অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা রেলপথে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলবে বৃহস্পতিবার


অক্টোবরে উদ্বোধনের আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত নবনির্মিত রেল লাইনে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চালাবে।
অক্টোবরে উদ্বোধনের আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত নবনির্মিত রেল লাইনে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চালাবে।

বাংলাদেশের বহুল আলোচিত পদ্মাসেতু হয়ে রাজধানী ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার রেলপথ রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এই রুটে পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর)।

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন জানান, অক্টোবরে উদ্বোধনের আগে বাংলাদেশ রেলওয়ে বৃহস্পতিবার ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলা পর্যন্ত নবনির্মিত রেল লাইনে একটি পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানো হবে।

নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, “আমরা ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা দেওয়ার জন্য ১০ অক্টোবরকে অস্থায়ী তারিখ ধরে উদ্বোধনের জন্য এগিয়ে যাচ্ছি। উদ্বোধনের তারিখ প্রধানমন্ত্রীর সময়সূচির ওপর নির্ভর করবে”।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান ইউএনবিকে বলেন, চীন থেকে আমদানি করা ৭টি নতুন কোচ ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে চালানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।

মো. কামরুল আহসান বলেন, “পরীক্ষামূলক ট্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি একটি নতুন লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন), একটি পাওয়ার কার (ডব্লিউপিসি), একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডাইনিং কার ও গার্ড ব্রেক (ডব্লিউজেডিআর) এবং একটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্লিপার কার (ডব্লিউজেসি), দুটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার (ডব্লিউজেসিসি) ও একটি শোভন চেয়ার কোচ (ডব্লিউিইসি) বগি থাকবে”।

এর আগে পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ হওয়ার পর এ বছরের ৪ এপ্রিল ভাঙ্গা থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্ত পর্যন্ত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালায় বাংলাদেশ রেলওয়ে।

এবার ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৮২ কিলোমিটার নবনির্মিত ব্রডগেজ রেললাইনে ট্রায়াল করবে কর্তৃপক্ষ।

ট্রায়াল রানে রেলমন্ত্রী, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য, রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা ট্রেনে থাকবেন বলে জানান পরিচালক কামরুল আহসান।

নতুন এই রেলপথটি ঢাকা-যশোর পর্যন্ত। পুরো রেলপথ প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

রেলপথটি তিনটি ধাপে নির্মিত হচ্ছে ৩৭ কিলোমিটার গেন্ডারিয়া-মাওয়া অংশ, ৪২ কিলোমিটার মাওয়া-ভাঙ্গা অংশ এবং ৮৭ কিলোমিটার ভাঙ্গা জংশন-যশোর অংশ। এ ছাড়া, ঢাকা ও গেন্ডারিয়ার মধ্যে ৩ কিলোমিটার সংযোগ রেলপথ নির্মিত হচ্ছে। প্রায় ৪৩ দশমিক ২ কিলোমিটার লুপ, সাইডিং এবং ওয়াই-সংযোগসহ ঢাকা-যশোর রেলপথের লাইনের মোট দৈর্ঘ্য ২১৫ দশমিক ২ কিলোমিটার।

ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ২০টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে ১৪টি নতুন এবং ৬টি আগে থেকেই রয়েছে। আগের স্টেশনগুলোও আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। রেলপথের কাজ শেষ হলে ট্রেনগুলো ১২০ থেকে ১৩০ কিলোমিটার গতিতে চলতে সক্ষম হবে।

ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রতিটি লেভেল ক্রসিংয়ে আন্ডারপাস নির্মাণ করায় ঢাকা-যশোর রেললাইনের কোথাও কোনো রেল ক্রসিং থাকবে না।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প পরিচালক আফজাল হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত রেল যোগাযোগ উদ্বোধনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, “গেন্ডারিয়া ও কেরানীগঞ্জ স্টেশনে রেলওয়ে টার্ন-আউটের কিছু অসমাপ্ত কাজ (একটি রেললাইন থেকে অন্য রেললাইনে স্থানান্তর) ছিল, যা ২৫ অগাস্টের মধ্যে শেষ হয়েছে”।

ঢাকা থেকে ভাঙ্গার দূরত্ব প্রায় ৮২ কিলোমিটার। ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে কেরানীগঞ্জ হয়ে পদ্মা সেতুতে যুক্ত হয়েছে নতুন রেললাইন।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেললাইন ধরে গেন্ডারিয়া হয়ে কমলাপুর থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল করতে পারবে।

প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ১০০টি আধুনিক যাত্রীবাহী কোচ কেনা হয়েছে। এসব কোচ দিয়ে রেক সাজিয়ে নতুন ট্রেন চালু করা হবে।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ নির্মাণ প্রকল্প শীর্ষক পুরো প্রকল্পের ৮৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে ঢাকা-যশোর রুট খুলে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি ২০১৬ সালের ৩ মে একনেকে অনুমোদিত হয়েছিল। তখন এর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৩৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা। এরপর ২০১৮ সালের ২২ মে প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করা হলে ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। খরচ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পটি জিটুজি (সরকারের সঙ্গে সরকার চুক্তির) ভিত্তিতে চীনের অর্থায়নে নির্মিত হচ্ছে। চীনের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ (সিআরইসি) প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে চীনের এক্সিম ব্যাংক ২৬৬ কোটি ৭৯ লাখ (ইউএস) ডলার ঋণ দিচ্ছে। বাকি খরচের যোগান দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

XS
SM
MD
LG