অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের অভিযোগ নাকচ করলেন আইনমন্ত্রী


তদন্তকারী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সাংবাদিক এবং সহকর্মীরা ১৮ই মে, ২০২১ তারিখে, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দ্বারা নথি চুরি এবং ছবি তোলার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের একদিন পরে, ঢাকায় বিক্ষোভ করে। ছবি মুনির উজ জামান/এএফপি
তদন্তকারী সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের সাংবাদিক এবং সহকর্মীরা ১৮ই মে, ২০২১ তারিখে, স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দ্বারা নথি চুরি এবং ছবি তোলার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তারের একদিন পরে, ঢাকায় বিক্ষোভ করে। ছবি মুনির উজ জামান/এএফপি

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার সদ্য প্রকাশিত ২০২১ বার্ষিক রিপোর্টে অভিযোগ করেছে, নিরাপত্তা বাহিনীর দ্বারা বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন ও জোরপূর্বক গুমের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা মোকাবিলা করার কোনো ইচ্ছে সরকারের নেই। সমালোচক, সাংবাদিক এমনকি শিশুরাও যারা সরকারের সমালোচনা করেছে বা করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে তাদের বিরুদ্ধেও সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে।

২০০৯ থেকে ২০২০ সন পর্যন্ত গুম-খুনের একটি নথিযুক্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়, কিন্তু সরকার তা প্রত্যাখ্যান করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদের টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনের ব্রিফিংয়ের সময়ও কর্মকর্তারা অভিযোগ অস্বীকার করেন।

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সংস্থাটির এসব অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন। ভয়েস অফ আমেরিকাকে তিনি বলেন, সরকার এমন কোনো আচরণকে প্রশ্রয় দেয় না যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। এমন কোনো ঘটনা ঘটলে সরকারের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হয়। সরকার সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।

কি আছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ তার প্রতিবেদনে মানবাধিকার লঙ্ঘন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, শরণার্থী পরিস্থিতি, নারী ও শিশু পরিস্থিতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোকপাত করে।

এতে বলা হয়, বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দায়সারাভাবে জোরপূর্বক গুম এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। জোরপূর্বক নিখোঁজ হওয়া কয়েকজনের স্বজনরা বলেন যে, কিছু কিছু পরিবার হুমকি ও হয়রানির সম্মুখীন হয়েছে। এমন অভিযোগসহ আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে করা অভিযোগ পুলিশ গ্রহণ করেনি।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার জন্য জোর দেয়া সত্ত্বেও সরকার নির্যাতন প্রতিরোধ ও মোকাবিলায় নির্যাতনের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের কমিটির দৃঢ় সুপারিশ অনুযায়ী কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

এতে বলা হয়, মানবাধিকার কর্মীদের প্রতি নজরদারি, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ এবং নির্বিচারে আটকের মাধ্যমে টার্গেট করা হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহার করে সাংবাদিক, অ্যাক্টিভিস্ট এবং সরকারের সমালোচকদের হয়রানি ও অনির্দিষ্টকালের জন্য আটক করে রাখছে। এর ফলে ভিন্নমত প্রকাশে একটি হতাশাজনক প্রভাব পড়ছে। মার্চ মাসে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট ডিএসএ সংশোধনের আহ্বান জানান। এর পরিবর্তে আইন মন্ত্রণালয় বিশেষভাবে এই ধরনের সাইবার ‘অপরাধের’ জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বাড়ানোর প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্তত ৮০ জন সাংবাদিক তাদের কাজ করার সময় হামলার সম্মুখীন বা হয়রানির শিকার হয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এতে বলা হয়, বিদেশে অবস্থানরত সমালোচনাকারী কর্মী ও সাংবাদিকদের বাংলাদেশে বসবাসরত পরিবারের সদস্যদের টার্গেট করেছে কর্তৃপক্ষ। গণমাধ্যমের ব্যাপক দমন-পীড়নের ফলে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা নজিরবিহীন মাত্রায় নিজে থেকেই সেন্সর আরোপ করছেন।

রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর নেতা ছিলেন মুহিবউল্লাহ। তাকে কক্সবাজারের কুতুপালং ক্যাম্পে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করে সেপ্টেম্বরে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি তার কাজের জন্য প্রাণনাশের হুমকির সম্মুখীন হয়েছিলেন। কিন্তু বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়।

শরণার্থী বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার দীর্ঘকালীন মানবিক সংকটকে কাঁধে নিয়ে ক্রমবর্ধমানভাবে হতাশা প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারে ফেব্রুয়ারিতে ঘটে যাওয়া অভ্যুত্থান শরণার্থীদের জন্য নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনাকে আরও দূরে সরিয়ে দিয়েছে। সরকার প্রায় ২০,০০০ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে প্রত্যন্ত ভাসানচর দ্বীপে স্থানান্তরিত করেছে। দ্বীপে বসবাসরত শরণার্থীরা অপর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষার অভাব এবং চলাচলের স্বাধীনতায় বাধার সম্মুখীন হয়ে থাকে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলেছে দ্বীপে স্থানান্তর স্বেচ্ছায় হয়েছে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্য উল্লেখ করে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ২০২১ সালে ২০০ জনেরও বেশি নারীকো তাদের স্বামী বা স্বামীর পরিবারের লোকজন হত্যা করেছে । বাংলাদেশ সরকারের যৌন ও লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতাকে গুরুত্ব সহকারে নেয়া প্রতিশ্রুতিগুলো অস্পস্ট রয়ে গেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, নারী ও মেয়েরা ব্যাপক যৌন সহিংসতার মুখোমুখি হন, যখন সরকার পুনরায় যৌন হয়রানি আইন পাস করা বা বৈষম্যমূলক ধর্ষণ আইন সংশোধন স্থগিত করে দেয়। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সমকামিতা বাংলাদেশে একটি অপরাধ। ২০১৬ সালে বাংলাদেশি সমকামী অধিকারের বিশিষ্ট কর্মী জুলহাজ মান্নান এবং মাহবুব রাব্বি তনয়ের নৃশংস হত্যাকাণ্ডে অবশেষে ৬ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। হত্যার পাঁচ বছর পরও নারী সমকামী, পুরুষ সমকামী এবং ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তিরা এবং আইনজীবীরা পুলিশের কাছ থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে নিরাপত্তা না থাকায় সহিংসতা এবং সহিংসতার হুমকির সম্মুখীন হন। কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করার জন্য কর্তৃপক্ষ জুন মাসে ঘোষণা করেছিল যে, কোম্পানিগুলোর যেখানে কর্মশক্তির কমপক্ষে ১০ শতাংশ ট্রান্সজেন্ডার ব্যক্তি রাখা হবে সেখানে তাদেরকে কর ছাড় দেয়া হবে। বাংলাদেশে হিজরা, কোঠি বা ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচিত অনেকেই মহামারির মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হন।

XS
SM
MD
LG