আগামী ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) যাতে রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে নয়াপল্টনে তাদের সমাবেশ করতে পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবার (৩০ নভেম্বর) তিনি এক সমাবেশে এই আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা এক মাস আগে নয়াপল্টনে আমাদের বিভাগীয় সমাবেশ করার জন্য ডিএমপিকে চিঠি দিয়েছিলাম। কোনো রকম বিশৃঙ্খলা ছাড়াই এর আগে এখানে বহু সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং, আমাদের চিঠি অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন, কারণ আমরা এখানে আমাদের সমাবেশ করব। এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া আপনাদের দায়িত্ব’।
এদিকে বিএনপি কেন সমাবেশের জন্য ১০ ডিসেম্বর বেছে নিয়েছে এবং তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন অপছন্দ, এমন প্রশ্ন রেখেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি সমাবেশকে ঘিরে আন্দোলনের নামে যদি সহিংসতার উপাদান যুক্ত করে তাহলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ সমুচিত জবাব দেবে’।
বুধবার সচিবালয়ে ব্রিফিংকালে বিএনপির উদ্দেশে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
বিএনপি নেতা মির্জা ফখরুল আশ্বস্ত করেছেন, গণতন্ত্র ও জনগণের ভোট ও অন্যান্য অধিকার পুনরুদ্ধারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করবেন’।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তাদের বিরোধিতার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘চারদিক দেয়াল ঘেরা অনুষ্ঠানস্থলে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে তাদের দল স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছে না। ওখানে সহজে প্রবেশ করার এবং বেরিয়ে আসার কোনো রাস্তা নেই’।
এ অবস্থায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে তাদের দলকে শান্তিপূর্ণভাবে নয়াপল্টনে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান ফখরুল।
অন্যথায় সমাবেশকে কেন্দ্র করে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য সরকারকে দায়ী করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশের মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলার প্রতিবাদে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আজ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপির ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর মহানগর শাখা। সেখানে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘১০ ডিসেম্বরের জনসভা সফল করা ঢাকাবাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ।… পুরো বাংলাদেশের জনগণ নতুন আশা নিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এটি (১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ) ঢাকা ও এই বিভাগের জনগণের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। ইনশাআল্লাহ সমাবেশ সফল হবে’।
তিনি বলেন, সরকার অকারণে বিএনপির সমাবেশে বাধা দিচ্ছে, যা গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ‘এটা আপনাদের (সরকার) জন্য মোটেও ভালো হবে না। আপনারা পথ খোলা রাখছেন না। আমি আবারও আপনাদেরকে অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে নিরাপদ প্রস্থান নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে বলছি’।
তিনি অভিযোগ করেন, সরকার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র, নির্বাচন কমিশন ও পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীকে ব্যবহার করছে।
উল্লেথ্য, মঙ্গলবার ২৬ শর্তে ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি কি জানে না বাংলাদেশের ইতিহাস? ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীল নকশা বাস্তবায়নে প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১০ ডিসেম্বর সাংবাদিক সিরাজ উদ্দিন হোসেন এবং সাংবাদিক সৈয়দ নাজমুল হক—এই দুজনকে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর আলবদর বাহিনী উঠিয়ে নিয়ে যায়। ১০ থেকে ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো নৃশংসতম ঘটনা বাংলাদেশে সংগঠিত হয়’।
জ্ঞান, গরিমা যাদেরকে ঘিরে সেই সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব, সাংবাদিক, চিকিৎসকদের ধরে নিয়ে গিয়ে হত্যা করা হয় স্মরণ করিয়ে দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১০ ডিসেম্বর সমাবেশের জন্য কেন বিএনপি বেছে নিল এটাই এখন প্রশ্ন?’
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কেন বিএনপি যেতে চায় না, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে, সেই ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ ভাষণ বিএনপির পছন্দ নাও হতে পারে—যদিও জাতিসংঘ স্বীকৃতি দিয়েছে সর্বকালের অন্যতম সেরা ভাষণ হিসেবে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক স্থান, যেখানে স্বধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, ১৬ ডিসেম্বর যারা বিশ্বাস করে, সেখানেই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মিত্র বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে, সেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন বিএনপির অপছন্দ তা জানতে চেয়ে ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ঐতিহাসিক উদ্যান। বিশাল জায়গা এখানে, আওয়ামী লীগের সব সমাবেশ ও জাতীয় সম্মেলন এখানেই হয়। তাহলে বিএনপি কেন তাদের পার্টি অফিসের সামনে ৩৫ হাজার স্কোয়ার ফিটের মতো একটা ছোট জায়গা সমাবেশের জন্য বেছে নিল’।
তিনি আরও বলেন, ‘পার্টি অফিসে সমাবেশ করার জন্য বিএনপির এতো দৃঢ়তা কেন? এখানে তাদের কি কোনো বদ উদ্দেশ্য আছে? কোন মতলবে তারা এটা চায়?’
আওয়ামী লীগ ১০ ডিসেম্বর সতর্ক পাহারায় থাকবে বলেও জানান ওবায়দুল কাদের।