অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পৃথিবীতে খাদ্যের অভাব নেই, এই অভাব মানব সৃষ্ট: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা


গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফরমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা। ১৭ অক্টোবর, ২০২২।
গণভবন থেকে ভার্চুয়াল প্লাটফরমে ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা। ১৭ অক্টোবর, ২০২২।

খাদ্যের ঘাটতি ‘মানবসৃষ্ট’ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, “বাস্তব অর্থে, পৃথিবীতে খাদ্যের কোন অভাব নেই। এই অভাব শুধু মনুষ্যসৃষ্ট। অস্ত্র তৈরিতে বিনিয়োগ করা অর্থের একটি ভগ্নাংশ যদি খাদ্য উৎপাদন ও বিতরণে ব্যয় করা হয়, তবে এই পৃথিবীতে কেউ ক্ষুধার্ত থাকবে না।”

সোমবার (১৭ অক্টোবর) ওয়ার্ল্ড ফুড ফোরাম ২০২২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় শেখ হাসিনা এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে এই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়াল প্লাটফরমে যোগ দেন।

শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন যে খাদ্য নিয়ে রাজনীতি এবং ব্যবসায়িক স্বার্থ, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কীটপতঙ্গ ও রোগ; সবই কৃষি ও খাদ্য ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, “হিসাব অনুযায়ী ৮০ কোটিরও বেশি মানুষ বা বিশ্ব জনসংখ্যার ১০ শতাংশ নিয়মিত ক্ষুধার্ত অবস্থায় ঘুমায়।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে পরিস্থিতি এখন আরও খারাপ হয়েছে। যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য সরবরাহ ব্যাহত করেছে এবং খাদ্যের জন্য খরচ বেড়েছে।”

শেখ হাসিনা উল্লেখ করেছেন যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উল্লেখযোগ্য অবদানের ফলে প্রচুর সম্পদ রয়েছে এমন একটি বিশ্বে, এটি (খাদ্য ঘাটতি) খুবই দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে যুদ্ধ বন্ধ করতে, খাদ্য নিয়ে রাজনীতি বন্ধ করতে এবং খাদ্যের অপচয় বন্ধ করতে অনুরোধ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “এর পরিবর্তে অনুগ্রহ করে এমন এলাকায় খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করুন, যেখানে অভাব ও দুর্ভিক্ষ রয়েছে। মানুষ হিসেবে, আমাদের অবশ্যই বিশ্বাস করতে হবে যে প্রত্যেকেরই খাবার খেয়ে এবং একটি নিশ্চিন্ত জীবনযাপনের অধিকার রয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, তিনি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন তখন চার মিলিয়ন মেট্রিক টন চালের ঘাটতি ছিল এবং যখন তিনি তার প্রথম মেয়াদ শেষ করেন তখন ২ দশমিক ৬ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার বর্তমান মেয়াদে আমরা আবারও ধান উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছি। মোট ধান উৎপাদন ২০০৮ সালে ২৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন মেট্রিক টন থেকে গত বছর ৩৮ মিলিয়ন মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এটি আমাদের বাস্তবসম্মত নীতিমালা, প্রচুর প্রণোদনা এবং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হলো আমাদের কঠোর পরিশ্রমী কৃষকদের কারণে সম্ভব হয়েছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও জানান, তার দ্বিতীয় মেয়াদে ২০০৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকা দুই কোটি কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেওয়া হয়েছে। এই কার্ডধারীদের সরাসরি তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ফসল উৎপাদনের জন্য ঋণ দেওয়া হয় এবং কৃষি উপকরণের জন্য ভর্তুকি দেওয়া হয়। এছাড়া, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষিতে বিনিয়োগের জন্য একটি কৃষি ও গ্রামীণ ঋণ নীতি গ্রহণ করেছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, “২০২০-২০২১ সময়ের মধ্যে ২২লাখ ৫০ হাজার ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য দুইশ’ কোটি ডলারের বেশি ঋণ দেওয়া হয়েছে। এত কিছুর পরও বাংলাদেশের কৃষি খাত জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “সব মিলিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ দেশ এবং জলবায়ু পরিবর্তন টেকসই কৃষির জন্য একটি বড় হুমকি। তবুও, বাংলাদেশ এবং তার সহনশীল জনগণ জীবনের সর্বক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের জন্য অক্লান্তভাবে এগিয়ে চলেছে।”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান যে, কৃষি পণ্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ শাকসবজি, মাছ ও অন্যান্য কৃষিভিত্তিক পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও সফল হয়েছে, যার অনেকটাই রপ্তানি হয়।

শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা বাংলাদেশের জন্য মূল্য শৃঙ্খলসহ গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিনিয়োগের আকর্ষণীয় সুযোগ উপস্থাপন করব। আমরা আমাদের কৃষি খাতের প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার দিকে মনোযোগ দেব এবং অন্যান্য ব্যবসার সুযোগ তুলে ধরব।বাংলাদেশ এখন সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বাংলাদেশে কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ভালো সম্ভাবনা রয়েছে।”

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশেষ করে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কৃষি খাতে বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানাতে চাই।”

XS
SM
MD
LG