অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

কপালে ‘টিপ’ পরার কারণে নারীকে হেনস্থার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে


কপালে ‘টিপ’ পরার কারণে নারীকে হেনস্থার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে (প্রতীকী ছবি)
কপালে ‘টিপ’ পরার কারণে নারীকে হেনস্থার অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধে (প্রতীকী ছবি)

বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পুলিশের এক সদস্যের বিরুদ্ধে এক নারীকে হেনস্থা ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। কলেজ শিক্ষক ওই নারী থানায় লিখিত অভিযোগে জানিয়েছেন, কপালে টিপ পরার জন্য তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করা হয়। শনিবার (২ এপ্রিল) রাজধানী ঢাকার ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটে এই ঘটনা ঘটে বলে থানায় দায়ের করা অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। শনিবার এ ঘটনায় ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি।

এভাবে রাস্তায় হয়রানির শিকার হওয়ার কথা জানিয়েছেন রাজধানী ঢাকার বেসরকারি তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দার। রবিবার (৩ এপ্রিল) সকালে ভয়েস অফ আমেরিকা যোগাযোগ করে ভুক্তভোগী ওই কলেজ শিক্ষকের সঙ্গে।

ঘটনার ভয়াবহতা এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি উল্লেখ করে একটি অডিও বার্তায় ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, “আমি হেঁটে কলেজের দিকে যাচ্ছিলাম, হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, দাড়িওয়ালা একজন “টিপ পরছোস কেন” বলেই বাজে গালি দিলেন। তাকিয়ে দেখলাম তার গায়ে পুলিশের পোশাক। একটি মোটরবাইকের ওপর তিনি বসে আছেন। প্রথম থেকে শুরু করে তিনি যে গালি দিয়েছেন, তা মুখে আনাও লজ্জার। আমি প্রতিবাদ করে ঘুরে ওই ব্যক্তির মোটরবাইকের সামনে গিয়ে দাঁড়াই। তখনো তিনি গালি দিচ্ছেন। তার চোখে মুখে ক্রোধ এবং লালসা ছিল। তিনি লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। একটা পর্যায়ে তিনি মোটরসাইকেল আমার শরীরের ওপর চালিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। আমি সড়ে দাঁড়াই। কিন্তু আমার পায়ের পাতার ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান। এতে আমার পা আঘাতপ্রাপ্ত হয়।”

ওই দিনের ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে লতা সমাদ্দার বলেন, "রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে এর আগেও বিভিন্ন সময় বাজে কথা শুনতে হয়েছে। কিন্তু পুলিশের পোশাক গায়ে এক ব্যক্তি যখন এ ধরনের আচরণ করেন, তা সহ্য করা অনেক কঠিন। শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকার বাসা থেকে বের হয়ে প্রতিদিনের মতো সকাল প্রায় ৮টা ২০ মিনিট থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে ফার্মগেট মোড় পার হয়ে তেজগাঁও কলেজের দিকে যাওয়ার সময় এই ঘটনা ঘটে। ওভারব্রিজের কাছে সেজান পয়েন্টের সামনে বন্ধ করে রাখা মোটরবাইকের ওপর বসেছিলেন পুলিশের পোশাক পরা ওই লোক। তার বাজে কথায় আমি পেছন ফিরে প্রতিবাদ করায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে গালিগালাজ করেন। ওই সময়ে ওই ব্যক্তির নাম বা পদবি খেয়াল করার কথা আমার মাথায় ছিল না। কথা বলার একপর্যায়ে বলতে গেলে আমার গায়ের ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে দিচ্ছিলেন। আমার পায়ে আঘাত লাগে। বাইকের নম্বর যতটুকু মনে আছে আমার অভিযোগপত্রের সাথে তা পুলিশকে দিয়েছি।"

ঘটনার সময়ে ব্যস্ত সড়কের আশপাশে অনেক লোক থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি উল্লেখ করে লতা সমাদ্দার বলেন, "হয়তো ভেবেছেন পুলিশের পোশাক পরা লোক, তাই ঝামেলায় জড়িয়ে লাভ নেই। ঘটনার পর রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশে কর্তব্যরত তিনজন ট্রাফিক পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনা জানাই। পরে তারা থানায় অভিযোগ করতে পরামর্শ দেন। এরপর আমি কলেজে গিয়ে আমার ভাইস প্রিন্সিপালকে জানাই। তিনি ও আমার অন্য সহকর্মীরা সহায়তা করেছেন। পরে আমার স্বামী এসেছেন।"

ভয়েস অফ আমেরিকার কথা হয় লতা সমাদ্দারের স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের প্রাচ্যকলা বিভাগের অধ্যাপক মলয় বালার সঙ্গে। হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "আমি চাই ওই ব্যক্তির শাস্তি হোক। তবে সার্বিকভাবে দেখে মনে হচ্ছে ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা যাবে না। এইভাবে দিনেদূপুরে প্রকাশ্যে একজন লোক অন্যায় করে পরিচয় আড়াল করতে পারলে কীসের 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' হলো? ওই সময়ের আশেপাশের সিসিটিভি ক্যামেরা চেক করলেই তো তার পরিচিয় চিহ্নিত করার কথা। এখন থানা-পুলিশ বলছে তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। থানা থেকে বলা হচ্ছে যে মোটরবাইক ছিল তা চুরি যাওয়া মোটরবাইক। তার নাম্বার ধরে এখন কে ব্যবহার করছেন তা বের করা যাচ্ছে না। এই যদি হয় অবস্থা তাহলে তো এই দেশে থাকতে পারবো না। টিপ পরায় যেভাবে অপমান করা হলো, তা তো সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী চরিত্র।"

ভুক্তভোগী লতা জানান, "আমি কপালে টিপ পরব কি না, তা বলার তিনি কে? আমার মনে হয়েছে ঘটনাটার প্রতিবাদ হওয়া দরকার। এ ধরনের মৌলবাদী, সাম্প্রদায়িক মানুষের হাত থেকে নারীরা নিরাপদে থাকুক এটাই আমি চাই। আমি হিন্দু, টিপ পরা তো স্বাভাবিক ব্যাপার। শুধু আমি কেন যে কেউ চাইলে টিপ পরতে পারেন।"

পুলিশের পোশাক পরিহিত অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা গেল কিনা তা জানতে চাওয়া হয় শেরেবাংলা নগর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়ার কাছে। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, "পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি খারাপ ব্যবহার করেছেন জানিয়ে অভিযোগ করেছেন ওই নারী কলেজ শিক্ষক। তিনি ওই ব্যক্তির নাম বা পদবি কিছুই বলতে পারেননি। মোটরবাইকের যে নম্বর দিয়েছেন, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বাইকটি আসলেই পুলিশের না অন্য কোনো ব্যক্তির।"

পুলিশের এই কর্মকর্তা ভয়েস অফ আমেরিকাকে আরও বলেন, ওই জায়গার সিসি ক্যামেরা নষ্ট। তারপরেও কাছাকাছি যে সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায় তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী অচিরেই অভিযুক্তকে চিহ্নিত করা যাবে।

XS
SM
MD
LG