অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ঢাকার বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা, লক্ষীপুর-এ নিহত ১ জন


ঢাকার মিরপুর বাঙলা কলেজের সামনে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পূর্ব ঘোষিত পদযাত্রা কর্মসূচি পালন কালে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে বিএনপি কর্মী, আ্ওয়ামী লীগ কর্মী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এসব ঘটনায় অন্তত দুইশ’ জন আহত হয়েছে। লক্ষীপুরে নিহত হয়েছে ১ জন।

বাংলা কলেজের সামনে মামলা

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজের সামনে, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) এক দফা দাবিতে আয়োজিত বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। বেলা ১১টা ২০ মিনিটের দিকে গাবতলী থেকে পুরান ঢাকার দিকে পদযাত্রা শুরু করে বিএনপি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা পৌনে ১২টার দিকে পদযাত্রা মিরপুর কলেজের কাছে পৌঁছালে, কয়েকজন যুবক তাদের ওপর হামলা চালায়। পরে, একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। সংঘর্ষের সময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি সাইকেল পুড়িয়ে দেয়া হয়। উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি অব্যাহত রাখে।

সোমবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানিয়েছিলেন, বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মঙ্গলবার সকাল ১০টায় গাবতলী বাস স্টেশন থেকে পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করবেন।

এর আগে, ১২ জুলাই, মির্জা ফখরুল আনুষ্ঠানিকভাবে একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দেন। এই দাবিতে প্রথম কর্মসূচি হলো ১৮ ও ১৯ জুলাই দুই দিনের দেশব্যাপী পদযাত্রা।

খাগড়াছড়িতে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, আহত শতাধিক

এদিকে, খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শাপলা চত্বর এলাকায় কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল শুরু করলে সংঘর্ষ হয়।স্থানীয় আওয়ামী লীগও একই সময়ে মিছিলের পরিকল্পনা করেছিলো।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শাপলা চত্বর ও আশপাশের এলাকায় তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এসময় ৮টি মোটরসাইকেলে আগুন দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নির্য়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।

এতে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক নুরুল আজম, মো. আলমাস, কাজরী মারমাসহ ২৫ থেকে ৩০ জন আওয়ামী লীগকর্মী আহত হন। আর, জেলা বিএনপির সমবায় সম্পাদক মো. হোসেন বাবুসহ ২০ থেকে ২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মী আহত হন।

পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষের পর এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সংঘর্ষের জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা একে অপরকে দায়ী করেছেন।

খাগড়াছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, “উন্নয়ন মিছিলে অংশ নিতে যাওয়ার পথে বিএনপি ক্যাডাররা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপর হামলা চালায়।” খাগড়াছড়ি বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এম এন আবছার বলেন, “কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী মিছিল করতে গেলে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর হামলা চালালে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হন।” আহত কয়েকজনকে খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ-গুলি

কিশোরগঞ্জে মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) দুপুর ১২টার দিকে শহরের রথখলা এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জসহ বেশ কয়েক রাউন্ড গুলিবর্ষণ ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করেছে।
এ ঘটনায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। তারা, বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিএনপির নেতাকর্মীরা পদযাত্রা করে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে রথখলা এলাকা পার হওয়ার সময়, তারা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে।

কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ-গুলি
কিশোরগঞ্জে বিএনপি-পুলিশ সংঘর্ষ, লাঠিচার্জ-গুলি

এসময় পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের ধস্তাধস্তি হয় এবং এক পর্যায়ে সংঘর্ষে শুরু হয়। পুলিশ টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। শহরের আখড়া বাজার থেকে রথখলা এলাকা পর্যন্ত আধা ঘণ্টা চলে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। এতে রথখলা এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায় এবং আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা দোকান পাট বন্ধ করে দেয়।

সংঘর্ষ চলাকালে দৈনিক মানব জমিনের স্টাফ রিপোর্টার আশরাফুল ইসলাম, চ্যানেল টুয়েন্টিফোর জেলা প্রতিনিধি আলম ফয়সাল, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, সাংগঠনিক সম্পাদক তারেকুজ্জামন পার্নেল, ছাত্রদল নেতা তৃপ্তিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুস্তাক সরকার জানান, “বিএনপির পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি ছিলো গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠ থেকে রথখলা ময়দান পর্যন্ত। রথখলা ময়দান পার হয়ে সামনের দিকে যেতে চাইলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে বিএনপি নেতা কর্মীরা পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এখন পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।”

জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল আলম জানান, “পুলিশের হামলা ও বাধায় বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।”

ফেনীতে সংবাদকর্মী-সহ আহত ৫০

ফেনীতে বিএনপির পদযাত্রার সময় নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে।
আহতদের অধিকাংশই নিজেদের কর্মী বলে দাবি করেছে বিএনপি।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে ফেনী শহরের ইসলামপুর রোড এলাকায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে সংঘর্ষে যোগ দেয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা। এতে শহরের খেজুর চত্তর থেকে শহীদ শহিদুল্লহ কায়সার সড়ক পর্যন্ত রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

এ সময় মোহনা টিভি ও স্থানীয় দৈনিক ফেনীর নিজস্ব প্রতিবেদক তোফায়েল আহমেদ নিলয়, মুস্তাফিজ মুরাদ, ফেনীর তালাস প্রতিনিধি আকাশ, মানবজমিন ফেনী প্রতিনিধি নাজমুর হক শামীম আহত হন।আহত সংবাদকর্মীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

ফেনীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ
ফেনীতে ত্রিমুখী সংঘর্ষ

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ২টার দিকে শহরের প্রবেশ পথের দাউদপুর এলাকা থেকে সাবেক সংসদ সদস্য ভিপি জয়নালের নেতৃত্বে পদযাত্রা শুরু করে জেলা বিএনপি। পদযাত্রা শান্তিপূর্ণভাবে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে খেজুর চত্তর হয়ে ইসলামপুর রোডের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে পৌঁছায়।

সেখানে জড়ো হওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে হঠাৎ পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘণ্টাব্যাপী চলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট পাটকেল নিক্ষেপ। একই সময় খেজুর চত্তর এলাকার ফেনী শহীদ মিনারের সামনে উন্নয়ন ও শান্তি শোভাযাত্রা করছিলো আওয়ামী লীগ। এক পর্যায়ে বিএনপি পি ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। প্রায় ঘণ্টাখানেক পরে টিআর শেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।

ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ উদ্দিন বাহার বলেন, “শান্তিপূর্ণ পদযাত্রা ইসলামপুর রোডে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে যাওয়ার সময় পুলিশ হঠাৎ টিআরশেল নিক্ষেপ করে। পরে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে অন্তত ২৫ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আহত করে।”

ফেনীর পুলিশ সুপার জাকির হোসেন বলেন, “বিএনপির পদযাত্রার নির্ধারিত স্থান ছিলো ইসলামপুর রোড পর্যন্ত। তারা তা না মেনে, মহিপালের দিকে যেতে চেষ্টা করে। এতে পুলিশ বাধা দিলে তারা ইট পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে।বাধ্য হয়ে পুলিশও টিআরশেল নিক্ষেপ করে।” শহরজুড়ে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

লক্ষ্মীপুরে সংঘর্ষে নিহত ১, আহত ৫০

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে বেশ কয়েকটি স্থানে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় সজীব নামের একজন নিহত হয়েছেন। এসব ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশসহ বিএপির অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। এসময় বেশ কয়েকটি দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
মঙ্গলবার বিকাল ৪টা থেকে ৫টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়। পরে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, নিহত যুবক সজিবের বাড়ি চন্দ্রগঞ্জ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পূর্ব নির্ধারিত পৃথক কর্মসূচি পালনের জন্য দল দুটির নেতা-কর্মীরা শহরে খন্ড খন্ড মিছিল নিয়ে সমবেত হতে থাকে।বিকেল ৪টার দিকে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক এ্যানি চৌধুরীর নেতৃত্বে শহরের গোডাউন রোড থেকে মিছিল বের করেন।

এসময় শহরের সামাদ একাডেমির মোড়ে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ আসা কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে বিএনপি কর্মীরা। পরে, আহত অবস্থায় মদিন উল্যাহ হাউজিং এর একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় আশ্রয়ের জন্য দৌড়ে গিয়ে লুটিয়ে পড়ে এক যুবক। এর কিছুক্ষণ পর সে প্রচুর রক্তক্ষরণে মারা যায় বলে জানান বাড়ির মালিক।

এদিকে, বিএনপির মিছিল ঝুমুর এলাকায় পৌঁছালে, পেছন থেকে ছাত্রলীগের লোকজন তাদের ধাওয়া করে। একইভাবে শহরের বাগবাড়ি এলাকায়ও সংঘর্ষ হয় বিএনপি ও আওয়ামী লীগ কর্মীদের মধ্যে।অ

ঝুমুর এলাকায় বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে মহাসড়কে উঠতে গেলে পুলিশ বাধা দেয়। এসময় পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়ে তারা। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি, টিয়ারসেল ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে।

লক্ষ্মীপুরের পুলিশ সুপার মো. মাহফুজ্জামান আশরাফ জানান, “বিএনপি মিছিল নিয়ে হাইওয়ে সড়কে উঠতে চাইলে, পুলিশ বাধা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোঁড়ে পুলিশ। বিএনপি’র হামলায় সদরের ওসি মোসলেহ উদ্দিন, সদর সার্কেল অফিসার সোহেল রানাসহ পুলিশের ১০ সদস্য আহত হন।”

XS
SM
MD
LG