১৬ বছর আগে চট্টগ্রামে আদালত ভবনে আত্মঘাতী বোমা হামলার ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) নেতা মিজানুর রহমানকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই ঘটনায় জেএমবির আরেক সদস্য জাবেদ ইকবালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। রোববার সকালে চট্টগ্রামের সন্ত্রাস বিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিম এই রায় ঘোষণা করেন।
পুলিশ বলছে, জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার জাবেদ ইকবালের বিরুদ্ধে সারাদেশে ৩০টির বেশি মামলায় এর মধ্যে ৪০০ বছরের সাজা হয়েছে। আর মিজানুর রহমানকে ২০১৪ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজির করার সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যান থেকে তাকে ছিনতাই করে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। এরপর থেকে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি।
রোববার ঘোষিত আদালতে রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি নেতা মিজানুর রহমানকে পলাতক দেখানো হয়েছে। সে নিষিদ্ধ ঘোষিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বোমা বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তবে, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত জাবেদ ইকবাল ছিলেন জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের কমান্ডার। আত্মঘা্তী বোমা হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হওয়ার পর থেকে জাভেদ ইকবাল কারাগারে আছেন। রায় ঘোষণার আগে কড়া নিরাপত্তা মধ্য দিয়ে তাকে চট্টগ্রামের আদালতে হাজির করা হয়।
২০০৫ সালের ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রাম আদালত ভবনের চেক পোষ্টের সামনে জেএমবি আত্মঘাতী বো্মা হামলার ঘটনা ঘটায়। ঘটনার পরদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় জেএমবির বোমা হামলাকারী। সে সময় রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল বিএনপি- জামায়াতের নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট।
আত্মঘাতী ওই বোমা হামলার ঘটনায় ঘটনাস্থলে মারা যান পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়াসহ দুইজন। আহত হন পুলিশ কনস্টেবল আবু রায়হান, সামসুল কবির, রফিকুল ইসলাম ও আবদুল মজিদসহ ১০ জন। আত্মঘাতী বোমা হামলার পরপরই জেএমবি হামলার দায় স্বীকার করে।
ওই ঘটনার পর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হলে ২০০৬ সালের ১৮ মে পুলিশ দীর্ঘ তদন্ত শেষে পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। আদালতে দেয়া অভিযোগ পত্রে পুলিশ জেএমবির তৎকালীন প্রধান শায়খ আবদুল রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, মিজানুল ইসলাম, জাভেদ ইকবালকে অভিযুক্ত করা হয়। আদালত ওই বছরের ১৬ জুলাই অভিযুক্ত জেএমবি সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে। এর মধ্যে অন্য মামলায় জেএ্মবির তৎকালীন প্রধান শায়খ আবদুল রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হওয়ায় বিচারকী আদালত তাদের বাদ দেন।
চট্টগ্রামের সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি মনোরঞ্জন দাশ গণমাধ্যমকে জানান, চাঞ্চল্যকর এই মামলায় মোট ৩২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতে রায় ঘোষণা করেন। আদালতে জেএমবির সদস্য জাবেদ ইকবাল তার কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়ায় আদালত মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসবিরোধী ট্রাইব্যুনালের বিচারক আব্দুল হালিমের আদালতে আসামি ও রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের শুনানি শেষে রোববার রায়ের দিন নির্ধারণ করা হয়।
আতঘাতী ওই বোমা হামলায় যারা মারা যান তাদের মধ্যে পুলিশ কনস্টেবল রাজীব বড়ুয়া আদালত ভবন এলাকায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। নিহত অপরজন শাহবুদ্দীন আহমেদ ছিলেন ফুটবলার এবং বিচারপ্রার্থী।