বাজি পোড়ানোর কারণে, দূষণের বিপজ্জনক স্তরও পার হয়ে গেল দিল্লিতে। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ও দিল্লি সরকারের নির্দেশ, কড়া নজরদারি উপেক্ষা করেই বাজি পুড়েছে রাজধানীর অলিতে গলিতে। তারই ফল, মারাত্মক ঘন ধোঁয়াশা যা ঘিরে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ফেলেছে দিল্লিকে। বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণার পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বেশি। প্রতি শ্বাসেই বিষ-বাষ্প ঢুকছে শরীরে। প্রতিদিনই বাতাসের গুণগত মান খারাপের দিকে যাচ্ছে। ওদিকে কালীপূজার রাত থেকেই দূষণের মাত্রা বেড়েছে কলকাতাতেও।
পরিসংখ্যান বলছে, দীপাবলির দিনেই দিল্লির কোনও কোনও জায়গায় বাতাসের মান সূচক উঠে গিয়েছিল ৬১৭-তে। কোথাও আবার ৯৯৯ ছাড়িয়েছিল। অথচ গতবছর এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ৪৩৩, তার আগের বছর ২০১৯ সালে ৩৯০। শুক্রবারই দিল্লির বাতাসের মান সূচক ছিল পাঁচশোর বেশি। প্রতিবেশী শহর ফরিদাবাদে বাতাসের মান সূচক ছিল ৪৬৯, গ্রেটার নয়ডায় ৪৬৪, গাজিয়াবাদে ৪৭০, গুরগাঁওতে ৪৭০।
দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী গোপাল রাই বলছেন, "অনেকেই করোনা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে আদালতের নির্দেশ মেনে বাজি পোড়াননি। তবে উদ্দেশ্যপ্রোণোদিত ভাবে শব্দবাজি ও আলোর বাজি পোড়ানো হয়েছে বহু জায়গায়। দীপাবলির রাত থেকেই দিল্লির বাতাস বিষাক্ত। একেই দূষণের মাত্রায় দেশের সব রাজ্য ও বড় শহরগুলির মধ্যে দিল্লিই শীর্ষে ছিল। দীপাবলির পর থেকে দিল্লির বাতাসের মান তথা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বিপদসীমা ছাড়িয়ে গেছে।"
পরিবেশবিদরা বলছেন, লাগোয়া পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকে ধোঁয়া এসে জমছে দিল্লির আকাশে। দিল্লি-সহ নয়ডা, গ্রেটার নয়ডা, গাজিয়াবাদ, গুরুগ্রামের আকাশ ভরে গেছে ওই খড় পোড়া ধোঁয়াতে। এই ধোঁয়ার সঙ্গেই যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণ সংস্থাগুলির বিষাক্ত কার্বন-ডাই-অক্সাইড মিলে গিয়ে ঘন ধোঁয়াশা তৈরি করছে।
বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার পরিমাণ স্বাভাবিকের থেকে অন্তত আড়াই গুণ বেশি। শীতে বাতাসে ভাসমান এই কণার পরিমাণই চার গুণ ছাড়িয়ে যাবে।
কালীপুজোর রাত থেকে দূষণের পাল্লা ভারী কলকাতাতেও। সাত জায়গায় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স পরীক্ষা করে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছরে দূষণের মাত্রা বেশি। যাদবপুর এলাকায় গত বছর বাতাসের গুণগত মান মাঝারি ছিল, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স ছিল ১২১, এ বছর তাই বেড়ে হয়েছে ২২৯। একই হাল বিধাননগর এলাকারও। বাতাসের গুণগত মান রীতিমতো খারাপের দিকে।
কলকাতা হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল শুধুমাত্র পরিবেশ বান্ধব সবুজ বাজিই পোড়ানো যাবে। লোকালয়ে বা জনবহুল জায়গায় বাজি পোড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছিল। আদালতের নির্দেশ পেয়ে রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ জানিয়েছিল, শহরের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স পরীক্ষা করে রাতে দুঘণ্টা, ৮টা থেকে ১০টা অবধি বাজি ফাটানোর সময় নির্ধারিত করা হয়েছে। তবে শব্দবাজি নয়, আলোর বাজি পোড়ানো যেতে পারে। কিন্তু আদতে দেখা গেছে, ১০টার পরেও যথেচ্ছ শব্দবাজি ফেটেছে শহরের নানা জায়গায়। আর তাতেই বাতাসে ভাসমান বিষাক্ত কণার পরিমাণ চড়চড় করে বেড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) রিপোর্ট আগেই বলেছিল, ভারতের বাতাসে ভাসমান সূক্ষ্ম কণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম ২.৫) মাত্রা হু-র নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে প্রায় ১৭ গুণ বেশি। বিশ্বের বায়ুদূষিত মহানগরীগুলির মধ্যে সবার উপড়ে সটান ছিল দিল্লির। তারপরেই ছিল মুম্বই, কলকাতা। এই সব শহরের বায়ু তাঁদের নির্ধারিত সহনমাত্রার থেকে প্রায় পাঁচ গুণ বেশি বিষাক্ত।