অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী অংশীদারত্ব চায় জার্মানি


জার্মানির স্টেট সেক্রেটারি এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশনের বিশেষ দূত জেনিফার মরগান সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন।
জার্মানির স্টেট সেক্রেটারি এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশনের বিশেষ দূত জেনিফার মরগান সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন।

জার্মানির স্টেট সেক্রেটারি এবং ইন্টারন্যাশনাল ক্লাইমেট অ্যাকশনের বিশেষ দূত জেনিফার মরগান বলেছেন, তারা বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশের সঙ্গে আরও শক্তিশালী অংশীদারত্ব তৈরি করতে আগ্রহী।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমি এখানে শুনতে ও শিখতে এসেছি এবং আমরা এক সঙ্গে মিলে কী করতে পারি তা দেখতেও এসেছি। আমি মনে করি আমাদের একে অপরের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে”।

তিনি আরও বলেন, “এটা স্পষ্ট যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি সক্ষমতা থেকে একাধিক সুবিধা পাওয়া যায়”।

শনিবার (৯ এপ্রিল) বাংলাদেশে জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম ট্র্যোস্টারের সঙ্গে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জার্মানির জলবায়ুবিষয়ক বিশেষ দূত জেনিফার মরগান এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, দ্রুত সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে এবং স্পষ্ট এর (জলবায়ু পরিবর্তনের) প্রভাব দেখা যাচ্ছে।

মরগান বলেন, “আমরা বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে জ্বালানি দক্ষতার বিষয়ে কাজ করতে চাই এবং কীভাবে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও জ্বালানি দক্ষতার প্রচেষ্টা বাড়াতে পারি তা দেখতে চাই”।

৪ এপ্রিল প্রকাশিত জাতিসংঘের আন্তসরকারি প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি) প্রতিবেদনে দেখায় যে, গত এক দশকে বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের বৃদ্ধি কমেছে। তবে ২০৩০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক নির্গমন অর্ধেক করা, লক্ষ্যমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখাসহ আরও অনেক কিছু করা প্রয়োজন।

আইপিসিসির স্বাধীন প্রতিবেদনে প্যারিস চুক্তির মূল লক্ষ্য অর্জনের জন্য এই শতাব্দীতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে প্রাক-শিল্পবিপ্লব সময়ের মতো ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখা, জ্বালানি, শিল্প, পরিবহন ও অবকাঠামোকে আরও বেশি জ্বালানি দক্ষ করে তোলার জন্য জরুরি পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধিকে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সীমাবদ্ধ করার প্রচেষ্টা চালানোর কথাও বলা হয়েছে।

মরগান জানান, তিনি বাংলাদেশে নাগরিক সমাজ এবং এনজিওগুলোর কাজ ও তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বৈচিত্র্যের মাধ্যমে “অবিশ্বাস্যভাবে প্রভাবিত” হয়েছেন। বিশেষ করে যারা স্থানীয় পর্যায়ে নারীদের সঙ্গে কাজ করছেন।

তিনি বলেন, “আমি মনে করি তারা স্পষ্টই প্রতিদিন মানুষকে সাহায্য করার জন্য কাজ করছে”। একটি প্রাণবন্ত সুশীল সমাজ টেকসই উন্নয়নের জন্য “একান্ত অপরিহার্য”।

মরগান বলেন, আমি মনে করি আমরা অনেক প্রকল্পে তাদের সঙ্গে আমাদের অংশীদারত্ব থেকে অনেক উপকৃত হয়েছি এবং আমি আরও ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে আছি।

মরগান তার নিয়োগের পর প্রথম বিদেশ সফরের গন্তব্যস্থল হিসেবে বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছেন।

৬-৯ এপ্রিল তার সফরের সময় তিনি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং দেশের কিছু জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি এবং বিশুদ্ধ পানির জন্য মানুষের সংগ্রাম দেখেছেন।

মরগান বলেন, “আমি আলোচনা করেছি কীভাবে আমরা এক সঙ্গে এই পরিবর্তন বাড়াতে পারি। আমরা বিভিন্ন যন্ত্রের মাধ্যমে জলবায়ু বিজ্ঞানকে কার্যকর করতে সরকারকে সহায়তা করতে এবং জলবায়ু বিজ্ঞানকে কীভাবে পরিকল্পনা প্রক্রিয়ায় আনা যায় সে বিষয়ে একাধিক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কাজ করার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি”।

সুন্দরবন সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে জলবায়ু দূত মরগান বলেন, বাংলাদেশ বন বিভাগ সুন্দরবনের শুধু মনিটরিং কাজই করছে না, বেআইনি কর্মকাণ্ড থেকে রক্ষায়ও খুব ভালো কাজ করছে।

মরগান বলেন, জলবায়ু সংকটের প্রভাব মোকাবিলা করার বিষয়ে আমরা বাংলাদেশের কাছ থেকে শিখতে পারি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও জার্মানি কীভাবে দ্বিপক্ষীয়ভাবে এবং ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের (সিভিএফ) সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করতে পারে তা তারা দেখছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ সিভিএফের চেয়ার হিসেবে কয়েক দশক ধরে জলবায়ু ন্যায়বিচারে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।

তিনি জানান, জার্মান সরকার জলবায়ু সংকটকে শীর্ষ অগ্রাধিকার হিসেবে মোকাবিলা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটি স্পষ্ট যে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরতা একটি বিপদ। শান্তি, জ্বালানি সুরক্ষা এবং এই গ্রহের নিরাপত্তার স্বার্থে তারা এ বিষয়টিকে আর উপেক্ষা করতে পারেন না।

এক প্রশ্নের জবাবে মরগান বলেন, তাদের প্রধান অগ্রাধিকার হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে শান্তির জন্য কাজ করা এবং তারা কীভাবে জ্বালানির স্বাধীনতা, জলবায়ু নিরাপত্তা, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং শান্তি একত্র করা যায় তা দেখেন।

জলবায়ু অভিবাসন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি অত্যন্ত জটিল সমস্যা এবং বাংলাদেশে গ্রাম থেকে শহরের বস্তিতে জলবায়ু অভিবাসন ঘটছে।

মরগান জনগণকে সমর্থন করার জন্য এক সঙ্গে কাজ করার এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছেন।

এর আগে একটি পৃথক অনুষ্ঠানে মরগান বলেন, জার্মানি বাংলাদেশ ও অন্য অনেক দেশের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের গুরুতর পরিণতি ও অভিযোজন প্রয়োজনের মুখোমুখি রয়েছে।

XS
SM
MD
LG