অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

পৃথিবীকে যদি আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি, সেটাই হবে করোনা থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা: পরিবেশবিদ জয়ন্ত বসু


"ময়লা হাতে ওকে যেন ছুঁস না ওরে মন, পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন.."

সে কত বছর আগে, বিখ্যাত পরিচালক তপন সিংহের ছবি "আপনজন" কলকাতায় মুক্তি পাওয়ার আগে পোস্টারে পোস্টারে সারা শহর ছেয়ে গিয়েছিল এবং তাতে এই লাইন দুটি লেখা ছিল আরো কিছু কথার সঙ্গে। আজ এত বছর পরে করোনাভাইরাস যখন সারা বিশ্বে মহামারীর চেহারা নিয়েছে তখন এই সত্যি কথাগুলো বোধহয় আবার আমাদের মনে পড়া উচিত.. "ময়লা হাতে ওকে যেন ছুঁস না ওরে মন, পৃথিবীর গভীর গভীরতর অসুখ এখন"..
আজ বাইশে এপ্রিল সারা পৃথিবীতে ওয়ার্ল্ড আর্থ ডে হিসেবে পালন করা হয়। এ বছর বিশ্বের বৃহত্তম এই পরিবেশ আন্দোলনের পঞ্চাশ বছর হলো। কিন্তু সমগ্র মানবজাতি এবার বিশ্বজোড়া করোনা মহামারীর কালো ছায়ার আড়ালে পড়ে রয়েছি। বাংলায় বসুন্ধরা দিবস অথবা ভূপ্রকৃতি দিবস যে নামেই ডাকা হোক না কেন, আমাদের এই বসুন্ধরাকে, আমাদের এই পৃথিবীকে আমরা নিজের হাতে অনেকখানি ধ্বংস করেছি। এখন যে একটা ভাইরাসের আক্রমণে সারা পৃথিবীতে এত মানুষ মারা গেছে, এত মানুষ আক্রান্ত হয়েছে, আমরা লকডাউন পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছি, এটাকে আমরা প্রকৃতির প্রতিশোধ বলতে পারি। অথবা বলতে পারি, প্রকৃতি আপাতত আমাদের উদ্দেশ্যে একটা সাবধান বাণী ছেড়েছে, এই বলে সতর্ক করে দিয়েছে যে, যদি এইভাবে চলো তাহলে ধ্বংস অনিবার্য। প্রকৃতিকে ধ্বংস করলে প্রকৃতি একদিন না একদিন তার প্রতিশোধ নেবে। এবং মানুষ তখন কতখানি অসহায় হয়ে পড়ে তা আমরা বারবার দেখেছি বন্যায়, সুনামিতে বা অন্য কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে। যদিও সেগুলো হয়েছে এক এক সময়ে এক এক জায়গায়। আর এখন যেটা হচ্ছে সেটা সারা পৃথিবীতে বিস্তৃত। তবে এর একটা ভালো দিকও আমরা লক্ষ্য করেছি। গত ৫০ বছর ধরে ভূ-প্রকৃতি দিবস পালন করা হয়ে আসছে, যখন থেকে বোঝা গিয়েছে যে পৃথিবীর বাসিন্দা হিসেবে আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব ও কর্তব্য আছে। এই পৃথিবীতে আমরা যারা বাস করি তাকে যেন আমরা আরো একটু বাসযোগ্য করে তুলতে পারি। কিন্তু এই ৫০ বছরে কাজ কতটুকু হয়েছে? বলতে গেলে কিছুই না! আমরা সকলেই দিনের পর দিন, বছরের পর বছর পৃথিবীকে আরো বেশি ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি সভ্যতার অগ্রগতির নামে। আজকে এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে একটা জিনিস হয়েছে-- মানুষ ঘরবন্দি থাকায় কল-কারখানায় উৎপাদন হচ্ছে না, ফলে কোন বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে না, গাড়ি চলছে না, তাতেও গ্যাস নির্গত হচ্ছে না এবং আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে যেন পৃথিবীতে আরো কিছু ফুল ফুটছে, আর একটু পাখি ডাকছে, আমরা আর একটু নির্মল বাতাস পাচ্ছি এবং যদি করোনার প্রাদুর্ভাব কেটে যাওয়ার পরেও এটা আমরা বাঁচিয়ে রাখতে পারি তাহলে সেটা হবে মহামারী থেকে পাওয়া সবচেয়ে বড় শিক্ষা। কিন্তু সত্যিই কি তা হবে? এ ব্যাপারে আমরা কথা বলেছিলাম কলকাতার বিশিষ্ট পরিবেশবিদ জয়ন্ত বসুর সঙ্গে। জয়ন্ত বসু পৃথিবীর বহু দেশে নানা সময়ে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেছেন, পরিবেশ চিন্তা নিয়ে তাঁর কাজ নানান জায়গায় প্রশংসিত হয়েছে। তাকে আমরা জিজ্ঞেস করেছিলাম আজকের এই করোনা পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে সঙ্গে সারা পৃথিবীর ঘর বন্দিদশায় যে পৃথিবী একটু একটু করে তার পুরানো স্বাস্থ্য ফিরে পাচ্ছে, সেটা সত্যিই কি বজায় থাকবে? নাকি এটা শেষ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাওয়ার পর আবার আমরা যেমন ছিলাম তেমন ভাবেই ফিরে যাবো পৃথিবীকে ধ্বংস করতে?
পরিবেশবিদ জয়ন্ত বসুর কথা শুনলাম। আমার মনে হয়, আমাদের প্রত্যেকের মনের কথাই ওঁর বক্তব্যের সঙ্গে মিলে যাবে। যাঁরা প্রকৃতিপ্রেমিক তাঁরা সবাই চাইবেন, উনি যা বলতে চেয়েছেন সেটাই যেন সত্যি হয়। পৃথিবীকে আমরা আবার যদি আগের জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারি তাহলে সেটাই হবে করোনা থেকে পাওয়া আমাদের সবচেয়ে বড় শিক্ষা।
please wait

No media source currently available

0:00 0:07:19 0:00
সরাসরি লিংক


XS
SM
MD
LG