অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

বইমেলায় বৃষ্টির বিড়ম্বনা


সন্ধ্যার পর বৃষ্টি বন্ধ হলে কিছু গ্রন্থানুরাগী মেলায় আসেন। কিন্তু মেলা আর জমেনি। (ছবি: পুষ্পিতা রহমান)

এখন ফুল ফোটানো, কুয়াশা তাড়ানো বসন্তের দিন। তবু সকাল থেকেই আকাশের মুখ কালো। কে জানে কেন! সূর্যের হাসি তেমন করে দেখাই গেল না আর। লোকের ভাবনা ছিল মেঘ কেটে যাবে।

রাত পোহালেই মায়ের ভাষার জন্য প্রাণ উৎসর্গ করার চিরগৌরব মাখা অমর একুশে। নগরীর আবহে তার রেশ ছিড়ে পড়েছে। তাই রোববার (২০ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে বইমেলার ফটক খোলার পর দলে দলে নানা বয়সী নগরবাসী পথ ধরেছিলেন মেলামুখে। এদিন মেলার শুরুটা ভালোই হয়েছিল, আগের দুই সাপ্তাহিক ছুটির দিনের মতোই বাড়ছিল বেচাকেনা। এমন সময় বৃষ্টির বিড়ম্বনা।

দমকা হাওয়ার সঙ্গে মাঝারি গোছের বৃষ্টি শুরু হয়েছিল বিকেল ৪টার দিকে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে মোড়ক উন্মোচন মঞ্চ আর লেখক বলছি মঞ্চ ছাড়া আর কোথাও মাথা গোঁজার কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টি নামতে পারে হয়তো তেমন ভাবনাই ছিল না কর্তৃপক্ষের। ফলে বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে সবাই যে যার মতো দ্রুত বেরিয়ে গেলেন মেলা থেকে। অল্প কিছু লোক আশ্রয় নিলেন ওই দুই মঞ্চের ছাউনির তলায় গাদাগাদি করে। খালি হয়ে গেল মেলার মাঠ। দোকানিরা চটজলদি পলিথিন বিছিয়ে ঝাঁপ ফেলে বই বাঁচাতে ব্যাতিব্যস্ত হয়ে পড়লেন।

সন্ধ্যার পরে বৃষ্টি থেমে এসেছিল বটে। আশপাশে আশ্রয় নেওয়া গ্রন্থানুরাগীদের কেউ কেউ মেলায় ফিরতেও শুরু করেছিলেন। কিন্তু ভাঙা মেলা আর জমেনি।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক আমজাদ হোসেন কাজল, অবসর প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক মাসুদ রানা, সাহিত্য কথার প্রকাশক মিজানুর রহমান, চারুলিপির ব্যবস্থাপক রেহানুল ইসলামসহ অনেকর সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন, খুব ভালো বিক্রি শুরু হয়েছিল। অনেক লোকসামগম হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির কারণে বিক্রিবঞ্চিত হলেন তারা। তবে বইয়ের তেমন ক্ষতি হয়নি এটাই স্বান্ত্বনা।

কাল অমর একুশের দিনে মেলা খুলবে সকাল আটটায়, একটানা চলবে রাত নয়টা পর্যন্ত।

আলোচনা

এদিন মেলামঞ্চে ছিল “বিশ্বশান্তি” বিষয়ে আলোচনা। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জিয়া রহমান। শ্যামসুন্দর সিকদারের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন জালাল ফিরোজ ও খান মাহবুব।

প্রাবন্ধিক বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক, সমৃদ্ধ ও শোষণমুক্ত সমাজ বিনির্মাণের প্রত্যয় নিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। তা প্রকৃতপক্ষে শা‌ন্তিমূলক বিশ্বসমাজ প্রতিষ্ঠারও প্রাণবিন্দু ছিল।

আলোচকেরা বলেন, পূর্ববঙ্গের স্বাধিকার আন্দোলন থেকে ১৯৭১-এ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠন পর্যন্ত সকল সংগ্রামেই প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে মুক্তি ও শান্তির আকাঙ্ক্ষা। অভ্যন্তরীণ ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারই বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের চালিকাশক্তি ছিল। তাই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকটে বাংলাদেশ সবসময় শান্তির পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তবে আঞ্চলিক শান্তি ও বৈশ্বিক শান্তি অক্ষুণ্ণ রাখতে হলে সমতাভিত্তিক, বৈষম্যহীন কল্যাণ-রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা জরুরি।

সভাপতি বলেন, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু বিশ্বের অন্য দেশের সঙ্গে শা‌ন্তিপূর্ণ সহাবস্থানের কথা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁর আদর্শকে অনুসরণ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব কল্যাণকামী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নতুন প্রজন্মকেও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত করতে এবং আগামীর পথে বিশ্বশান্তির যাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে।

পরে স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন কবি জাহিদ হায়দার ও কবি ইকবাল আজিজ। আবৃত্তি করেন মীর বরকত, অলোককুমার বসু, ফয়জুল্লাহ সাঈদ এবং আবৃত্তি সংগঠন বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদের বাচিকশিল্পীরা।

ভাষাশহীদ মঞ্চ উদ্বোধন

অমর একুশে বইমেলায় এদিন বিকেল ৩টায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে নির্মিত ভাষাশহীদ মুক্তমঞ্চের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা ও অমর একুশে বইমেলার সদস্য-সচিব জালাল আহমেদ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি আসলাম সানী, হাসানাত লোকমান ও শাহাদৎ হোসেন নিপু।

XS
SM
MD
LG