অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রমজানে বেড়েছে ছোলা, বেগুন ও খেজুরের দাম


জনপ্রিয় ইফতার আইটেম
জনপ্রিয় ইফতার আইটেম

রমজান মাস এলেই নির্দিষ্ট কিছু খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ে। বাংলাদেশে এটা অনেকটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি।বেড়েছে ছোলা, চিনি, বেগুন, শসা, ধনেপাতা, পেঁয়াজ, মাংস ও চিনিসহ আরো কিছু পণ্যের দাম। এর সবই ইফতারি তৈরির উপাদান। রাজধানী ঢাকার মিরপুর, কচুক্ষেত ও হাতিরপুল কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা গেছে এসব পন্যের দাম এক সপ্তাহের ব্যবধানে অন্তত ২০ শতাংশ বেড়েছে। ব্যবসায়ী এবং ক্রেতারা বলছেন রমজানের সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই দাম বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া চলছিলো।

চৈত্রের গরমে, রোজা রাখার পরে যারা ইফতারে একটু লেবুর শরবত পান করতে চান, তাদের গুনতে হবে বাড়তি টাকা। রোজার আগে যে লেবুর দাম ছিল ৩০ থেকে ৪০ টাকা হালি, এখন তা বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে দাম বেড়েছে মাংসের। মুরগির মাংস ব্রয়লার এবং দেশি দুটোতেই বেড়েছে কেজিতে ১৫ থেকে ২০ টাকা। গরুর মাংস এবং খাসির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা।

রমজানের শুরুতে, বেগুন ও ছোলার দাম বাড়ে সবার আগে। মিরপুরের রূপনগর কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায় বেগুনের দাম গত এক সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে অন্তত ৩০ টাকা। সাতদিন আগেও এক কেজি ভালো মানের বেগুন পাওয়া যেত ৬০-৭০ টাকায়। সেই বেগুন এখন কিনতে হলে গুণতে হবে ১০০ থেকে ১১০টাকা। সবজি বিক্রেতা মো. নীলু মিয়া (৫৫) বলেন “বেগুনের দাম বহু বাড়ছে। এখন কেনাই পড়ে ডাবল দামে। দাম না বাড়ায়া উপায় নাই। আর লোকজনের বেগুনি খাইতে হলে বেগুন কেনা লাগবে।”

মুখরোচক ইফতার আয়োজনের অন্যতম অনুসঙ্গ হচ্ছে বেগুনি। তাই রোজা এলে বেগুনের কদর প্রতিবছরই বাড়ে। রূপনগর বাজারেই কথা হয় তানিয়া আক্তার (৩৮) নামে এক গৃহিণীর সাথে। তার কথায় দোকানির কথার প্রতিধ্বনি।তিনি বললেন, “রমজানে ইফতারে সবাই বেগুনি ছোলা চান। তাই দাম বেশি হলেও আমাদের তা কিনতে হয়। এক সপ্তাহ আগে যা কিনেছি ৫০-৬০ টাকায়। এখন সেই পন্যের পেছনে খরচ হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকা।”

রাজধানীর মিরপুরের ১১ নাম্বার কাঁচাবাজার। পাইকারী ও খুচরা বাজারের বড় মোকাম। এই বাজারে এক কেজি শসা বিক্রি হয়েছে মানভেদে ৫০ থেকে ৭০ টাকায়। রমজানের শুরু হতেই একই মানের শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা কেজি দরে। আগে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া ধনেপাতা এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা। এখানে কথা হয় পেঁয়াজ বিক্রেতা কালু মিয়ার (৬০) সাথে। গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হয়েছে দেশি পেঁয়াজ। এখন এক কেজি দেশি ভালো মানের পেঁয়াজ কিনতে খরচ হবে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা।

মিরপুর ১১ নাম্বার বাজারে কথা হয় চম্পা বেগমের (৫৮) সাথে। এই স্কুল শিক্ষক জানালেন, ইফতারি তৈরিতে পেঁয়াজের ব্যবহার বেশি । দাম বাড়লেও না কিনে উপায় নেই। তিনি আরো জানালেন, “বাজারে দুই রকমের ছোলা আছে। দেশি ছোলা হিসেবে যা বিক্রি হয় তার দাম ১০০-১১০ টাকা। আমি কিনেছি ১০০টাকায়। আর আছে খোলা ছোলা, বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকা কেজি দরে।”

এক দোকানের সাজানো রয়েছে খেজুর ও ছোলা । বিহারী দোকানি আহমেদ আলী (৪৫) জানালেন, ভালো মানের ছোলা ও খেজুর তিনি বিক্রি করেন। তার পন্যের দামও একটু বেশি। মরিয়ম খেজুর সৌদী আরবের ও ইরানী, দুই দেশেরটাই পাওয়া যায় তার দোকানে। দাম ৯৮০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা। আর ছোলার দাম ১০০ থেকে ১১০ টাকা।

রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কচুক্ষেত বাজারে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা ফিরোজ আলম। তিনি বললেন, এক সপ্তাহ আগে এক কেজি শসা কিনেছিলেন ৭০ টাকায়। এখন দামই চাচ্ছে ১১০ টাকা। এছাড়া দেশি মুরগির দামও বেড়েছে। গরুর মাংস ভালো মানেরটা ৬৫০ টাকার কমে পাওয়া যায় না। এই বাজারে সোনালিকা জাতের মুরগি প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক সপ্তাহ দাম ছিলো ২৮০ টাকা। এই বাজারের মাংস বিক্রেতা জয়নাল (৩৫) বলেন, জবাইযোগ্য গরুর দাম বেড়েছে আকার ভেদে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে। তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই ব্যবসায়ীদের।

পরের গন্তব্য রাজধানীর হাতিরপুল বাজার। হবাজারে প্রবেশ মুখেই ফলের দোকান। এখানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন রকমের কলা। আছে তরমুজ, বেল, সফেদা, আনারসের মতো দেশি ফল। সবরি, সাগর, কিংবা চাঁপা, সব কলার দাম বেড়েছে হালিতে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা ।

বিক্রেতা কাদের মিয়া বললেন, রোজায় কলার চাহিদা বেশি থাকে। ইফতারিতে অনেকের পছন্দ থাকে কলা। এলিফ্যান্ট রোডের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী রাসেল এসেছেন ইফতারির জন্য ফল কিনতে। তরমুজ ও কলা কিনবেন বলে জানালেন। সবরি কলার ডজন কিনলেন ১২০ টাকায়। জানালেন, মাত্র এক সপ্তাহ আগেও এই কলার দাম ছিল ১০০ টাকা। দোকানি আবু তৈয়ব জানালেন, প্রথম দিকে দাম একটু বাড়তির দিকে থাকলেও আগামী সপ্তাহ নাগাদ কলার দাম কমবে।

এই বাজারেই কথা হয় মুদি দোকানির সাথে। জানা গেল মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে। এক কেজি ভালো মানের মসুর ডালের দাম ১৬০ টাকা। এছাড়া বেড়েছে চিড়ার দাম। এক কেজি ভালো চিড়ার দাম ১২০ টাকা।

হাতিরপুল বাজারেই কথা হয় রিকশা চালক ইসহাক সরদারের (৬২) সাথে। তিনি বললেন, “এই গরমের দিনে রোজা রাইখা রিশকা চালানো বড় কষ্টের। আইজকা পয়লা রোজা রাখতে পারলাম। বাকিটা আল্লা ভরসা। সারাদিন রোজা রাইখা ইফতারিতে যে ভালো কিছু খামু তারও জোগাড় নাই। জিনিসপত্রের দাম বাড়ছেঅনেক।”

XS
SM
MD
LG