আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ মনে করে বাংলাদেশে নির্যাতন, বলপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের গুরুতর অভিযোগের ব্যাপারে জাতিসংঘের উদ্বেগের বিষয়ে সরকারের অর্থপূর্ণ জবাব দেয়া উচিত। সংস্থাটি বাংলাদেশ সরকারকে অবিলম্বে জোরপূর্বক নিখোঁজ ব্যক্তিদের আত্মীয়দের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসামূলক কার্যক্রম বন্ধ করার তাগিদ দিয়েছে। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যেই র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) কে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টেবিলিটি অ্যাক্টের অধীনে গুরুতর অধিকার লঙ্ঘনের জন্য দায়ী করেছে।
সংস্থাটি জানায়, ২০২২-এর ৩ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিস নির্যাতনের অভিযোগের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সরকারকে প্রতিক্রিয়া জানাতে আহ্বান জানিয়েছিল। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ সরকার তার জবাব দেয়া থেকে বিরত রয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসের সাথে বৈঠকের সময় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে আরও উচ্চ পর্যায়ের পদে বাংলাদেশি নাগরিকদের নিয়োগ দেয়ার কথা বলেছিলেন। যার মধ্যে ছিল সেক্রেটারির বিশেষ প্রতিনিধির পদও। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া ডিরেক্টর ব্র্যাড অ্যাডামস বলেছেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘে অধিকতর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। একই সাথে নিরাপত্তা বাহিনী কর্তৃক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে জাতিসংঘের তদন্তকে উপেক্ষা করছে বাংলাদেশ। সংস্থাটির ভাষায়, র্যাবের অপব্যবহারের অভিযোগ উপেক্ষা করে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে দেশের অবস্থানকে বিপন্ন করে তুলছে। ২০১৯-এর জুলাই মাসে বাংলাদেশের রেকর্ড পর্যালোচনা করার পর জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী কমিটি উল্লেখ করেছে যে, ' পুলিশ এবং সেই সাথে অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কোনো জবাবদিহি ছাড়াই কাজ করছে'। মানবাধিকার সংস্থাটি সুপারিশ করেছে যে, বাংলাদেশ সরকারকে জাতিসংঘের শান্তি মিশনে মোতায়েনের জন্য সব সামরিক ও পুলিশ কর্মীদের জন্য একটি নিরপেক্ষ যাচাইকরণ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করতে হবে। শান্তি মিশনে নিয়োগ দেয়ার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে, কোনো ব্যক্তি বা ইউনিট নির্যাতন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নিখোঁজ বা অন্যান্য গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে জড়িত নয়।
২০২১ এর ৮ নভেম্বর ১২টি মানবাধিকার সংস্থা জাতিসংঘের শান্তি অপারেশন বিভাগের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল জিন পিয়েরে ল্যাক্রইক্সের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছিল। তাতেও কোনো কাজ হয়নি। যাচাইকরণ পদ্ধতিকে আরও সামঞ্জস্যপূর্ণ, স্বচ্ছ এবং স্বাধীন করা উচিত বলে মনে করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এ প্রসঙ্গে সংস্থাটি বলেছে, গত ৬ ডিসেম্বর জারি করা এক বিবৃতিতে এ বিষয়ে জাতিসংঘের ওয়ার্কিং গ্রুপ উদ্বেগ প্রকাশ করে। নানা অভিযোগ সত্ত্বেও বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জাতিসংঘের প্রভাবশালী পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, জাতিসংঘের একটি কার্যকরী গ্রুপের সদস্যরা বাংলাদেশে যেতে চেয়েছিলেন, কিন্তু সরকারের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এ বিষয়েও উদ্বেগ রয়েছে জাতিসংঘ বিশেষজ্ঞদের। বাংলাদেশ সরকার যদিও বারবার বলেছে, নিরাপত্তা বাহিনী এসব ঘটনায় জড়িত নয়।