বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিকে স্বচ্ছতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করে অভিজ্ঞ, সৎ, সাহসী ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন।
বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে এক অনলাইন সংবাদ সম্মেলনে এই আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
সুজনের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার।
তিনি বলেন, “আইনে নির্দেশিত ‘স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করার’ আইনের এ বিধানের কার্যকারিতা প্রদানের লক্ষ্যে অনুসন্ধান কমিটিকে যথাযথ কার্যপদ্ধতি নির্ধারণ করা আবশ্যক। এ সম্পর্কে আমরা কমিটির কাছ থেকে এ পর্যন্ত কোনো সুস্পষ্ট ধারণা পাইনি। তবে প্রথম বৈঠকে অংশ নেওয়া সার্চ কমিটির একজন সদস্যের ইত্তেফাককে দেওয়া বক্তব্য-‘গতবার সার্চ কমিটি যেভাবে কাজ করেছিল এবারও সেভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করবে’-আমাদের মধ্যে উৎকন্ঠার সৃষ্টি করেছে। কারণ গত অনুসন্ধান কমিটির কাছে দাবি জানানো সত্ত্বেও কমিটি কোনো স্বচ্ছতার চর্চা করেনি। এ ছাড়াও ২০১৭ সালের অনুসন্ধান কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কি না সে ব্যাপারেও গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। তাই কমিটিকে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা প্রদর্শনের জন্য কমিটির কার্যপদ্ধতি অবিলম্বে জনগণকে অবহিত করা প্রয়োজন।”
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “অনুসন্ধান কমিটিকে শুধু নিরপেক্ষতা প্রদর্শন করলেই হবে না, কমিটি নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কি না তাও জনগণের কাছে প্রতীয়মান হতে হবে। এ ছাড়া কী মানদণ্ডের ভিত্তিতে এবং কী পদ্ধতিতে কমিটি তার বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের সুনাম যাচাই করবেন তাও জনগণকে জানানো জরুরি। কমিটি যা প্রকাশ করেছে তাতে পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয়নি। কারণ কাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তা প্রকাশ করলেও কারা প্রস্তাব করেছে তা কমিটি প্রকাশ করেনি। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, অসম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করলে বা তথ্য গোপন করলে স্বচ্ছতা নিশ্চিত হয় না।”
বদিউল আলম মজুমদার পরিপূর্ণ স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে সৎ, যোগ্য ও সুনামের অধিকারী ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য সার্চ কমিটির করণীয় সম্পর্কে চারটি সুপারিশও পেশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ, নির্বাহী সদস্য ড. শাহদীন মালিক, সিকান্দার খান, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, ড. শাহনাজ হুদা ও রোবায়েত ফেরদৌস।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, “বিবেচনাধীন ব্যক্তিদের প্রস্তাবকদের নাম জানাতে হবে। তাহলে স্বচ্ছতার পথে অগ্রগতি হয়েছে বলা যাবে। নির্বাচনকালের সরকার ব্যবস্থাটা নির্বাচনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় নির্বাচনে আগে সে বিষয়ে কিছু হবে কি না সন্দেহ আছে। অন্তত একটা ভালো নির্বাচন কমিশন হোক।”
শাহদীন মালিক বলেন, “আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো দেশে যেন একটা ভালো নির্বাচন হয়। আর এর প্রথম ধাপ হিসেবে ভালো নির্বাচন কমিশন যেন হয়। এখন পর্যন্ত কমিটি যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা আগের তুলনায় ভালো। কিন্তু শুধু নাম প্রকাশ না করে কোন দল কার নাম দিয়েছে সেটাও প্রকাশ করা উচিত। এতে করে নির্বাচন সম্পর্কে দলগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি বোঝা যাবে।”
উদাহরণ হিসেবে শাহদীন মালিক বলেন, “যদি দেখা যায় কোনো দল তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠজনদের নাম দিয়েছে তাহলে আমরা বুঝতে পারব তারা সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না, নিজেদের সুবিধামতো নির্বাচন করতে চায়। দলগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নাম দিয়েছে নাকি নিজেদের সুবিধা হয় এমন নাম দিয়েছে তা বোঝাটা এখন খুবই জরুরি। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আইনে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে নাম প্রস্তাব করবেন, করতে হবে বলা নেই। তাই আমার মনে হয় যোগ্য ব্যক্তি খুঁজে বের করার স্বার্থে যৌক্তিক দুই-চার দিন বেশি সময় নিলে আইনের ব্যত্যয় হবে না।”
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “সংবিধানে বলা আছে জনগণ সকল ক্ষমতার উৎস। কিন্তু দুটি জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে এই অধিকার খর্ব করা হয়েছে। জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিকল্প নেই।”
রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, “অনুসন্ধান কমিটিকে সিরিয়াস মনে হচ্ছে না। প্রকাশিত নামের তালিকায় নামের বানান ভুল, পদবি ভুল, একই নাম কয়েকবার ইত্যাদি দেখা গেছে। এগুলো তাদের এ কাজে সিরিয়াসনেসকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। কমিটিকে আস্থা অর্জন করতে হবে। আরকেটি বিষয় হলো সংবিধান পরিবর্তনের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি এবং নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ গ্রহণ করবেন না, এমন বিধান যুক্ত করা প্রয়োজন।”