বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যেমন আশংকাজনকভাবে বিস্তার করা অব্যাহত রয়েছে তেমনি করোনায় মৃত্যুও বাড়ছে লাফিয়ে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য মোতাবেক সোমবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে এ যাবৎ কালের পুরনো সকল রেকর্ড ভেঙে করোনায় মৃত্যু ও শনাক্তের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময়ে সারাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন ২৪৭ জন করোনা রোগী এবং নতুন আক্রান্ত হয়েছেন ১৫,১৯২ জন।
এর আগে গত ১৯শে জুলাই দেশে একদিনে সর্বোচ্চ ২৩১ জনের মৃত্যু এবং ১২ ই জুলাই সর্বোচ্চ ১৩,৭৬৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে শনাক্তের হার ২৯.৮২ শতাংশ। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে এ পর্যন্ত দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন মোট ১৯,৫২১ জন এবং আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১,১৭৯, ৮২৭ জনে।
করোনার এই অপ্রতিরোধ্য বিস্তার ঠেকাতে বর্তমানে চলতে থাকা দুই সপ্তাহের লক ডাউন উপেক্ষা করেই ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য যায়গায় প্রতিদিনই মানুষ এবং যানবাহনের চলাচল যেমন বাড়ছে সেই সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণের বিস্তার। স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না সংক্রমণ।
করোনা সংক্রমণের এই ঊর্ধ্বগতি রোধে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশব্যাপী লক ডাউন কঠোরভাবে কার্যকর করার নির্দেশ দিয়ে একই সাথে টিকাদান কর্মসূচি ও করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা দেশের তৃনমূল পর্যন্ত আরও জোরদার করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট সকলকে সচেষ্ট থাকার জন্য আজ অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রী জাহিদ মালেক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
এদিকে, কঠোর লক ডাউনের মধ্যে কলকারখানা চালু রাখা হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে সরকারের তরফে সতর্ক করা হয়েছে। জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সোমবার ঢাকায় সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এ সতর্ক বার্তা জানিয়ে বলেছেন কলকারখানা কেউ খুলছে কিনা তা নজরে রাখা হচ্ছে।
পোশাক শিল্প মালিকরা বিদেশে গার্মেন্টস বাজার ধরে রাখার স্বার্থে লক ডাউনের মধ্যে তাঁদের কারখানা খোলা রাখার ব্যাপারে যে দাবি জানিয়েছিল সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন এ ধরনের কোনও চিন্তা-ভাবনা এখন পর্যন্ত নাই। মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে রাস্তায় চলাচল করার বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন করোনা যেভাবে ছড়িয়ে গেছে তাতে মানুষের জীবন বাচাতে কঠোর লক ডাউনের কোনও বিকল্প নাই এবং মানুষের উচিত এটা মেনে চলা।
অপরদিকে, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ এক ভার্চুয়াল আলোচনায় অংশ নিয়ে অভিযোগ করেছেন করোনা সংক্রমণের আশংকাজনক বিস্তার ঠেকাতে সরকারে উদাসীনতা, অযোগ্যতা ও ব্যর্থতা দেশের মানুষের জীবন ও জীবিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে। তিনি বলেন হাসপাতালগুলোতে বেড নাই, অক্সিজেন নাই, আইসিইউ নাই এবং ঔষধ নাই যার ফলে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল বলেন বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ উপেক্ষা করে সরকার অপরিকল্পিত ভাবে লক ডাউন দেওয়ায় দেশে আজ করোনা দুর্যোগ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। তিনি লক ডাউন চলাকালে প্রান্তিক মানুষের জীবিকা নির্বাহের জন্য এককালীন ১৫ হাজার টাকা অনুদান হিসেবে দেয়ার দাবি পুনঃব্যাক্ত করেন।