দীর্ঘ পাঁচ বছর পর বিশ্বভারতীর এই সমাবর্তন অনুষ্ঠান যে এক ঐতিহাসিক পর্ব রচনা করল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আজ ঠিক ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে দশটায়টা, রবিঠাকুরের ভূমিতে পা রাখেন বিশ্বভারতীর আচার্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার আগেই শান্তিনিকেতনে উপস্থিত হয়ে যান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সৌজন্য বিনিময় হয় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। উত্তরীয় পরিয়ে তাঁদের স্বাগত জানান বিশ্বভারতীর উপাচার্য সবুজকলি সেন।একইমঞ্চে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী ও রামকৃষ্ণ মঠ মিশনের স্বামী আত্মপ্রিয়ানন্দ।এদিন সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই ভিডিটার্স বুকে নিজের মনের কথা লেখেন ‘আচার্য নরেন্দ্র মোদী। এরপর শান্তিনিকেতন চত্বরে অধ্যাপক, অতিথিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন নরেন্দ্র মোদী ও শেখ হাসিনা।বিশ্বভারতীর সমাবর্তনের শেষে এদিন উদ্বোধন হল বাংলাদেশ ভবনের। পরিকল্পনা আগেই হয়েছিল। উদ্বোধন করলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেখানেই রীতিমতো স্মৃতিকাতর হয়ে পড়লেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।এদিন গোড়াতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক অটুট। বারবারই তার প্রমাণ মিলেছে। কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের যেমন জাতীয় কবি, তেমনই ভারতেও তিনি সমান আদৃত। মমতা বন্দোপাধ্যায় জানান নজরুল ইসলামের নামে এ বাংলায় এয়ারপোর্ট, বিশ্ববিদ্যালয়, অ্যাকাডেমি ও তীর্থ তৈরি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর নামে একটা ভবনও করতে চান বলেও আজ প্রস্তাব রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।এরপরই বক্তব্য রাখতে উঠে স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন করার সুযোগ পেয়ে আমি আনন্দিত। কবিগুরুর হাতে গড়া এই শান্তিনিকেতন। এ তো শুধু ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের নয়,আমাদেরও। কবিগুরুর অধিকাংশ কবিতা বাংলাদেশে বসেই লেখা। আমাদের অধিকার তাই একটু বেশি আছে বলেই মনে করি।” এদিন হাসিনার কথায় ফিরে ফিরে আসে বহু ঘটনার স্মৃতি। ঊন্নিশো নিরানব্বই সালে তাঁকে বিশ্বভারতী থেকে দেশিকোত্তম দেওয়া হয়েছিল। সেই কথা বারবার মনে পড়ছিল তাঁর। তিনি বললেন, “বিশ্বভারতীর সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর পুরনো। পড়ার সুযোগ হয়তো পাইনি। তবু আত্মার মিল রয়ে গিয়েছে। এটাকে আমি নিজের বিশ্ববিদ্যালয় বলেই মনে করি ।
অনুষ্ঠানে দুদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন বিশ্বভারতীর ছাত্রছাত্রীরা ।
বাংলাদেশ ভবন উদ্বোধন উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বাংলাদেশ ভবনের ভিতরেই দুদেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে মিনিট কুড়ির একটি একান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হলেও, ঠিক কি বিষয়ে দুই প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে কথা হয়েছে সেবিষয়ে কোনো পক্ষের তরফেই কিছু জানানো হয়নি ।