অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

থাইল্যান্ড ভ্রমণ, কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশ থাকলেও বাংলাদেশ নেই


করোনাভাইরাসের সতর্কতা কাটিয়ে থাইল্যান্ড পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত করার পর দেশটির বিমানবন্দরে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় - নভেম্বর ১,২০২১ - রয়টার্স
করোনাভাইরাসের সতর্কতা কাটিয়ে থাইল্যান্ড পর্যটকদের জন্যে উন্মুক্ত করার পর দেশটির বিমানবন্দরে বিদেশি পর্যটকদের ভিড় - নভেম্বর ১,২০২১ - রয়টার্স

করোনার টিকা নেয়া থাকলেই বিশ্বের ৬৩ দেশের নাগরিক চিকিৎসা, ব্যবসায়িক বৈঠক কিংবা একান্ত বিনোদনের জন্য এখনই থাইল্যান্ড ভ্রমণ করতে পারবেন। তাদের জন্য প্রয়োজন হবে না প্রাতিষ্ঠানিক হোটেল কোয়ারেন্টিন। প্রায় ১৮ মাস পর ১লা নভেম্বর থেকে এ সুযোগ অবারিত করেছে থাই সরকার। কিন্তু দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত এবং চিকিৎসার নির্ভরযোগ্য গন্তব্য থাইল্যান্ড বাংলাদেশিদের জন্য পুরোপুরি উন্মুক্ত হয়নি। দেশটির সরকার প্রণীত ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ ৬৩ দেশের তালিকায় স্থান করতে পারেনি বাংলাদেশ।

পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের গতি কমেছে। রেকর্ড সংখ্যক টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু থাই সরকার কোনো কিছুকেই আমলে নেয়নি। কর্মকর্তারা বলছেন, কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি বোঝানোর চেষ্টা চলছে। হয়তো আগামী মাসে এর ফল পাওয়া যাবে। অর্থাৎ বাংলাদেশি নাগরিকদের থাইল্যান্ড ভ্রমণে কোয়ারেন্টিনের শর্ত শিথিল হবে।

থাই সরকার ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ ৬৩ দেশের যে তালিকা করেছে সেখানে বাংলাদেশের নাম না থাকলেও দক্ষিণ এশিয়ার ৪টি দেশ স্থান পেয়েছে। দেশগুলো হলো- ভুটান, ভারত, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। ওইসব দেশের যেসব নাগরিক পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছেন তারা বাধাহীনভাবে থাইল্যান্ড ঘুরতে পারবেন। ৬৩ দেশের জন্য ব্যাংকককে উন্মুক্ত করায় আসন্ন শীত মৌসুমে দেশটিতে প্রায় দেড় কোটি পর্যটকের ঢল নামবে বলে পূর্বাভাস মিলেছে। একটি হিসাবে দেখানো হয়েছে, এতে থাইল্যান্ড সরকারের আয় হবে কমপক্ষে ৩০০০ কোটি ডলার।

তবে ৬৩ দেশের জন্য কোয়ারেন্টিনের শর্ত প্রত্যাহার করা হলেও দেশগুলোর নাগরিকদের বাধ্যতামূলক কিছু বিধিনিষেধ মানতে হবে। যার মধ্যে রয়েছে, পৌঁছার পরপরই পিসিআর টেস্ট করে হোটেলে একদিন অপেক্ষা। তাছাড়া তাদের ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট যথাযথ হতে হবে। সঙ্গে রাখতে হবে কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেটও। ভ্রমণকারীদের যারা ৩ মাসের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন, তাদের অবশ্যই পৌঁছার ১৪ দিন আগে প্রথম ডোজ টিকা দেয়া থাকতে হবে। তবে যাদের টিকা দেয়া হয়নি এবং ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট নেই তাদেরকে অবশ্যই ১০ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। তাদের দু’টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করতে হবে। প্রথমটি থাইল্যান্ড পৌঁছার দিনে আর দ্বিতীয়টি ষষ্ঠ অথবা সপ্তম দিনে। তাছাড়া ভ্রমণকারী প্রত্যেকের থাকতে হবে কোভিড-১৯ স্বাস্থ্য বীমা, যা ৫০ হাজার ডলারের কম হতে পারবে না।

উল্লেখ্য, গত মাসের প্রথমার্ধে এক ভিডিও বার্তায় থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী প্রায়ুতচান ওচা বলেন, ১লা নভেম্বর থেকে কম ঝুঁকিপূর্ণ দেশের জন্য থাইল্যান্ডের দরজা খুলে দেয়া হচ্ছে। ওই সমস্ত দেশ থেকে পর্যটকরা থাইল্যান্ডে এসে কোয়ারেন্টিনে না থেকেই বেড়াতে পারবেন। তবে তাদের ভ্যাকসিনের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। প্রধানমন্ত্রী জানান, ক্রমশ পর্যটনের বিষয়টি আরও সহজ করে দেয়া হবে। ১লা ডিসেম্বর থেকে আরও বেশি দেশের জন্য পর্যটনের দরজা খুলে দেয়া হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন এন্টারটেইনমেন্ট পার্কও খুলে দেয়া হবে ১লা ডিসেম্বর থেকে। অ্যালকোহল বিক্রির দোকানও খোলা হবে তখন।

বার্তায় প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, পর্যটন শুরু হওয়ার পর যদি দেখা যায় যে, তাতে দেশের কোভিড সংক্রমণের হার বাড়তে শুরু করেছে, তাহলে ফের দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। তার মতে, পরীক্ষামূলকভাবে ১লা নভেম্বর থেকে পর্যটন খাত উন্মুক্ত হয়েছে। স্মরণ করা যায়, করোনা মহামারির কারণে থাইল্যান্ডের অর্থনীতি বিধ্বস্ত অবস্থায় পৌঁছেছে। এর আগে দেশটিতে বছরে কমপক্ষে ৪ কোটি পর্যটক ঘুরতে যেতেন। গত বছর এ সংখ্যা ৮০ ভাগ কমে যায়। ব্যাংকক এবং ফুকেট বিমানবন্দরের সঙ্গে যুক্ত আছে বৃটেন, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, বেশির ভাগ ইউরোপিয়ান দেশ। থাই সরকারের হিসাবে এ খাত থেকে রাজস্ব আয় আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে ২০২৩ সালের মধ্যে।

তবে পর্যটন বিষয়ক বহু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এখনও চীন তার সীমান্ত বন্ধ রেখেছে। এতে থাইল্যান্ডের পর্যটন খাতের ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া কঠিন হবে। মহামারি শুরুর আগে সবচেয়ে বেশি পর্যটক থাইল্যান্ডে যেতেন চীন থেকে। ২০১৯ সালে তাদের সংখ্যা ছিল এক কোটি ২০ লাখ। থাইল্যান্ড সরকারের অন্য একটি হিসাব বলছে, গত এক বছরে পর্যটন শিল্প মার খাওয়ায় দেশটির ক্ষতি হয়েছে অন্ততপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। হিসাব মতে, ২০২১ সালের প্রথম আট মাসে থাইল্যান্ডে মোট বিদেশি গেছেন ৭০ হাজার। সকলকেই থাইল্যান্ডে নেমে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হয়েছে।

আতঙ্কের বিষয় হচ্ছে-পর্যটন খাত উন্মুক্ত করা হলেও গত ক’দিনে থাইল্যান্ডে করোনার দৈনিক সংক্রমণ হয়েছে ১০ হাজারের আশপাশে। প্রধানমন্ত্রীর ধারণা, আগামী কিছুদিনের মধ্যে সংক্রমণের হার আরও কমবে। বিদেশি পর্যটকরা এলেও সংক্রমণ বাড়বে না বলেই তার বিশ্বাস।

XS
SM
MD
LG