বাংলাদেশে করোনার গতি প্রকৃতি জানা দুরূহ হয়ে পড়েছে। একমাত্র সরকারি সূত্র ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই। নানা ধরনের বিধি নিষেধ আরোপের ফলে স্বাভাবিক তথ্য প্রবাহ থমকে গেছে। সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে অনুমতি ছাড়া তারা কোন অবস্থাতেই মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। হাসপাতালগুলোতেও একই নির্দেশনা পৌঁছেছে। যে ক'জন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ খোলামেলা মত দিয়ে যাচ্ছিলেন তারাও এখন মিডিয়াকে এড়িয়ে চলছেন। এর ফলে সরকার যা বলছে তার উপরেই নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। গবেষকরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন। অথচ সংক্রমণ আর মৃত্যু হাত ধরাধরি করে এগুচ্ছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর কাফেলা। গত ২৪ ঘণ্টায় ৩২ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন দুই হাজার ৬১১ জন। উপসর্গ নিয়ে যারা মারা যান তাদের তথ্য এর অন্তর্ভুক্ত নয়। এখন পর্যন্ত ২২ টি জেলায় পিসিআর ল্যাব নেই। নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায় কিম্বা অন্য জেলায়। ফলে মানুষজন হাসপাতালমুখি হচ্ছেন না। ভুয়া নমুনা পরীক্ষার ফলও কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। এরমধ্যে হাসপাতালগুলো থেকে দুর্নীতি আর অনিয়মের যেসব খবর বের হচ্ছিল তাও বন্ধ হয়ে গেছে এক সরকারি আদেশে। বলা হয়েছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন অভিযান চালাতে পারবে না। অনিয়মের কারণে দুটি হাসপাতাল সিলগালা করা হয়েছে। আরও কয়েকটি হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে দুর্নীতির খবর বের করেছিল আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হয়েছে নানা মহলে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) মনে করে দুর্নীতি বিরোধী অভিযান পরিচালনার আগে মন্ত্রণালয়ের পূর্বানুমতি নেয়ার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম, দুর্নীতির চিত্র প্রকাশকে প্রতিহত করবে। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, চুনোপুটি নিয়ে টানাটানি করলে রুই কাতলা বেরিয়ে আসতে পারে এটাও হয়তো আরেকটি কারণ হতে পারে। তিনি বলেন দেশবাসীর একাংশের মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে আস্থাহীনতার সংকট আছে। এবং তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এটি এখন সরকার বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সিল দিয়ে বলে দিলো যে আসলে আস্থা রাখার মত প্রতিষ্ঠান আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নয়, যোগ করেন তিনি।