার অন্যতম মেরু হবে ভারত। মোদীর অধীনে ভারত সমস্ত প্রত্যাশা ছাড়িয়ে গেছে। দেশের ভেতর ও বাইরে উভয় দিক থেকেই প্রতিরোধের মুখোমুখি হলেও এগিয়ে যেতে প্রস্তুত ভারত।

ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য সাফল্য রয়েছে বলে উল্লেখ করেন হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। তিনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সংস্থাগুলো ভারতে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। সম্পর্ক এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এতে কোনো প্রভাব পড়বে না।”

ইন্দো-প্যাসিফিক ও কোয়াড যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এতে সহযোগিতা বাড়বে বলে উল্লেখ করেন তিনি। শ্রিংলা বলেন, এডেন উপসাগর ও সুয়েজ খাল দিয়ে সামুদ্রিক বাণিজ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

তিনি আরো বলেন, সমুদ্রে নিরাপত্তা প্রদানে ভারতের ভূমিকা পশ্চিম ভারত মহাসাগর এবং সম্ভবত পূর্ব ভারত মহাসাগরেও বাড়বে। “বৈশ্বিক নিরাপত্তায় আমাদের আরো জোরালো অংশগ্রহণ দেখাতে হবে। এখন আমরা আরো সক্রিয় হয়েছি। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যে আমরা এর অংশ;” বলেন হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা।

তিনি আরো বলেন, “এক্ষেত্রে বৃহত্তর স্থিতিশীলতা দেখা যাবে বলে আমরা আশা করি।”

XS
SM
MD
LG