২০২০ জুড়েই ছিল করোনার দাপট। বাংলাদেশসহ বিশ্বে এই বছরটির আলোচিত চরিত্র হচ্ছে করোনা। পৃথিবীর এমন কোনো জনপদ নেই যেখানে হানা দেয়নি। বিশ্বব্যাপী ১৮ লাখ মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আট কোটিরও বেশি মানুষ করোনার সঙ্গে লড়াই করেছেন। পুঙ্গ করে দিয়েছে অর্থনীতি। ভেঙ্গে দিয়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। সৃষ্টি করেছে কোটি কোটি বেকার। বাংলাদেশও এর বাইরে নয়। হাজার হাজার শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন।
প্রবাসে কর্মরত বাংলাদেশিদেরকে অনেকটা শূন্য হাতে ফিরে আসতে হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিডের প্রভাবে শহরাঞ্চলে ৬৬ শতাংশ কর্মী কর্মসংস্থান হারিয়েছেন। গ্রামাঞ্চলে হারিয়েছেন ৪২ শতাংশ। করোনাকালে নতুন নতুন শব্দের জন্ম হয়েছে। 'নিউ নরমাল' শব্দটি এখন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে পরিচিত। ওয়ার্ক ফ্রম হোম, জুম মিটিং, লকডাউন, সামাজিক দূরত্ব, আইসোলেশন, কোয়ারেন্টিনও যুক্ত হয়েছে এর সঙ্গে।
করোনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে এক নতুন চ্যালেঞ্জের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। বাংলাদেশে চিকিৎসায় নানা দুর্নীতি আর অনিয়মের ঘটনা ছিল বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। সবচাইতে বেশি চাপের মধ্যে পড়েছে মিডিয়া। এর মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বাংলাদেশে মিডিয়া এখনও ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। সংবাদপত্র বন্ধ হয়েছে। চাকরীচ্যুত হয়েছেন শতশত সাংবাদিক। ইলেকট্রনিক মিডিয়া শুরুতে ধাক্কা খেলেও এখন সংকট কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে। তবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি মানুষের ঝোঁক বেড়েছে। ফেক নিউজের ছড়াছড়ি ছিল, আছে।
কোনটা আসল, কোনটা নকল তা যাচাই করা বড় কঠিন। নানা বিধি নিষেধের কারণে মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত হয়েছে। বড় চ্যালেঞ্জে পড়েছে মানুষের জীবন ও জীবিকা। তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ অস্বাভাবিক দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে। যা কিনা বিশ্ব ব্যাংকসহ আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছে। রাজনীতি চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। করোনা ভার্চুয়াল মিটিংয়ে বন্দী করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে থেকেই সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছেন। মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকও হয়েছে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। উচ্চ আদালত চলেছে একইভাবে।
মৃত্যুর তালিকা নিয়ে দেশে দেশে বিতর্ক হয়েছে। বাংলাদেশে সরকারি হিসেবে এ পর্যন্ত সাত হাজার ৫৫৯ জন মারা গেছেন। আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ লাখ ১৩ হাজার ৫১০ জন। মন্ত্রী, এমপি, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাংবাদিক, সেনাকর্মকর্তা, অভিনয়শিল্পী থেকে শুরু করে এমন কোনো সেক্টর নেই যেটা করোনার ছোবল থেকে রেহাই পেয়েছে।
বাংলাদেশে সাংবাদিকরা ছিলেন ফ্রন্টলাইনে। এক হাজার ১১৫ জন সাংবাদিক আক্রান্ত হন। মারা যান ২১ জন । করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও ১২ জন। এই মহামারীতে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে আক্রান্ত হন ১৮ হাজার ৮১১ জন পুলিশ সদস্য। মারা গেছেন ৮২ জন।
চিকিৎসক আক্রান্ত হন চার হাজার ৩৮ জন। প্রাণ দিয়েছেন ১৫৩ জন। শীর্ষস্থানীয় দু'জন ব্যবসায়ী যমুনা গ্রুপের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম বাবুল ও পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম মারা যান।
সবমিলিয়ে করোনা ছিল এক আতঙ্কের নাম। যাইহোক, বছর শেষে ভ্যাকসিন আশার আলো দেখায়। যদিও বাংলাদেশে এখনও ভ্যাকসিন আসেনি। জানুয়ারির শেষ নাগাদ অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে এমনটাই আশা করা হচ্ছে। ঢাকা থেকে মতিউর রহমান চৌধুরী