অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশের প্রয়াণ


পৈত্রিক সূত্রে অভিজাত বংশোদ্ভব -ব্যক্তিগত জীবনে হাস্যোজ্বল- রসবোধ সম্পন্ন মানুষ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ । একদিকে যেমনি দায়িত্ব বোধ নিয়ে সজাক সচেতন রইতেন সর্বক্ষন – তেমনি মানবিক মূল্যবোধের প্রতিও দায়বদ্ধতায় কোনো কমতি করতেন না মোটে। বিংশ শতাব্দীর গত ষাইট দশক দেশ ও জাতির সেবায় নিয়োজিত থেকেছেন ৪১ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ । তাঁর প্রয়ানের কথা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন পারিবারিক এক মূখপাত্র শুক্রবার গভীর রাতে । মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিলো ৯৪ বছর ।

যুক্তরাষ্ট্রের এই ৪১ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশের দীর্ঘ জীবন বিস্তৃত থেকেছে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপটে- এ্যামেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গনের শীর্ষ অবস্থানে সে যাত্রা গিয়ে পৌঁচেছিলো ১৯ শ’ ৮৯ সালে । চার বছরের প্রথম মেয়াদের পর হোয়াট হাউসে থেকে জাতিকে দিক নির্দেশনা দেবার সে দায়িত্ব ১৯ শ’ ৯২-এর পূনর্নির্বাচনে অধোমুখি অর্থনীতি আর উর্ধমুখি বেকার হারের তোড়ে পড়ে তিনি আর ফিরে পাননি । ।

প্রেসিডেন্ট পদের দায়িত্বভার হাতে নেবার পর পরই বলেছিলেন তিনি – নতুন ধারার সূবাতাস বইছে এখন – বিশ্ব এখন মুক্তি স্বাধীনতার সৌরভে উজ্জিবিত – বাস্তবে না হ’লেও মানুষের মনের গহীনে স্বৈরশাষকের দিন এখন সমাপ্ত । স্বৈরশাসনের যুগ শেষ হয়ে আসছে । প্রাচীন-মৃতপ্রায় বৃক্ষ হ’তে ছিন্ন-বৃন্ত শাখা পল্লব ঝরে ঝরে পড়ছে বাতাসের ধাক্কায় – চলে যাচ্ছে প্রান্তসীমায় ।

তাঁর ঐ সোচ্চার বক্তব্য পরবর্তীকালে সত্য প্রমানিত হয়। বার্লীন প্রাচীর ভেঙ্গে পড়ে- প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর অধিষ্ঠানের গোড়ার দিকেই পতন ঘটে সোভিয়েট য়ুনিয়নের। বার্লীন প্রাচীরের পতন ঘটবার অল্প কিছু পরেই তদানিন্তন সোভিয়েট নেতা মিখাইল গোরবাচফের সঙ্গে দেখা হয় তাঁর মলটায় – এবং তারই সূত্র ধরে ১৯ শ’ ৯১ সালে দু’ নেতার মধ্যে সাক্ষরিত হয় পারমানবিক অস্ত্র হ্রাস চূক্তি strategic arms reduction treaty ।

হোয়াইট হাউসে তাঁর চার বছরের অবস্থানকালেই তাঁরই নির্দেশে মাদক চোরাচালানের হোতা পানামার নেতা মানুয়েল নোরিয়েগার পতন ঘটাতে বুশ নির্দেশ দেন সামরিক অভিযান পরিচালনার । তেল সমৃদ্ধ কুয়েত কব্জার লক্ষে উদ্যতপ্রায় সাদ্দাম হোসেইনকে প্রতিহত ক’রতে পরবর্তীতে তিনি মধ্যপ্রাচ্যে সৈন্য পাঠানোর নির্দেশ দেন এবং এভাবে প্রেসিডেন্ট পদে তাঁর সাফল্যজনক অধিষ্ঠানের স্বীকৃতি স্বরুপ তাঁর জনমত সমর্থন মাত্রা এ্যাপ্রুভ্যাল রেটিং গিয়ে পৌঁছোয় ৮৯ শতাংশের রেকর্ড মাত্রায় । পরবর্তীতে অবশ্য বুশের ঐ কূযেত অভিযান অনেকখানিই আকস্মিক হামলার প্রতিক্রিয়া রুপে পরিগণিত হয় – ইরাকী সৈন্যবাহিনীর বহূ সৈন্যই

পিছু হঠে দেশে ফিরে যায় – হুসেন পূর্ববতই ক্ষমতায় বহাল রয়ে যান – অবশ্য পরবর্তীতে দু’ হাজার তিন সালে বুশ তনয় প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশের নির্দেশে তিনি ক্ষমত্যাচ্যুত হয়েছিলেন ।

দেশ ও দশের প্রতি বুশের দায়বদ্ধতার প্রথম বহি:প্রকাশ ঘটে তাঁর জীবদ্দশার প্রথম অধ্যায়ে – যখন তিনি দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় নৌবাহিনীতে জঙ্গি বিমানের পাইলট ছিলেন – মাত্র আঠারো বছর বয়েসে জাপানী লক্ষস্থলগুলো নিশানা ক’রে অভিযান চালিয়েছিলেন – ঐ পর্যায়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কালের অন্যতম বৃহত এক বিমান যুদ্ধে – ফিলিপাইন সাগর বক্ষের বিমান লড়াইয়ে বিজয়ের নায়ক রুপে স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি ।

প্রেসিডেন্ট পদে অধিষ্ঠানের আগে বেশ কিছু সরকারী পদে তিনি কার্যকরী ভুমিকা রেখেছিলেন । সত্তর দশকের গোড়ার দিকে জাতিসংঘে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন – স্বল্প সময়ের জন্যে রেপাবলিকান পার্টীর জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন – সত্তর দশকের মাঝামাঝি চীনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দূতিয়ালির দায়িত্ব পালন করেন এবং আরো পরে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সি আই এ’র পরিচালক হিসেবে কাজ করেন তিনি ।

সব সময়েই যে রাজনীতি অঙ্গনে জয়ী হয়েছেন তিনি তা নয় । ১৯ শ’ ৬৪ সালে টেক্সাসে যুক্তরাষ্ট্র সেনেটের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করে জয়ী হতে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি । তার পর ঐ টেক্সাসেই তেল কোম্পানী প্রতিষ্ঠা করে অয়েল ব্যাবসায় মনোনিবেশ করেন তিনি । পরবর্তীতে কংগ্রসের প্রতিনিধি পরিষদের এক নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন – সেনেটের আরেক নির্বাচনে ব্যর্থও হয়েছিলেন ।

আশি সালে প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচনের জন্যে রিপাবলিকান দলের মনোনয়ন প্রার্থী হয়েছিলেন কিন্তু পরাজিত হন তদানীন্তন ক্যালিফোর্নিয়া গভর্ণর রনাল্ড রেগানের কাছে । ঐ বছরেই – ১৯৮০ এবং চার বছর পর চুরাশিতেও রনাল্ড রেগ্যান তাঁর ভাইস প্রেসিডেন্ট পদের জন্যে তাঁকে আহ্বান জানান এবং সে আহ্বান তিনি গ্রহনও করেন এবং তারপর ১৯ শ’ ৮৮ সালে ম্যাসুচুসেটসের গভর্ণর মাইকেল ডুকাকাসকে পরাজিত ক’রে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ তম প্রেসিডেন্টের পদে অধিষ্ঠিত হন জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ ।

পরবর্তীতে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্যে প্রতিদ্বন্দীতা ক’রলেও আর্কেনস’র গভর্ণর বিল ক্লিনটনের কাছে হার স্বীকার করতে হয় প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশকে । পরে অবসর জীবনে পৌঁছিয়ে তাঁর জেষ্ঠ পুত্র জর্জ ডাব্লিউ বুশকে তিনি পর পর দু’ মেয়াদ প্রেসিডেন্ট হতে দেখেছেন । জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ টেক্সাসের কলেজ স্টেশানে তাঁর প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরীর উদ্বোধনীতে স্বযং উপস্থিত থেকেছেন – দু’ হাজার আঠারোর এপ্রিলে পত্নি বারবারা পিয়ার্স বুশের মৃত্যুর আগে পর্যন্ত দীর্ঘ ৭৩ বছর একত্রে বিবাহিত জীবন যাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ তম প্রেসিডেন্ট জর্জ এইচ ডাব্লিউ বুশ ।

please wait

No media source currently available

0:00 0:05:55 0:00

XS
SM
MD
LG