অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে নিরাপরাধ মানুষ হয়রানীর অভিযোগ


বাংলাদেশ পুলিশ, নিরাপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানী করছে; মানবাধিকার লংঘন করছে এমন অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন।

বাংলাদেশ পুলিশ, নিরাপরাধ মানুষের বিরুদ্ধে বানোয়াট মামলা দিয়ে হয়রানী করছে; মানবাধিকার লংঘন করছে এমন অভিযোগ তুলেছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন। বিষয়টি নিয়ে মাজ হুসেইনের প্রতিবেদন শোনাচ্ছেন সেলিম হোসেন।

please wait

No media source currently available

0:00 0:03:54 0:00

বাংলাদেশে পুলিশ সাম্প্রতিক সময়ে সহিংসা সম্পর্কিত মামলায় হাজার হাজার লোকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ এনেছে। কিন্তু বিরোধী দল এবং অধিকার কর্মীরা বলছেন বোমা আক্রমণ এবং দাঙ্গা করার কথিত অভিযোগে অধিকাংশ মামলাই বানানো ঘটনা।

বিরোধীদলগুলো দাবি করছে যাদের লক্ষ্য করে এটা করা হচ্ছে তাদের অধিকংশই তাদের নেতাকর্মী এবং সমর্থক এবং সরকার আইন প্রয়োগকারি সংস্থাগুলোকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার জন্য ব্যবহার করেছে।

হংকং ভিত্তিক বাংলাদেশী মানবাধিকার সংগঠনের কর্মী মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান এ প্রসঙ্গে বলেন, “বাস্তবে না ঘটলেও পুলিশ হাজার হাজার অপরাধের মামলা করেছে মানুষের বিরুদ্ধে। বহু মানুষ, দুর্বল অসহায় অথবা যখনকার সহিংস ঘটনার সঙ্গে যুক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তখন তারা দেশেই ছিলো না, যারা মৃত এমন সব বিরুদ্ধে বানোয়াট মিথ্যা মামলা করেছে পুলিশ”।

বাংলাদেশে পুলিশ যে কোনো মানুষের বিরুদ্ধে কোনো প্রমান ছাড়াই মামলা করতে পারে; আদালতে না ওঠানো পর্যন্ত কোনো প্রমানের দরকার হয়না।

বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, “পুলিশ আমাদের দলের ২৫ লাখ নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। প্রায় সব মামলাই সংঘাত ও দাঙ্গা হাঙ্গামাকে ঘিরে। মূলত আমাদের নেতা কর্মীদেরকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডের বাইরে রাখার জন্যে ওইসব মামলা করা”।

দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ পুলিশের বিরুদ্ধে অপহরন গুম বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডসহ নানা নির্যাতনের অভিযোগ চলে আসছে। সরকার সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। তবে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন বলছে বাংলাদেশ পুলিশ ও অপরাপর আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে তাদের কাছে মানবকাধিকার লংঘনের প্রমান আছে।

মানবাধিকার কর্মীদের মতে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অপরাধ মামলা বেড়েছে বিপুল হারে।

গনতান্ত্রিক আন্দোলনের কর্মী পিনাকী ভট্টাচার্যের মতে, ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবার কয়েক বছর পর তার সরকার বিরোধীদলের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে; এবং তাতে ব্যবহার করা হয় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে।

তিনি ভয়েস অব আমেরিকাকে বলেন, “কয়েক বছর আগে বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা রাজপথে সমাবেশ করার সময় পুলিশ তাদেরকে লাঠিপেটা করে; তাদের ওপর গুলী ছোড়ে। বর্তমানে বিরোধিদলের নেতাকর্মীরা রাজপথে নামতে ভয় পায়। এই অবস্থায় এখন পুলিশ নতুন পদক্ষেপ হিসাবে বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে শুরু করেছে”।

তিনি বলেন, “পুলিশ মৃত ব্যক্তিদের নামে পর্যন্ত মামলা করছে। যেসব দাঙ্গা ঘটানোর নামে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে সেই সময় হয়তো সেই লোক অসুস্থ বা অন্যত্র এমনকি জেলে ছিল ছিলো। মাথ্যা ও বানোয়াট মামলা করা হচ্ছে”।

উদাহরনস্বরূপ, পুলিশ এমন এক তারিখে দাঙ্গার নামে এমন এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে যখন তিনি জীবিত ছিলেন না।

বিএনপি নেতা নুরুল ইসলাম আগস্ট মাসে মারা যান। পুলিশ তার বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরের একটি ঘটনায় মামলা করে; বললেন নুরুল ইসলামের এক আত্মীয়।

সরকার বলছে ঔসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দশ্যপ্রনোদিত নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গনমাধ্যম উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, “সব দেশেই বিরোধী দল সরকারের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ করে থাকে। এটি রাজনৈতিক বিষয়। এটা সত্যেকে কেন্দ্র করে নয়। পুলিশ রাজনৈতিক নেতাদের ধরেনি। তাদেরকে ধরা হয়েছে আইন ভঙ্গ করার অপরাধে, সংঘাতের দায়ে”।

তবে মানবাধিকার কর্মীরা তা মানতে রাজী নয়।

বাংলাদেশী রাষ্ট্র বিজ্ঞানী অধ্যাপক আলী রিয়াজ বলেন, “বাংলাদেশ পুলিশ হাজার হাজার নিরাপরাধ মানুষকে অপরাধী বানিয়েছে। অসুস্থ মানুষ, শিশুদের বিরুদ্ধে পর্যন্ত বানোয়াট মামলা দিয়েছে”।

ইলিনয় ষ্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক আলী রিয়াজ বলেন, “জেলগুলোতে ধারন ক্ষমতার চেয়ে বেশী কয়েদি। নিরাপরাধ লোকজনকে যখন এভাবে মিথ্যঅ মামলায় ধরা হয়; তখন বুঝতে হবে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের অবস্থা কতো খারাপ। গত বছরগুলোতে তাদেরকে কিভাবে ধরা হয়েছে”।

সাম্প্রতিক সাধারন নির্বাচনে বিরোধীদলীয় জোটের কিছু প্রার্থী বলেছেন নির্বাচনে পুলিশ আওয়ামী লীগের পক্ষে পরিস্কারভাবে কাজ করেছে।

বিএনপি নেতা মোশারফ হোসেন বলেন, “দলের বহু নেতা গুম হয়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে পুলিশ তাদেরকে ধরে নিয়ে গেছে। নির্বাচনের এক সপ্তাহ আগে বিরোধী রাজনীতিকদের বাড়ী বাড়ী পুলিশ ও দলীয় ক্যাডাররা অভিযান চালিয়েছে। পুলিশ উন্মুক্তভাবে বলেছে তারা তাদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না”।

ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন ঐসব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

XS
SM
MD
LG