অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রস্তুত


মিয়ানমার থেকে প্রানভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রস্তুতি নেয়া এবং এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বানের মধ্যে দিয়ে শেষ হোল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহযোগিতা বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন।

মিয়ানমার থেকে প্রানভয়ে পালিয়ে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে প্রস্তুতি নেয়া এবং এই সংকট সমাধানে মিয়ানমারকে আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসার আহ্বানের মধ্যে দিয়ে শেষ হোল রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সহযোগিতা বিষয়ক ভার্চুয়াল সম্মেলন।

যুক্তরাষ্ট্রের উপ পরররাস্ত্র মন্ত্রী ষ্টিফেন বেগান তাঁর উদ্বোধনি বক্তব্যে বলেন বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় জনগোষ্ঠী এখন রোহিঙ্গা শরণার্থী। বাংলাদেশের কক্সবাজার এবং আরও কিছু দেশে থাকা এই শরণার্থীদের আরও মানবিক সহায়াত দরকার। তিনি ২০২০তে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আরও ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদানের প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেন।

তিনি বলেন, “এই সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রতিশ্রুত। বাংলাদেশে সফর গিয়ে আমি এই প্রতিশ্রুতির কথা বলেছি। বলেছি শরণার্থীদের মিয়ানমারে তাদের ঘরবাড়ীতে নিরাপদে, মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়ে সহায়তার কথা। এবং সেই লক্ষ্যে মায়ানমারের প্রতি আমরা সেই দাবী রাখব”

সম্মেলনের যৌথ আয়োজক যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন, জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা, ইউএসএআইডি।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ গ্র্যান্ডি বলেন আমি নিজের চোখে দেখে এসেছি কক্সবাজার শরণার্থীদের সমস্যা। সংকট ও ভীতির মধ্যে খাদ্য, চিকিতসাসহ নানা সংকটে তারা। ২০১৭ সাল থেকে উন্নয়ন সহায়তাকারীরা ২.২ বিলিয়নেরও বেশি অনুদান দিয়েছেন। তাঁর পরও ৫০ শতাংশও তাদের প্রয়োজন পূরণ হয়নি। এই সম্মেলনের মধ্যে দিয়ে সেই সহায়তায় দুর্বল দিকগুলো বের করে সমাধান করতে হবে। তিনি বলেন এই সংকটের মুল সমাধান শরণার্থীদের মিয়ানমারে নিরাপদে ফিরিয়ে নেয়ার মধ্যে।

তিনি বলেন, “সংকট সমাধানের দায়িত্ব মিয়ানমারের ওপর. রোহিঙ্গারা যেন রাখাইনে নিরাপদে ফিরতে পারে সেজন্য সেখানে যেসব কাজকর্ম চলছে তাতে জাতিসংঘ সংস্থাগুলো অন্যান্যদেরকে সর্বতোভাবে সহায়তা করবে। ৪০টি প্রকল্প শেষ হয়েছে। আরও ৩০টির কাজ চলছে। তবে দারিদ্র নিরসনে আরও প্রয়াস দরকার। আশিয়ান এবং আঞ্চলক সমন্বয় বাড়াতে হবে”।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, এই সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে হবে। সংকট সমাধানে মিয়ান্মারকের এগিয়ে আসতে চাপ দিতে হবে।

তিনি বলেন, “মিয়ানমার যেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বন্ধ করে সেজন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে চাপ দিতে হবে। মিয়ানমারকে দোষীদেরকে শাস্তি দিতে আন্তরিক হতে হবে।”

মিয়ানমার থেকে প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং আশ্রয়প্রার্থী এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বাস করছেন। বাংলাদেশ নিবন্ধন করা এবং অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা রয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি।

মালয়েশিয়ায় ১০২০০০ নিবন্ধিত এবং ভারতে ১৮০০০ আছে। এছাড়াও বর্তমানে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে প্রায় ৬০০,০০০ রোহিঙ্গা বাস করছে, যাদের মধ্যে ১৪০,০০০ জন অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত।

২০১৭ সালের ২৫শে অগাস্ট মাসে রাখাইনের রোহিঙ্গা মুসলিমরা মিয়ানমার সেনাদের হামলে থেকে প্রাণ বাঁচাতে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।

রোহিঙ্গাদের জন্য টেকসই সমাধান ছাড়া, তাদের পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এর একটি স্থায়ী সমাধান এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এবং যাতে তারা মর্যাদার সাথে বসবাস করতে পারে সেই প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

সম্মেলনে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কমিশনার ইয়ানাস বলেন, “রোহিঙ্গাদেরকে তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়ার ওপর জোর দিতে হবে। এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিশ্চিত করতে হবে তাদেরকে যেন আমরা ভুলে না যাই”।

কমনওয়েলথ মিনিস্টার লর্ড তারিক আহমেদ বলেন মিয়ানমারে কি হচ্ছে কেউ জানেনা। সেখানে মানবিক কাজে সহায়তার জন্য উন্নয়নকরিদেরকে সেখানে যাবার অনুমতি দিতে হবে।

বলেন, “রোহিঙ্গাদের প্রয়োজন স্থায়ী অর্থায়ন। সকলের প্রতি আমি আহবান জানাই সহায়তা বাড়াতে। বাংলাদেশ ও ইন্দোনেশিয়া সরকার রোহিঙ্গাদের সহায়তার জন্য ধন্যবাদ জানাই”।

সম্মেলনে বক্তারা বলেন এই সংকটের সমাধানের পথ মিয়ানমারের হাতে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবাসনই সেই সমাধান এবং তাতে মিয়ানমারকেই এগিয়ে আসতে হবে।


XS
SM
MD
LG