বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র একটি বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ এবং তারা কোনো গঠনমূলক পরামর্শ দিলে বাংলাদেশ তা গ্রহণ করবে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তা ডোনাল্ড লু-এর সফরের আগে, শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি-আইপিএস এবং এর অর্থনৈতিক উপাদান নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এসময় আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন যে বাংলাদেশ জনগণের কল্যাণে যা যা প্রয়োজন তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন যে সরকার এখনও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি (আইপিএস) সম্পর্কিত বিষয়গুলো অধ্যয়ন করছে। আব্দুল মোমেন বলেন, “এটি এতটা স্বচ্ছ নয়। এটি কীভাবে সুফল বয়ে আনবে তা সেখানে উল্লেখ করা হয়নি। আমরা অধ্যয়ন করছি।”
ব্যুরো অফ সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্সের সহকারী সেক্রেটারি অফ স্টেট হিসেবে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পান ডোনাল্ড লু। তিনি তার ভারত সফর শেষ করে, শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।ড. মোমেন বলেন, “আমরা আমাদের বিষয়গুলো তুলে ধরব। বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভালো সম্পর্ক থাকা খুবই স্বাভাবিক।”
ডোনাল্ড লু, জ্বালানি, বাণিজ্য, নিরাপত্তা সহযোগিতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, শ্রম এবং মানবাধিকারসহ বিভিন্ন অগ্রাধিকার নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দপ্তরের মতে, তিনি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার, অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ এবং শ্রম ও মানবাধিকারের বিষয়ে বাংলাদেশর দৃষ্টিভঙ্গি শুনতে ও এ বিষয়ে আলোচনা করতে, বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সুশীল সমাজের নেতাদের সঙ্গে দেখা করবেন। বাংলাদেশর পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একই মূল্যবোধে বিশ্বাস করে এবং গণতন্ত্র ও মানবাধিকারকে উৎসাহিত করে।
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, ন্যায়বিচার ও মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ৩০ লাখ প্রাণ বিসর্জন দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে উল্লেখ করেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, “আমাদের নীতি ও মূল্যবোধ প্রায় অভিন্ন।”
পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, তিনি সহকারী সচিব লুর সফরকে দুই পক্ষের মধ্যে নিয়মিত কাজের অংশ হিসেবে দেখছেন। পররাষ্ট্র সচিব জানান, “আমরা সার্বিক পরিসরে আলোচনা করব, শুধু নির্বাচন ও মানবাধিকার নিয়ে আলোচনা হবে না। এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে বাংলাদেশের কিছু প্রত্যাশা রয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র পক্ষেরও বাংলাদেশের কাছ থেকে কিছু প্রত্যাশা থাকতে পারে। আমরা খোলাখুলি আলোচনা করব।”
পররাষ্ট্র সচিব আরও জানান, “ইন্দো-প্যাসিফিকের বিষয়ে, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশল রয়েছে। তবে, এমন নয় যে আমরা কোনো নির্দিষ্ট গ্রুপে যোগ দিচ্ছি বা দিচ্ছি না। আমরা বঙ্গোপসাগর এবং এর বাইরের বিভিন্ন বিষয় কীভাবে দেখতে চাই, তার কিছু উপাদান প্রস্তুত করছি।”
গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সফর করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ডিরেক্টর, ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল, ইলিন লুবাচার। সে সময় তিনি বলে ছিলেন যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের একটি বড় অংশ হিসেবে বঙ্গোপসাগরে গুরুত্বপূর্ণ শিপিং লেন এবং সমুদ্রের তলদেশে তার রয়েছে; যা এই অঞ্চলের অর্থনীতিকে গতিশীল করে। যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ এবং এই অঞ্চলের সব দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই লেনগুলো মুক্ত ও উন্মুক্ত থাকা নিশ্চিত করা জরুরি।
তিনি বলেন, “উপসাগরও একটি অত্যাবশ্যক বাস্তুতন্ত্র এবং অনেকগুলো ভাগ করা অপ্রচলিত সুরক্ষা সমস্যাগুলোর জন্য একটি স্বল্প পরিধির জগত। আমরা বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবগুলো প্রতিরোধ করার মধ্য দিয়ে খাদ্যের উৎস ধ্বংস করতে পারে এমন অবৈধ, অপ্রতিবেদিত এবং অনিয়ন্ত্রিত মাছ ধরার বিরুদ্ধে লড়াই করছি। এমনকি মানুষ, অস্ত্র ও মাদক পাচারের বিরুদ্ধেও লড়াই করছি।”
“এই চ্যালেঞ্জগুলো একা অতিক্রম করা যায় না, সহযোগিতা প্রয়োজন। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশ এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় কঠোর পরিশ্রম করছে। আর, এটি একটি অবাধ, উন্মুক্ত, সংযুক্ত, সমৃদ্ধ, নিরাপদ এবং স্থিতিস্থাপক ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের জন্য আমাদের ভাগ করা দৃষ্টিভঙ্গির অংশ;” উল্লেখ করেন ইলিন লুবাচার।