দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান চম্পা বানু। গ্রামের বাড়ি নওগাঁ জেলার পত্নিতলার তামাজিতে। পড়ালেখা করছিলেন গ্রাম থেকে একটু দূরের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। চম্পা যখন স্কুলের আট ক্লাসের ছাত্রী তখন তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দিয়ে দেন নওগাঁ শহরে চাকুরীরত এক ছেলের সাথে যার বয়স তার চেয়ে অন্তত দশ বছরের বড়। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। পড়ালেখা বন্ধ করে বিয়ে দেয়ার বিরুদ্ধে চম্পা প্রতিবাদ করলেও কেউ তা কানে নেয়নি।
এ সম্পর্কে ঢাকা থেকে একটি বিশেষ রিপোর্ট পাঠিয়েছেন জহুরুল আলম।
তিনি পড়ালেখা করে স্বাবলম্বী হতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরিবারের লোকেরা তাকে বুঝিয়েছিলেন চাকরী করা ছেলে পাওয়া দুষ্কর। আর যারা গরীব তাদের পড়ালেখা করা মানায় না। তাছাড়া বিয়েতে ছেলে কোনও যৌতুক দাবি করে নাই।
ওই বয়সে চম্পার জন্য বাবা-মায়ের কথার বাইরে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়া ছিল দুষ্কর। তাই মনে ক্ষোভ থাকলেও মেনে নিয়েছিলেন বাবা-মায়ের কথা। বিয়ের দুই বছর পরেও তিনি ওই ক্ষোভ এখনও পুষে বেড়াচ্ছেন। বর্তমানে এক সন্তানের জননী চম্পা। চম্পা ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন তিনি সংসার জীবনে স্বামী-সন্তান নিয়ে ভালোই আছেন। কিন্তু বাল্য বয়সে বিয়ে হওয়া আর পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে ক্ষোভ তার রয়েই গেছে।
চম্পার ঘটনা বাংলাদেশে বিচ্ছিন্ন কোনও বিষয় নয়। এমনটাই ঘটেছে বগুড়ার শম্পা খাতুন এবং বরিশালের মনিরা খাতুনের মত লাখ লাখ কন্যা শিশুর জীবনে। জাতিসংঘ শিশু তহবিল ইউনিসেফ এর সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে বাল্য বিবাহের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বের চতুর্থ তম অবস্থানে রয়েছে। প্রথম তিনটি দেশ আফ্রিকা মহাদেশের। ইউনিসেফ এর দেয়া তথ্য মোতাবেক বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই ৬৬শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। এর মধ্যে দুই তৃতীয়াংশের বিয়ে হচ্ছে ১৫ বছরের আগেই। চম্পা সাংসারিক জীবনে ভাল থকলেও বাল্য বিবাহের শিকার সিংহভাগ মেয়ারা স্বামীর সংসারে বিভিন্ন ভাবে নির্যাতিত হচ্ছেন, যৌতুকের কারনে প্রাণ হারাচ্ছেন, বিবাহ বিচ্ছেদের শিকার হচ্ছেন এবং অল্প বয়সে বিয়ে ও সন্তান হওয়ায় সন্তানসহ নিজে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন।
বাল্য বিবাহের কারনে শুধুভুক্ত ভুগিরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন না, সমগ্র জাতি বিভিন্নভাবে বিশেষ করে বিশাল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। বাংলাদেশের বাল্য বিবাহ নিরোধ আইন রয়েছে, রয়েছে বাল্য বিবাহ সম্পর্কে বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি সংস্থা সমূহের নানা ধরনের জনসচেতনতা মূলক কর্মসূচি। তার পরেও বাল্য বিবাহ কেন রোধ করা যাচ্ছে না তা নিয়ে ভয়েস অব আমেরিকারসাথে কথা বলেছেন কন্যা শিশু এডভোকেসি ফোরামের সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার জুলি।
বাংলাদেশের শিশুদের অধিকার রক্ষায় রয়েছে বিভিন্ন আইন। বাল্য বিবাহ রোধে আইন থাকা সত্ত্বেও কেন তা রোধ করা যাচ্ছে না এ বিষয়ে বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের নির্বাহী পরিচালক আবদুস শহিদ কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন আবদুস শহিদ বলেন আইনের প্রয়োগ ছাড়াও তৃণমূল পর্যায়ে বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে জনমত জোরদার করতে হবে। বাল্য বিবাহ
রোধে সরকারি এবং সামাজিকভাবে আরও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন এটা করা সম্ভব হলে একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী এবং আর্থিক ভাবে সচ্ছল জাতি বিনির্মাণে তা যে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে তাতে কোন সন্দেহ নাই ।