হোয়াইট হাউসের সামনে সনাতন ধর্মালম্বীদের বিক্ষোভ
বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী সনাতন ধর্মালম্বীরা শনিবার (১০ আগস্ট) যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসের সামনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবার ও বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এই সময় তাদের "আমি কে, তুমি কে, বাঙালী, বাঙালী," স্লোগান দিতে শোনা যায়।
শনিবার (১০ আগস্ট) যুক্তরাজ্যের লন্ডনে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সনাতন ধর্মালম্বীরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ৫২টি জেলায় ২০৫টি সহিংস ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
গতকাল ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) চিঠিটি উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সভাপতি নির্মল রোজারিও। রোজারিও বলেন, "আমাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে, এ পর্যন্ত ৫২টি জেলায় অন্তত ২০৫টি সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।"
"আমরা সারা রাত জেগে বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিই। আমি আমার জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি। আমরা প্রশাসনের কাছে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।"
চিঠিতে দাবী করা হয়েছে, দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলে দাবী সজীব ওয়াজেদের
শেখ হাসিনা এই সপ্তাহে ভারতে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেননি বলে দাবী করেছেন তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ। শুক্রবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সের সাথে ওয়াশিংটন থেকে কথা বলার সময় তিনি এই দাবী করেন।
রয়টার্সকে তিনি বলেন, "আমার মা কখনই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। তিনি সময় পাননি।"
"তিনি (শেখ হাসিনা) একটি বিবৃতি দেওয়ার এবং পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের দিকে মিছিল করে আসতে শুরু করে। এবং তারপর আর সময় ছিল না।...সংবিধান অনুযায়ী তিনি এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।"
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রধান খালেদা জিয়ার প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিহারের সাম্প্রতিক বক্তব্যে সজীব ওয়াজেদ উৎসাহিত বোধ করছেন বলে বলেন, "ঐক্য সরকার হোক বা না হোক আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।”
শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট ছাত্রদের নেতৃত্বে এক গণঅভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. মুহাম্মাদ ইউনূসকে শপথ পাঠ করান।
জুলাই মাসের এক তারিখে সরকারী চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের দাবীতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলন দু’সপ্তাহের মধ্যে ব্যাপক গণবিক্ষোভে পরিণত হয়। পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ সমর্থদের সাথে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে প্রায় ৩০০জন নিহত হয়ে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়। হাসিনার পদত্যাগের পর সারা দেশ জুড়ে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের বাসভবনে হামলা এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর সহ শত শত ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। হাসিনার পতনের পরের দু’দিনে দেশে অন্তত ২৩২ নিহত হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
বাইডেন প্রশাসনের কাছে ওবায়দুল কাদের ও আসাদুজ্জামান খানের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রের ছয় আইনপ্রণেতার
সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার দাবি তুলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন ও অর্থমন্ত্রী জ্যানেট ইয়েলেনকে শুক্রবার (৯ আগস্ট) চিঠি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ছয় আইনপ্রণেতা।
চিঠিতে শেখ হাসিনা সরকারের মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি হিউম্যান রাইটস অ্যাকাউন্টিবিলিটি অ্যাক্ট সহ সকল প্রযোজ্য কর্তৃপক্ষের অধীনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানানো হয়।
চিঠিতে আরও বলা হয়, "বাংলাদেশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হ্রাসে সফল হয়েছে, কিন্তু বর্তমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে সেগুলো অপর্যাপ্ত।... যুক্তরাষ্ট্রের আইনে মানবাধিকারের চরম লংঘনে পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলা আছে।"
সেনেটর ক্রিস ভন হলেন ও এডওয়ার্ড জে মার্কি ও কংগ্রেস সদস্য লয়েড ডগেট, উইলিয়াম আর কিটিং, জেমস পি ম্যাকগভার্ন ও অল গ্রিন চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।
ভিডিওঃ বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলার প্রতিবাদে চট্টগ্রামে সমাবেশ
বাংলাদেশে হিন্দুদের মন্দির ও বাড়িঘরে হামলা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে অধিকার ও নিরাপত্তা রক্ষায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সদস্যরা।
সম্প্রতি হিন্দুদের বাড়িঘর, মন্দিরে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে শনিবার (১০ আগস্ট) চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ করেন তাঁরা।
শত শত মানুষের অংশগ্রহণে এই বিক্ষোভে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা ও সংখ্যালঘুদের চিকিৎসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেইসাথে দাবি অনুযায়ী দেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হলে আরও কঠোর কর্মসূচির ঘোষণার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে ৫২টি জেলায় ২০৫টি সহিংস ঘটনার বিবরণ দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একটি খোলা চিঠি দিয়েছে সংখ্যালঘুদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) চিঠিটি উপস্থাপন করেন সংগঠনটির সভাপতি নির্মল রোজারিও। রোজারিও বলেন, "আমাদের কাছে প্রাথমিক তথ্য রয়েছে, এ পর্যন্ত ৫২টি জেলায় অন্তত ২০৫টি সংখ্যালঘু নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে।" "আমরা সারা রাত জেগে বাড়ি ও মন্দির পাহারা দিই। আমি আমার জীবনে এমন ঘটনা দেখিনি। আমরা প্রশাসনের কাছে দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনার দাবি জানাচ্ছি।"
চিঠিতে দাবী করা হয়েছে, দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম এনডিটিভিকে শনিবার দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা প্রসঙ্গে বলেছেন, "বাংলাদেশে, দুর্ভাগ্যবশত, প্রতিটি বিপ্লবের সাথে, পট পরিবর্তনের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা হামলার শিকার হন, তা সে মুসলিম হোক বা হিন্দু। কিছু বিচ্ছিন্ন আক্রমণ (সংখ্যালঘুদের উপর) হতে পারে তবে এটি মোটেও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। কখনোই নয়।" তিনি বাংলাদেশে "অসাধারণ" সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রয়েছে বলে দাবী করেন।
এর আগে শনিবার অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস একটি স্বার্থান্বেষী মহল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সুরক্ষা নিশ্চিতের জন্য ছাত্র-জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার (১০ আগস্ট) ড. ইউনূস পুলিশের গুলিতে নিহত রংপুর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র আবু সাঈদের বাড়িতে যান এবং পরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময়কালে এ আহ্বান জানান।
তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, "সংবাদপত্রে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার প্রতিবেদন আসছে। তারা কেন হামলার শিকার হবে? তারা কি দেশের নাগরিক নন? তোমরা (শিক্ষার্থীরা) দেশকে বাঁচাতে পেরেছ, সংখ্যালঘু পরিবারগুলোকে কি বাঁচাতে পারবে না?"