অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

সুন্দরবনের আগুন ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসছে, জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস


সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। ৬ মে, ২০২৪।
সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। ৬ মে, ২০২৪।

বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার, সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আমরবুনিয়া টহল ফাঁড়ি সংলগ্ন লতিফের ছিলা এলাকায় লাগা আগুন ৩০ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

রবিবার (৫ মে) রাত ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে নিশ্চিত করেছেন ফায়ার সার্ভিসের মোংলা স্টেশন কর্মকর্তা মো. কায়মুজ্জামান।

“সুন্দরবনে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও সোমবার (৬ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। ধোয়ার কুন্ডলী দেখলে দ্রুত পানি দিয়ে ভিজিয়ে দেয়া হবে;” তিনি যোগ করেন।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমির হোসাইন চৌধুরী, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালিদ হোসেন ও পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান।

এর আগে, আগুন লাগার দ্বিতীয় দিন রবিবার সকালে সুন্দরবন বিভাগের চারটি অফিসের কর্মকর্তা ও বনরক্ষীসহ ফায়ার সার্ভিসের বাগেরহাট, মোরেলগঞ্জ, মোংলা, শরণখোলা, কচুয়ার ৫টি স্টেশনের সদস্য, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও সুন্দরবন সুরক্ষা টিমের স্থানীয় সদস্যরা একযোগে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

রবিবার দুপুরে সুন্দরবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে যুক্ত হয় বিমান বাহিনীর হেলিকপ্টার। আগুনের স্থানগুলোতে হেলিকপ্টার থেকে ফেলা হয় পানি। এর আগেই এই সংরক্ষিত বনের বিভিন্ন স্থানের প্রায় ১০ একর এলাকার ছোট-ছোট গাছপালাসহ লতাগুলো আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

এই অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত বন্যপ্রাণী হতাহতের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ওপর অগ্নিকাণ্ডের প্রভাব নিরূপণে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক। কমিটি আগামী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেবে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।

বার বার অগ্নিকাণ্ড

বনবিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানান গেছে, গত দুই দশকে ২৩ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবনে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সময়ে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত দল নাশকতা, অসচেতনতা, অবহেলায় ফেলে দেয়া বিড়ি বা সিগারেটের আগুনকে দায়ী করেছে।

বনকে সুরক্ষা দিতে বন ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বন-সংলগ্ন মরে যাওয়া নদ-নদী খনন এবং সীমান্ত এলাকায় বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের সুপারিশ করেছিলো তদন্ত কমিটিগুলো।।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের নথি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার, একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দু’বার, ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুবার, ২০০৬ সালে তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার, ২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়ায় তিনবার আগুন লাগে।

পরে, ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১১ সালে নাংলীতে দুবার, ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় একবার এবং ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের তথ্যমতে, এই আগুনের ঘটনা নিয়ে, গত ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৬টি অগ্নিকাণ্ড হয়েছে। এসব ঘটনায় ৮৬ একর বন পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

XS
SM
MD
LG