আট জাতির দক্ষিণ এশীয় জোট সার্ককে সক্রিয় করার সর্বশেষ চেষ্টাও ব্যর্থ হলো। পাকিস্তানের উদ্যোগে সাড়া দেয়নি ভারত। তারা জানিয়ে দিয়েছে, যে কারণে পাঁচ বছর আগে সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়েছিল সে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। বরং দিন দিন অবনতির দিকেই যাচ্ছে। ২০১৬ সালের নভেম্বরে সার্কের ১৯তম শীর্ষ সম্মেলন পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে হওয়ার কথা ছিল। এর আগে সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল নেপালে ২০১৪ সালে। ইসলামাবাদ বৈঠকের আগে কাশ্মীরের উরি সেক্টরে এক সন্ত্রাসী হামলার প্রেক্ষাপটে শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। এই হামলার জন্য ভারত পাকিস্তানকে সরাসরি দায়ী করে। বাংলাদেশ, নেপাল ও আফগানিস্তান এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ না নেয়ার পক্ষে অবস্থান নেয়। এরপর শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে তার দেশের আগ্রহের কথা জানান। তিনি এটাও বলেন, ভারত যদি ইসলামাবাদে অংশ না নিতে চায় তাহলে তারা ভার্চুয়ালি শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে পারে। পাকিস্তানের এই প্রস্তাব তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করে ভারত। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ঐকমত্য ছাড়া শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনের সুযোগ নেই। সার্ক সনদ অনুযায়ী সদস্য দেশগুলোর সবাই একমত হলেই কেবল শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে। ভারত এখানেই বসে থাকেনি। সে দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পাকিস্তান ছাড়া অন্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে টেলিফোনে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন। যদিও এই টেলি সংলাপের বিস্তারিত বিবরণ প্রকাশ করা হয়নি। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, আফগানিস্তানকে আন্তর্জাতিক বৈধতা দিতেই সার্কের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজনে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে পাকিস্তান। আফগানিস্তান প্রশ্নে ভারত ও পাকিস্তানের মনোভাবের বিস্তর ফারাক রয়েছে। সার্ক গঠনের পর থেকেই নানা কারণে এর অগ্রযাত্রা বারবার থেমে গেছে। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তানের বৈরি মনোভাবের কারণে একাধিকবার সার্কের শীর্ষ বৈঠক স্থগিত হয়েছে। এছাড়াও এই অঞ্চলে চীনের উপস্থিতিকে ভারত বরাবরই সন্দেহের চোখে দেখে। সার্কের অচলাবস্থার সুযোগ নিয়ে চীন গত এপ্রিলে ভারতকে বাদ দিয়ে বিকল্প সার্ক গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এই জোট গঠনের প্রস্তাব দেন। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণক দাবি করে, দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশ এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে। চীন তখন বলেছিল, এই জোট গঠনের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভ্যাকসিনের জোগান নিরবচ্ছিন্ন রাখা এবং খেটে খাওয়া মানুষের জীবন রক্ষা করা। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন তখন বলেছিলেন, ভারত ইচ্ছে করলে এই জোটে অংশ নিতে পারে। চীনের তরফে তাদেরকে ইতোমধ্যেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক এই সংস্থাটির যাত্রা শুরু হয় ১৯৮৫ সালের ৮ই ডিসেম্বর। প্রথম শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ঢাকায়। বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধিসহ ৬টি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়।
এরমধ্যে রয়েছে- সদস্য দেশগুলোর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক অবস্থার দ্রুত উন্নয়ন এবং দেশগুলোকে বিভিন্ন বিষয়ে আত্মনির্ভরশীল হতে সাহায্য করা। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরির মাধ্যমে দেশগুলোর উন্নয়ন সাধন করা এবং সদস্য দেশগুলোর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি ও পরস্পর মিলেমিশে চলা নিশ্চিত করা। একইসঙ্গে সদস্য দেশগুলোর স্বাধীনতা রক্ষা ও ভৌগোলিক অখণ্ডতার নীতি মেনে চলা। এক রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা।