বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ককে ‘ট্রেন’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক হৃদয়ের মাধ্যমে সংযুক্ত।”
গত দশকে দুই দেশ একসঙ্গে অনেক মহৎ কাজ করেছে যা উদযাপন করার মতো বলে উল্লেখ করে তিনি। বলেন, “এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।”
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দোরাইস্বামী এ কথা বলেন। ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বলেন, “বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণ আত্মা ও হৃদয়ে সম্পর্কযুক্ত এবং তা রক্তের সম্পর্কের চেয়েও বেশি কিছু। আমরা সব সময় সে সম্পর্ক বিশ্বাস করি।”
দোরাইস্বামী বলেন, “বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক সবসময় চ্যালেঞ্জিং। তবে এটি এমন একটি সম্পর্ক যা সবচেয়ে মৌলিক নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত, যা হৃদয়ের সংযোগ।”
এই ভারতীয় কূটনীতিক বলেন, “আমরা বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের বিষয়ে অনেক কথাই বলি। কিন্তু সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমরা তোমাদের আত্মীয় এবং তোমরা আমাদের আত্মীয়।”
তিনি বলেন, “আমাদের অবশ্যই কিছু জিনিস আছে, যা আমাদের একসঙ্গে করতে হবে, আরও অনেক কিছু আমরা করতে চাই এবং তা একসঙ্গে করা উচিত।”
হাইকমিশনার বলেন, “দুই দেশ একসঙ্গে যা করেছে তা উদযাপন করা এবং বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্বের সাফল্য উদযাপন করা আমাদের কাজ। আমরা প্রত্যেকেই আমাদের সম্পর্ক এগিয়ে নিতে অবদান রেখেছি।”
দোরাইস্বামী বলেন, “একজনের জীবনে অনেক ধরনের সম্মান থাকে। তবে বাংলাদেশের মতো একটি দেশে সেবা করা, যে দেশটি ভারতের কাছে তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ দেশ, সে সম্মান দ্বিগুণ করেছে।”
হাইকমিশনার দোরাইস্বামী বাংলাদেশে তার মেয়াদ শেষ করে, ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা ত্যাগ করতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, এর আগে ভারতে চার দিনের সরকারি সফর শেষে বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে স্বদেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে তিন বছর পর ভারত সফরে যান।
শেখ হাসিনা ঐ সফরে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বিভিন্ন দ্বিপক্ষীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং ৬ সেপ্টেম্বর পৃথকভাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু ও ভারতের উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সফরকালে দুইদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার পর, ঢাকা ও দিল্লি কুশিয়ারা নদীর পানি বণ্টনসহ সাতটি সমঝোতা স্মারক সই করে। অন্যান্য সমঝোতা স্মারকগুলো হলো; মহাকাশ প্রযুক্তি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, রেলওয়ে, বিচার বিভাগ ও সম্প্রচারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা।
এছাড়া, রামপালে মৈত্রী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইউনিট-১ এবং খুলনায় ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ রূপসা সেতুর যৌথভাবে উদ্বোধন করেন শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদী।
শেখ হাসিনা ভারতে অবস্থানকালে দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধী, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের উন্নয়ন মন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি, নোবেল বিজয়ী কৈলাশ সত্যার্থী, আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান গৌতম আদানি এবং ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির মেয়ে শর্মিষ্ঠা মুখার্জি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী মহাত্মা গান্ধীর সমাধি (স্মৃতি স্থল) পরিদর্শন করেন এবং ফেডারেশন অফ বাংলাদেশ চেম্বারস অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) এবং কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি কর্তৃক (সিআইআই) যৌথভাবে নয়াদিল্লিতে আয়োজিত একটি ব্যবসায়িক অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
শেখ হাসিনা, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রাণ উৎসর্গকারী ভারতীয় সেনাদের বংশধরদের মধ্যে ২০০ শিক্ষার্থীকে মুজিব বৃত্তি প্রদান করেন।