করোনা আতঙ্ক আগেও ছিল। এখনও আছে। তবে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়েছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা রিপোর্টে। সরকারি সংস্থা রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ গবেষণা করে দেখতে পেয়েছে রাজধানী ঢাকাতেই প্রায় ১৮ লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত। ঢাকায় প্রায় ২ কোটি মানুষ বসবাস করেন। ইউএসএআইডি ও বিল এন্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ১৮ই এপ্রিল থেকে ৫ই জুলাই পর্যন্ত এই গবেষণা চালানো হয়। স্বাস্থ্য দপ্তর বলছে, এই পর্যন্ত দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৮ জন। এর মধ্যে ৭১ হাজার ১৮০ জন ঢাকার বাসিন্দা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গবেষণার ফল দেখে মনে হচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যা বহুগুণ বেশি। গবেষণায় তিন হাজার ২২৭ টি বাসায় জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে ২১১ জন উপসর্গ রয়েছে এমন মানুষ পাওয়া যায়। এর ১৯৯ জনই পিসিআর মেশিনে পরীক্ষা করেছেন। উপসর্গ রয়েছে এমন ৪৩৫ জনের মধ্যে ২০১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। উপসর্গ নেই এমন ৮২৭ জনের মধ্যে থেকে ৫৩৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এছাড়া রাজধানীর ৬ টি বস্তি এলাকায় ৭২০টি বাড়ি থেকে আলাদাভাবে নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে ৬ শতাংশ করোনা আক্রান্ত। জরিপে দেখা যায় পরিদর্শন করা বাসা বাড়িতে ৫ শতাংশ মানুষের মধ্যে করোনার উপসর্গ রয়েছে। ৯ শতাংশ করোনা পজিটিভ বলে গবেষণাকারীরা নিশ্চিত হন। জরিপে যাদের মধ্যে করোনার উপসর্গ পাওয়া গেছে তাদের ৯৩ শতাংশের জ্বর, ৩৬ শতাংশের কাশি, ১৭ শতাংশের গলা ব্যাথা এবং ৫ শতাংশের শ্বাসকষ্ট ছিল। আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গবেষণার ফলাফল বিশ্লেষণ করে বলেছেন যেকোনো মানুষের মধ্যে করোনা থাকার আশংকা রয়েছে। গবেষণায় দেখা যায় চল্লিশোর্ধ্ব মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বেশী করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই গবেষণা যেহেতু ঢাকা কেন্দ্রিক, সারাদেশের পরিস্থিতিটা আসলে কি তা নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত। ৫ই জুলাইয়ের পরের পরিস্থিতিও সম্পূর্ণ অজানা। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুন নূর তুষার মনে করেন, অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে বিপুল সংখ্যক মানুষ এই ভাইরাস নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা ডা. মোশতাক হোসেন বলেছেন সারাদেশের চিত্র প্রায় একই রকম হবে। সংক্রমণে যত লোক চিহ্নিত হন তার দশগুনেরও বেশি বাইরে থাকেন।
এই যখন অবস্থা তখন হঠাৎ করেই বন্ধ হয়ে গেল সরকারের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিং। আগামীকাল থেকে আর কোন স্বাস্থ্য বুলেটিন হবেনা। তবে অনলাইনে তথ্য পাওয়া যাবে।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনাক্ত হয়েছেন ২৯৯৬ জন। এনিয়ে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে তিন হাজার ৪৭১ জনের ।