বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে বাংলাদেশ শুধু কোনো বিশেষ দেশের সঙ্গে নয়, সবার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখে। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্কে (সিএনএন)-এ প্রচারিত এক সাক্ষাৎকারে এ কথা শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত সকলেরই কাছের। যারা আমাদের উন্নয়নে সহযোগিতা করছে, আমরা তাদের সঙ্গে আছি।” যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বাস করে এবং এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে বাংলাদেশ চীনের ‘খুব ঘনিষ্ট’ হয়ে যাচ্ছে; সিএনএন এর সিনিয়র সাংবাদিক রিচার্ড কোয়েস্ট এর এ মন্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “চীন বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী। চীন এখানে বিনিয়োগ করছে এবং তারা নির্মাণ কাজে জড়িত।ব্যাস এটুকুই। আমরা কারো ওপর নির্ভরশীল নই।”
তথাকথিত ‘চীনা ঋণের ফাঁদে’ বাংলাদেশের অবস্থানের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা ঋণ গ্রহণ বা উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক থাকি।” তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সিংহভাগ ঋণ নিয়ে থাকে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে। চীনা ঋণের ক্ষেত্রে, আমাদের কেস শ্রীলঙ্কা বা অন্যদের মতো নয়।”
শেখ হাসিনা বলেন যে তার সরকার যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের আগে সব সময় আয় ও সুবিধা বিবেচনা করে। তিনি বলেন, “আরেকটি বিষয় হলো আমরা সবসময় আমাদের নিজস্ব সম্পদ দিয়ে আমাদের দেশের উন্নয়নের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করি। আমরা অপ্রয়োজনীয় ঋণ বা বড় প্রকল্প গ্রহণ করি না। আমরা সর্বদা বিবেচনা করি কোন প্রকল্প থেকে আমরা রিটার্ন পেতে পারি এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার সাক্ষাৎকারে আরো বলেন, “বাংলাদেশ কখনোই কোনো ধরনের আগ্রাসন সমর্থন করে না, বরং আলোচনার মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করে। আমরা শান্তিপূর্ণ সমাধানে বিশ্বাস করি। কোনো বিরোধ থাকলে, তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যেতে পারে। আমরা কখনই কোনো ধরনের আগ্রাসন বা সংঘাতকে সমর্থন করি না।”
শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি পরিষ্কার ও স্বচ্ছ; সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়; সুতরাং, যখন আমরা কাউকে মানবাধিকার লঙ্ঘন করতে বা আক্রমণ করতে দেখি, অবশ্যই আমরা এর বিরোধিতা করি।”
তিনি ইউক্রেনের যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসার আহবান জানান। শেখ হাসিনা আরো বলেন, আমি মনে করি যুদ্ধ বন্ধে বিশ্ববাসীর এগিয়ে আসা উচিত। কারণ, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে।” তিনি বলেন, “যুদ্ধ এক পক্ষের দ্বারা সংঘটিত হতে পারে না, উভয় পক্ষের সম্পৃক্ততা প্রয়োজন।”
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, প্রতিটি দেশেরই স্বাধীনভাবে তার ভূখণ্ডে বসবাস করার এবং তাদের নিজস্ব অঞ্চল রক্ষার অধিকার রয়েছে।”
রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ তাদের নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।” রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বাংলাদেশের কী প্রয়োজন; এমন প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশ মিয়ানমারের সঙ্গে সংলাপ চালিয়ে যাচ্ছে। দুর্ভাগ্যবশত মিয়ানমার ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে না।” তিনি বলেন, তার সরকার ইতোমধ্যে চীন, আসিয়ানভুক্ত দেশসমূহ, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশের সঙ্গে কথা বলেছে এবং তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ করেছে। “দুর্ভাগ্যবশত, মিয়ানমার সরকার কারো কথাই শুনছে না। এটাই সমস্যা;” উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বলেন, “বাংলাদেশ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে।”
শেখ হাসিনা আরো বলেন, “রোহিঙ্গারা (১২ লাখ) বাংলাদেশের জন্য একটি ‘বড় বোঝা’ হয়ে উঠছে, কারণ আমাদের দেশে অতিরিক্ত জনসংখ্যা থাকা সত্ত্বেও, তাদের (রোহিঙ্গাদের) মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আমাকে তাদের (রোহিঙ্গাদের) খাওয়াতে হবে। আমাকে তাদের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে হবে।”
সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্ব মঙ্গলবার ভোরে প্রচারিত হয়েছে।