অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প নিয়ে শঙ্কা


পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কুলিং টাওয়ারের প্রতীকী ছবি। ( ছবি- অ্যাডোবি স্টক)
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কুলিং টাওয়ারের প্রতীকী ছবি। ( ছবি- অ্যাডোবি স্টক)

ইউক্রেন হামলার পর থেকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আসছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলোর তরফে দেয়া নিষেধাজ্ঞা দেয়ায় অস্থিরতা দেখা দিয়েছে রাশিয়ার ব্যাংক ব্যবস্থায়। সর্বশেষ দেশটির বড় কয়েকটি ব্যাংকের সাথে আন্তর্জাতিক অর্থ লেনদেন ব্যবস্থা সুইফটের কার্যক্রম বন্ধ করার আলোচনা সামনে এসেছে। এ বিষয়ে মত দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউক্রেনের মিত্র দেশগুলো। এটি কার্যকর হলে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়বে রাশিয়া।

এমন অবস্থায় বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। এক লাখ কোটির বেশি টাকার এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রোসাটম। এই প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে দেশটির ১৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুটি ইউনিটের এই বিদ্যুৎ প্রকল্পের একটি ইউনিট আগামী বছরই চালু হওয়ার কথা। অন্য ইউনিটটি ২০২৪ সালে চালুর লক্ষ্য রয়েছে। প্রকল্পটি যথাসময়ে শেষ করতে রাশিয়ান কর্মীরা কাজ করছেন। সাড়ে চার হাজারের মতো রুশ নাগরিক রূপপুরে কাজ করছেন। তাদের আবাসনসহ যাবতীয় ব্যবস্থা রয়েছে পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার প্রকল্প এলাকায়।

প্রকল্প সূত্র বলছে, প্রকল্পে ঋণ হিসেবে অর্থায়ন করছে রাশিয়া। প্রকল্প বাস্তবায়নে দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিল রাশিয়া থেকেই মেটানো হয়। রাশিয়ান কর্মীদের বেতনও একইভাবে দেয়া হয়। তবে এই প্রকল্পে বাংলাদেশি কর্মীদের বেতন এখান থেকে দেয়া হয়। এছাড়া যন্ত্রপাতিও আনা হচ্ছে রাশিয়া থেকে।

সুইফট থেকে রাশিয়ার ব্যাংক ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হলে প্রকল্পের জন্য অর্থ লেনদেন জটিলতায় পড়তে পারে। এছাড়া যুদ্ধের কারণে রাশিয়া আর্থিক সঙ্কটে পড়লে পুরো প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়েও জটিলতার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া রাশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত এটমিক এনার্জি করপোরেশন-রোসাটম যদি কোনো নিষেধাজ্ঞায় পড়ে তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় প্রকল্পটি অনিশ্চয়তায় পড়ে যেতে পারে।

যদিও প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আপাতত প্রকল্পের কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগোচ্ছে। এখন পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয়নি।

প্রকল্পটির তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, "রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞায় রূপপুর প্রকল্পে এখন পর্যন্ত কোনো প্রভাব পড়েনি। সরকার আশা করছে ভবিষ্যতে খুব একটা প্রভাব পড়বে না"।

পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অবশ্য শঙ্কার কথাই প্রকাশ করেছেন। শনিবার এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, "রোসাটমের ওপর এখনও নিষেধাজ্ঞা আসেনি। রোসাটমের ওপর যদি নিষেধাজ্ঞা আসে তবে দুশ্চিন্তার বিষয় হবে। তিনি বলেন, রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার সম্পূর্ণ প্রভাব এখনও পরিষ্কার নয়। এগুলো আগামী কয়েকদিনের মধ্যে পরিষ্কার হবে"।

এই প্রকল্প ছাড়াও রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা। রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে বাংলাদেশে নিয়মিত আমদানি হচ্ছে তুলা, গম, ভুট্টা, সরিষা, মসুর ডাল। দেশে বছরে গমের চাহিদা সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টনের মধ্যে ৩৫ লাখ টন আসছে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে।

সুইফট বন্ধ হলে রাশিয়া থেকে এসব আমদানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। ইতিমধ্যেই উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে রাশিয়া ও ইউক্রেনের সঙ্গে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। মূল্যবৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় উভয় দেশের ব্যবসায়ীরা এটি করতে বাধ্য হয়েছেন। বন্ধ রাখা হয়েছে পণ্যের এলসি ও শিপমেন্ট।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে রাশিয়ায় রপ্তানি হয়েছে ৬৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারের পণ্য, যার মধ্যে তৈরি পোশাক সবচেয়ে বেশি। আমদানি হয়েছে ৪৬ কোটি ৬৭ লাখ ডলারের পণ্য। আমদানির বেশির ভাগই খাদ্য পণ্য।

বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শহিদুল্লাহ আজিম জানিয়েছেন, সুইফটের মাধ্যমে রাশিয়ার লেনদেনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হলে এলসি’র মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানির টাকা কীভাবে আসবে সেটা নিয়েই চিন্তা দেখা দিয়েছে।

বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর জানিয়েছেন, রাশিয়ার জন্য সুইফট সেবা বন্ধ হলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করতে পারবেন না। এর জন্য বিকল্প কোনো মাধ্যমও নেই। সব ব্যাংক যদি নিষেধাজ্ঞায় না পড়ে তাহলে হয়তো কিছু সুযোগ থেকে যেতে পারে।

ওদিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে আটকে পড়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের একটি জাহাজ। এম ভি বাংলার সমৃদ্ধি নামের ওই জাহাজ ইউক্রেনের অলিভিয়া বন্দরে আটকে পড়ার তথ্য জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। বাংলার অগ্রদূত নামে আরও একটি জাহাজ আটকে পড়ার তথ্য প্রকাশ হলেও সেটি কোথায় আটকে পড়েছে তা জানানো হয়নি।

XS
SM
MD
LG