অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

মিয়ানমারে সীমান্তরক্ষীর গুলিতে নিখোঁজ বাংলাদেশি জেলের হদিস এখনো মেলেনি


মোহাম্মদ ইলিয়াছ। (ছবি- মো. ইলিয়াছের পরিবারের সৌজন্যে)

কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে একটি ডিঙি নৌকা নিয়ে সাত দিন আগে (৯ ফেব্রুয়ারি) সকালে মাছ ধরতে নেমেছিলেন বাংলাদেশের দুই জেলে মোহাম্মদ ইলিয়াছ (৪৭) ও গুরা মিয়া (৩৫)। নদীর আন্তর্জাতিক সীমানায় পৌঁছলে (হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায়) দুই জেলেকে লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ-(বিজিপি)। এ সময় প্রাণে বাঁচতে দুই জেলে নদীতে ঝাঁপ দেন। গুরা মিয়া নদী সাঁতরিয়ে টেকনাফ ফিরে এলেও মঙ্গলবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর পযন্ত ইলিয়াছের খোঁজ মেলেনি। ইলিয়াছের বাড়ি টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের বিজিবি চেকপোষ্টসংলগ্ন এলাকায়। তার বাবার নাম মৃত ছৈয়দ আহমদ।

বাংলাদেশি জেলেকে গুলিবর্ষণ এবং নিখোঁজ থাকার বিষয়ে জানতে চেয়ে ঘটনার দিন বিজিপির কাছে চিঠি পাঠিয়েছিল বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। মঙ্গলবার সকাল পযন্ত ওই চিঠির জবাব পায়নি বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। দুই দেশের সীমান্তসংক্রান্ত সমস্যার বিষয়ে বিজিবি ও বিজিপি পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে সুরাহা করে আসছে।

নাফ নদীর টেকনাফ অংশের দায়িত্বে ২ বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ। এই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেন, “৯ ফেব্রুয়ারি সকালে নাফ নদীর লম্বাবিল জলসীমার শূন্যরেখা অতিক্রম করে বাংলাদেশি দুই জেলে (ইলিয়াছ ও গুরা মিয়া) মিয়ানমারের জলসীমানায় প্রায় ১০০গজ ভেতরে ঢুকে মাছ ধরছিল। এ সময় বিজিপি সদস্যরা জেলেদের থামার সংকেত দিলে তারা বাংলাদেশের জলসীমার দিকে আসার চেষ্টা করে। এ সময় দুই জেলেকে লক্ষ্য করে বিজিপি গুলি ছোড়ে। বিকেলে নদী সাঁতরে গুরা মিয়া অক্ষত অবস্থায় টেকনাফ ফিরে এলেও অপর জেলের খোঁজ মিলছে না।”

বিজিবি অধিনায়ক আরও বলেন, “নিখোঁজ জেলের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তারা নিশ্চিত নন। শোনা যাচ্ছে, তিনি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। কিন্তু কোথায় আছেন জানা নেই। ঘটনার বিষয়ে জানতে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা জবাব দেয়নি।”

হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ আনোয়ারী ভয়েস অফ আমেরিকাকে জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল ও রাতে নাফ নদীর মিয়ানমার সীমান্তে একাধিকবার গুলির শব্দ শুনতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নাফ নদীর মিয়ানমার জলসীমায় একজন মানুষের মরদেহ ভাসতে দেখেছে জেলেরা। সন্দেহ করা হচ্ছে এই মরদেহ নিখোঁজ জেলে ইলিয়াছের।

ঘটনার সাত দিনেও ইলিয়াছের খোঁজ না পাওয়ায় পরিবারের সদস্যরা উদ্বিগ্ন।
টেকনাফে ফিরে আসা জেলে গুরা মিয়া জানান, তারা দুই জেলে সেদিন মাছ ধরতে নাফ নদীতে নেমেছিলেন। এক পর্যায়ে মিয়ানমারের দিক থেকে তাদের লক্ষ্য করে ৯-১০ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। এ সময় ইলিয়াছ গুলিবিদ্ধ হন। প্রাণ বাঁচাতে দুজন ডিঙি নৌকা থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। তিনি নদী সাঁতরে টেকনাফে আসতে সক্ষম হলেও ইলিয়াছের খোঁজ মিলছে না। ধারণা করা হচ্ছে, গুলিবিদ্ধ ইলিয়াছকে হয় বিজিপি ধরে নিয়ে গেছে, নয়তো তার লাশ নাফ নদীতে ফেলে দিয়েছে।

নিখোঁজ ইলিয়াছের ছেলে মোহাম্মদ তারেক (২৬) বলেন, “সাত দিন ধরে এখানে ওখানে খোঁজ নিচ্ছি-বাবার সন্ধান পাচ্ছি না। কেউ বলছে বাবার লাশ নাফ নদীতে ভাসছে, কেউ বলছে বাবাকে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী আটকে রেখেছে। বাবার জন্য আমরা কিছুই করতে পারছি না। কারণ বাংলাদেশি নাগরিকদের নাফ নদী অতিক্রম করে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে যাওয়ার সুযোগ নাই।”

কান্নাকাটি করে মোহাম্মদ তারেক বলেন, “বাবা যদি জীবিত না থাকেন, তাহলে তার লাশটি হলেও ফেরত পেতে চাই।”

XS
SM
MD
LG