অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

নারীর অন্তর্বাস: এখনও বিব্রত হন বাংলাদেশের ক্রেতা-বিক্রেতারা


অন্তর্বাস
অন্তর্বাস

রোজকার পরিধেয় পোশাকের মধ্যে অন্তর্বাস খুব প্রয়োজনীয় একটি অংশ। বাহ্যিক পোশাকের ভেতরে এই পোশাকটি পরা হয় দেহকে সুরক্ষা প্রদানের জন্য। অনেকসময় এটি ফ্যাশনের অনুসঙ্গও বটে। কিন্তু বাংলাদেশের বেশিরভাগ নারীদের ক্ষেত্রে এই প্রয়োজনীয় পরিচ্ছদটি কিনতে হয় খানিকটা আড়ালে আবডালে। যদিও ঢাকা শহরের চিত্র এখন অনেকটাই পাল্টেছে, তবে এই বদল শুধুমাত্র বড় শহরকেন্দ্রিক। জেলা শহর ও গ্রামাঞ্চলের চিত্র এখনও আশির দশকেই আটকে আছে। সেসব জায়গায় অন্তর্বাস গোপন জিনিস এবং তা গোপনেই ক্রয়-বিক্রয় হয়। অথচ বাংলাদেশে এখন বৈশ্বিক মানের অন্তর্বাস তৈরির কারখানা আছে। উচ্চ মুনাফার কারণে অন্তর্বাস তৈরিতে আগ্রহী হচ্ছেন উদ্যোক্তারা। এ খাতে ২০২১ সালে বাংলাদেশের রপ্তানী আয় ৫১৮ মিলিয়ন ডলার, ২০২০ সালে যা ছিলো ৩৫০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশে অনেক গার্মেন্টস কারখানায় দেশ ও বিদেশের জন্য বিভিন্ন মানের অন্তর্বাস তৈরি হওয়ায় হাজার হাজার নরনারী এ ধরনের কাজের সঙ্গে এখন যুক্ত। কিন্তু কয়েক বছর আগেও যারা অন্তর্বাস প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন তারা বলতে চাইতেন না তাদের প্রতিষ্ঠান কী পন্য তৈরি করে। এমনকি নারী ও পুরুষ সহকর্মী পাশাপাশি বসে অন্তর্বাস সেলাই করতে লজ্জা পেতেন। আড়াল আছে বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেও। চাহিদার কারণে অন্যান্য পোশাকের সাথে সাথে অন্তর্বাসের একটি বড় বাজার ‍গড়ে উঠেছে। ফলে শুধুমাত্র অন্তর্বাস বিক্রয় করে এমন একটি বিক্রেতা শ্রেণীও গড়ে উঠেছে। কিন্তু অনেক বিক্রেতাই সামাজিকভাবে হেয় হওয়ার ভয়ে পরিবার, আত্মীয়স্বজনের কাছে ব্যবসার ব্যাপারটা এড়িয়ে যান। নির্দিষ্ট করে বলেন না কী ধরণের পোশাকের ব্যবসা করেন।

আশি-নব্বইয়ের দশকে ঢাকায় নারীদের অন্তর্বাস কেনার জন্য হাতে গোনা মাত্র কয়েকটি দোকান ছিলো। নির্ভরযোগ্য দোকানগুলোর মধ্যে ছিলো ঢাকার হকার্স মার্কেট, গাউছিয়া ও নিউ মার্কেটে। এছাড়া কিছু হকার যারা লেইসফিতা, ব্লাউজ পেটিকোর্ট ফেরি করতেন, তাদের কাছে অন্তর্বাস থাকতো। এ ধরণের বিক্রেতাদের মধ্যে অনেক নারীরাও ছিলেন যারা বাসায় বাসায় গিয়ে অন্তর্বাস বিক্রি করতেন। এখন ঢাকায় অভিজাত বিপনিবিতান থেকে শুরু করে ফুটপাতেও অন্তর্বাসের দোকান রয়েছে। গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি বড় দোকান, যারা বিদেশী ও ব্র্যান্ডের পন্য বিক্রি করেন। ঢাকার ভেতরে ও ঢাকার বাইরে দু’একটি বিভাগীয় শহরে এসব দোকানের শাখা রয়েছে। যেমন: সুইট ড্রিমস, ভ্যালান্সিয়াস সিক্রেট। এইসব দোকান নারীদের দ্বারাই পরিচালিত। এখানে কাজও করে নারী কর্মীরাই। তবে এসব দোকানের পন্য কিছুটা উচ্চবিত্তের মানুষের জন্য। এখন অন্তর্বাসের অনেক অনলাইন শপ রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু নারী উদ্যোক্তা অনলাইনে অন্তর্বাস বিক্রি করেন।

ভয়েস অফ আমেরিকার পক্ষ থেকে আমরা ঢাকার বিভিন্ন শপিংমল, মার্কেট, ফুটপাতে অন্তর্বাসের দোকানে ঘুরি এবং অনলাইন বিক্রেতা, ঢাকার বাইরে ক্রেতাদের সাথে কথা বলি। ‍

ঢাকার বাজার

ঢাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, এখানে বড় বড় শপিংমলগুলোতে নারী বিক্রেতাই বেশি। ঢাকা নিউ মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, টোকিও স্কয়ারসহ বেশকিছু বড় বড় মার্কেটেই দেখা গেলো অন্তর্বাসের দোকানগুলোতে নারী কর্মীরা কাজ করছেন। এছাড়া ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরে, নিউমার্কেট, কৃষিমার্কেট এলাকার ফুটপাতে অন্তর্বাসের দোকানগুলোতে পুরুষ বিক্রেতাদের দেখা গেলো।

অন্তর্বাস কিনছেন এক দম্পতি
অন্তর্বাস কিনছেন এক দম্পতি

ঢাকা নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাতে কথা হয় মোঃ শাহাবুদ্দিনের সঙ্গে। বয়স ৩৮ বছর। নিউমার্কেটের সামনের ফুটপাতে অন্তর্বাস বিক্রির ব্যবসা করেন। ক্রেতাদের মধ্যে কোন শ্রেণীর মানুষ বেশি আসে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সব শ্রেনীর মানুষই এখানে কেনাকাটা করতে আসেন। এমনকি অনেকে ব্যক্তিগত গাড়ি থামিয়ে এখান থেকে কেনাকাটা করে যান। শাহাবুদ্দিনের দাবি, এখান থেকে যে ব্রা ২৫০ টাকায় কেনা যায়, সেটাই বড় কোনো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত দোকান থেকে অনেক বেশি দামে কিনতে হবে। সেজন্য অনেকেই গাড়ি থামিয়ে কিনে নিয়ে যান। নারী ক্রেতাই বেশি বলে জানান শাহাবুদ্দিন। তবে অনেক পুরুষ তাদের স্ত্রীর জন্য কেনাকাটা করেন বলেও জানান। নিউমার্কেটের ফুটপাতে ২০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা মূল্যের অন্তর্বাস বেচাবিক্রি হয়। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস। দেশি, চাইনিজ, ইন্ডিয়ান অন্তর্বাসের পসরা এখানে বেশি। ক্রেতাদের সাথে কখনো বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে কিনা জানতে চাই শাহাবুদ্দিন মিয়ার কাছে। তিনি বলেন, প্রথম প্রথম নিজের কাছে বিব্রত লাগলেও এখন ব্যাপারটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে তার কাছে। অন্যান্য পণ্যের মতো এটাও একটা পণ্য এমনই ভাবেন তিনি। তবে সামাজিকভাবে তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করেন। কীসের ব্যবসা করেন কেউ জানতে চাইলে এখনো সরাসরি উত্তর দিতে পারেন না বলে জানান।

ঢাকা নিউমার্কেটের দোতলায় অন্তর্বাস বিক্রি করে এমন একটি দোকানে কাজ করেন মরিয়ম। এখানে পরপর কয়েকটি দোকান আছে । সবগুলোতেই নারী বিক্রয়কর্মী দেখা গেলো। মরিয়ম জানালেন, এখানে সব বয়সী এবং সব শ্রেণীর নারীরা আসেন তাদের চাহিদা অনুযায়ী অন্তর্বাস কিনতে। টিনএজার মেয়েদের সাথে সাধারণত মা বা বয়সে বড় কোনো মহিলা থাকেন। পুরুষ ক্রেতারাও আসেন। খুব বেশি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয় না। তবে মাঝেমাঝে কিছু পুরুষ ক্রেতার আচরণ অসংযত থাকে। হয়তো একটাও কেনেন না, কিন্তু নানান পন্য ঘাটাঘাটি করে সময় নষ্ট করেন। পন্যের মাপ নিয়েও বিব্রত হওয়ার মতো কথাবার্তা বলেন।

বসুন্ধরা সিটির নিচতলায় লাইক মি নামের অন্তর্বাসের দোকানে কাজ করেন মিতু। দোকানে ঢুকতেই দেখা যায় একজন বয়স্ক ভদ্রলোক স্ত্রীকে সাথে নিয়ে কেনাকাটা করছেন। মিতু জানান, এরকম অনেকেই তাদের স্বামীকে নিয়ে আসেন। কেনাকাটার পর্ব তাদের স্বামীরাই সম্পন্ন করেন। তবে সামগ্রিকভাবে নানান বয়সের নারী ক্রেতারাই বেশি আসেন। অন্তর্বাস বিক্রি করতে গিয়ে তেমন কোনো হয়রানির মুখোমুখি হতে হয়নি বলে জানান মিতু। এ দোকানে অন্তর্বাসের সর্বনিম্ন মূল্য ৩০০ টাকা থেকে শুরু; সর্বোচ্চ মূল্য ২৫০০ টাকা। নানান ডিজাইনের অন্তর্বাসের বাহারি কালেকশন থাকলেও সুতি কাপড়ের অন্তর্বাস সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে জানান তিনি।

এছাড়া বসুন্ধরা সিটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে মোস্তফা মার্টে বিদেশী নানান নামীদামী ব্র্যান্ডের অন্তর্বাসের কালেকশন রয়েছে। ব্রা-এর মাপ ঠিকঠাক বোঝার জন্য ক্রেতাদের সুবিধায় রয়েছে ট্রায়াল রুমও। এখানে অন্তর্বাসের দাম শুরু ২৫০ টাকা থেকে রয়েছে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত।

শ্যামলীর টোকিও স্কয়ারে ইয়ানূর এন্টারপ্রাইজ নামের একটি অন্তর্বাসের দোকানে কাজ করেন শারমিন। আজ পর্যন্ত অন্তর্বাস বিক্রি করতে গিয়ে তেমন কোনো বিব্রতকর অবস্থার মুখে পড়তে হয়নি বলে জানান তিনি। বিক্রি করতে গিয়ে নিজের মধ্যে কোনো জড়তা কাজ করে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, “অন্যান্য কাপড়ের মতো এটাও প্রয়োজনীয় একটা কাপড়। আমি নিজে মেয়ে হওয়ায় নারী ক্রেতারা আমার এখানে কেনাকাটা করতে স্বস্তি বোধ করে।” এখানে অন্তর্বাসের মূল্য ২০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। রয়েছে দেশী, চীনা, থাই ও ইন্ডিয়ান অন্তর্বাস। এই দোকানেও সুতির অন্তর্বাস সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বলে জানান শারমিন।

মিরপুরে একটি গার্মেন্টসে কাজ করেন রেশমা আক্তার। সাধারণত মিরপুর এগারোর ফুটপাত থেকে তিনি ও তার সহকর্মীরা কেনাকাটা করে থাকেন। অন্তর্বাসের সাইজ আন্দাজ করে বলে দিলে দোকানদার প্যাকেটে মুড়িয়ে পণ্য দিয়ে দেন তাদের। একা কেনাকাটা করতে সংকোচ বোধ করেন দেখে গার্মেন্টসেরই কয়েকজন মেয়ে মিলেই সাধারণত তারা কেনাকাটা করেন।

বিভাগীয় শহরগুলোতে অন্তর্বাসের বাজার

চট্টগ্রামের হালিশহরে থাকেন সাবিহা সুলতানা। জানালেন, অন্তর্বাসের প্রয়োজনে যান বড় স্টোর কিংবা বড় শপিংমলে । চট্টগ্রাম নিউমার্কেট, মিমি সুপার মার্কেট, লাকি প্লাজা, সানমার ওশান সিটি ইত্যাদি বড় শপিংমলগুলোতে অন্তর্বাস বিক্রির দোকান রয়েছে। এছাড়া ফুটপাতে ভ্যানে করেও বিভিন্ন এলাকায় অন্তর্বাস বিক্রি হয়। বললেন, “এখানে শপিংমলগুলোতে পুরুষ বিক্রেতাই বেশি। তবে কিনতে গিয়ে কখনও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি। চট্টগ্রামে ‘ভ্যালান্সিয়াস সিক্রেট’ নামের একটি অন্তর্বাসের স্টোর আছে, সেটাতে নারী কর্মীরা রয়েছে। কেনাকাটার জন্য সাধারণত সেখানেই যাই।” চট্টগ্রামের মার্কেটে ঢাকার চাইতে পন্যের মূল্য কিছুটা বেশি বলে জানালেন।

খুলনা শহরে থাকেন আইরিন সুলতানা। জানালেন, এখানে অন্তর্বাসের দোকান খুব কম। হাতে গোনা কয়েকটি মার্কেট যেমন, জলিল টাওয়ার, রেলওয়ে মার্কেট, নিউ মার্কেট, আক্তার চেম্বার, খুলনা শপিং কমপ্লেক্সে অন্তর্বাসের দোকান রয়েছে। এছাড়া এখানে ফুটপাতে এ ধরণের কাপড়ের কোনো দোকান নেই। কিছু নারী বিক্রেতা আছেন, যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অন্তর্বাস বিক্রি করেন। এদের কাছে যে পন্যগুলো থাকে সেগুলো খুবই 'সাধারণ' মানের হয়ে থাকে। ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা মূল্যের পন্য নারী ফেরিওয়ালাদের কাছে পাওয়া যায়। সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষেরা এদের কাছ থেকে অন্তর্বাস কিনে থাকে।

আইরিন সুলতানা বললেন, “খুলনায় কোনো দোকানে নারী বিক্রয়কর্মী নাই। এটা অনেকসময় আমাদের জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়ায়। বয়োজেষ্ঠ্য বিক্রয়কর্মী যে দোকানে থাকেন সাধারণত সেসব দোকানেই অন্তর্বাস কিনতে যাই। কারণ তারা স্বতঃস্ফুর্তভাবেই আমাদেরকে পন্য দেখান এবং কিনতে সাহায্য করেন। একটু কম বয়সের বিক্রয়কর্মী থাকলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। হয়তো গিয়ে বললাম, ব্রা দেখান। সাইজ বলার পরে মুখের দিকে তাকায়, শরীরের দিকে তাকায়। তখন খুবই অস্বস্তি বোধ হয়। বিব্রত বোধ করি। অনেক সময় না কিনেই চলে আসতে হয়।”

থানা ও গ্রাম পর্যায়ের চিত্র

মাগুরা জেলা থেকে ২৫ কিলোমিটার ভেতরের গ্রামে থাকেন নাজমুন নাহার। বয়স ১৮। অন্তর্বাস কিভাবে, কোথা থেকে কিনেন জিজ্ঞেস করতে জানালেন, আগে কিছু নারী বাড়ি বাড়ি ফেরি করতো। কিন্তু এখন কিনতে হয় এলাকার বাজারে গিয়ে। নাজমুন নাহারদের গ্রামের বাজারে অন্তর্বাস পাওয়া যায় না। পাশের গ্রামের বাজারের দোকান থেকে কিনতে হয়। মেয়েদের সালোয়ার কামিজ, শাড়ি যেসব দোকানে বিক্রি হয় সেসব দোকানেই অন্তর্বাসও রাখে। তবে গ্রামে এখনও অনেক বিবাহিত মেয়েদের জন্য তাদের স্বামীরাই অন্তর্বাস কেনেন। আর অবিবাহিত মেয়েরা মা, খালা বা বড় বোনের দ্বারস্থ হয়। তাদের সহায়তাতেই প্রয়োজনীয় এ পোশাক কেনে। গ্রামের দোকানগুলোতে খুবই সাধারণ ও নিম্নমানের অন্তর্বাস পাওয়া যায়।

অনলাইনে অন্তর্বাস কেনা বেচা

আজকাল অনলাইনেও অন্তর্বাস কিনছেন অনেকে। গড়ে উঠেছে অনলাইনভিত্তিক অনেক ‘আন্ডার গার্মেন্টস শপ’। দোকানে গিয়ে কেনার বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকের নির্ভরতার জায়গা হয়ে উঠছে অনলাইন শপগুলো। ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রুবাবা চাকরি করেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। বললেন, “মার্কেটে গিয়ে কেনার সময় পাই না। ঘরে বসেই অনলাইনে ডিজাইন, ফেব্রিক পছন্দ করে সাইজ বলে অর্ডার করি। অনেক নারীরা এখন অনলাইনে অন্তর্বাস বিক্রির ব্যবসা করছেন। তাদের কাছে সহজে বোঝাতে পারি কি চাচ্ছি। সঠিক সাইজ, সঠিক পুন্য বাছাই করতে তারা খুব সাহায্য করে থাকেন। ফলে কেনাকাটাও খুব আরামদায়ক হয়।”

ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শায়লা সোমা। অন্তর্বাস কেনাকাটার অভিজ্ঞতা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “কম্ফোর্টেবল কোনো আন্ডারগার্মেন্টস শপ পাওয়া বেশ কঠিন। অনেক দোকানে গেলে নারী বিক্রয়কর্মীরাই অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে থাকে। কেনাকাটায় হেল্প করা তো দূরের কথা। তবে ইদানীং অনলাইনে কিছু আন্ডার গার্মেন্টস শপে স্পেসিফিকেশন বুঝিয়ে বললে ঠিকঠাক জিনিসটা পাঠিয়ে দেয়। সময় আর শ্রমের বেশ সাশ্রয় হয়।”

অনলাইনে অন্তর্বাসের দোকান Angels Attire এর স্বত্তাধিকারী কাওছারী নাহার। ২০২০ সালের করোনাকালীন সময়ে ফেসবুকে অন্তর্বাস বিক্রির একটি পেজ খুলেন। তার আগে থেকেই তিনি মেয়েদের অন্তর্বাস বিক্রি শুরু করেন। এই পন্য বিক্রির ভাবনাটা কিভাবে এলো জানতে চাইলে বললেন, “আমি প্রত্যন্ত এলাকায় বড় হয়েছি, তাই কখনো ভালোমানের ইনার গার্মেন্টস পরতে পারিনি। ঢাকাতেও আমরা সব দোকানে ব্র্যান্ডের ইনারওয়ার পাই না। আর যেসব দোকানে পাওয়া যায় সেগুলো আমাদের অনেকেরই ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। সে কারণেই আমি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে সরাসরি কিনতে শুরু করি। তাতে আমি দেখলাম মোটামুটি কম মূল্যে আমি ভালো পন্য বিক্রি করতে পারবো। প্রথমদিকে পরিচিতরা কিনতে শুরু করে আমার কাছ থেকে। পরে পেজে দেই। এর মধ্যে আমি এসব নিয়ে পড়াশুনা শুরু করলাম। কিভাবে ব্রা-এর সঠিক সাইজ বের করতে হয়। কী ধরণের বডিশেপের জন্য কোন ধরণের ব্রা প্রযোজ্য এই সব জানতে লাগলাম। এখন আমি সঠিক মাপের ব্রা ক্রেতার হাতে অনেক কম মূল্যে তুলে দিতে পারি। অনেকেই অন্তর্বাসের সঠিক পরিমাপ করতে পারে না। আমি তাদেরকে সঠিক মাপের পোশাক নিতে সাহায্য করি। ক্রেতারাও ভীষণ খুশি হয়। খুব দ্রুতই সাড়া পেয়েছি। মেয়েদের জন্য একটা ভরসার জায়গা তৈরি করতে পেরেছি। ঢাকার ভেতরে আমাদের ক্রেতা চল্লিশ শতাংশ। আর সবই ঢাকার বাইরের, বিশেষ করে মফস্বল এলাকার ক্রেতা বেশি। কারণ মফেস্বলে ভালো কোয়ালিটির পন্য পাওয়া যায় না, কোথাও ট্রায়াল দিয়ে দেখার সুযোগ নাই এবং দোকানগুলোতে পুরুষ মানুষরাই বিক্রি করে। সে কারণেই ঢাকার বাইরের ক্রেতারা অনলাইনের দিকে ঝুঁকেছেন। আমার এখানে অন্তর্বাসের দাম শুরু ১৫০ টাকা থেকে, রয়েছে ১০০০ টাকা পর্যন্ত। এই পন্যই আবার বড় শোরুমে কিনতে গেলে অনেক বেশি দাম পড়বে।

নারী, পুরুষ দুই ধরণের ক্রেতাই আছে। অনেক পুরুষরাও তাদের নারীসঙ্গীর জন্য আমার কাছ থেকে অন্তর্বাস কেনেন। মাঝেমাঝে অনেক বাজে অভিজ্ঞতাও হয়। ইনবক্সে অশ্লীল ছবি, ভিডিও পাঠিয়ে দেয় অনেকে। আবার অনেক অনলাইন পেজে নারী পরিচয়ের আড়ালে পুরুষ মানুষ ব্যবসা করে থাকে। এ ধরণের অনলাইন শপে অনেকসময় ক্রেতাকে হেনস্থা হতে হয়। কিছুদিন আগে এরকম একটা অনলাইন শপ একজন নারী ক্রেতাকে তার ঠিক মাপের পন্য দিতে না পারায় ক্রেতা টাকা ফেরত চায়। তখন সেই শপের মালিক নারী ক্রেতাকে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় আক্রমণ করে। এভাবেই শপের মালিক যে পুরুষ সেটা তখন প্রকাশ পায়।”

XS
SM
MD
LG