অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে আইপিএল ক্রিকেটে চেন্নাই সুপারকিংস-এ মন কাড়ছেন প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার দুই তরুণ ক্রিকেটার


ভারতে আইপিএল ক্রিকেটে চেন্নাই সুপারকিংস-এ মন কাড়ছেন প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার দুই তরুণ ক্রিকেটার ভারতে আইপিএল ক্রিকেটে চেন্নাই সুপারকিংস-এ মন কাড়ছেন প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কার দুই তরুণ ক্রিকেটার

২০১৩ সালের কথা। ভারতের প্রতিবেশী দেশ শ্রীলঙ্কায় শেষ হয়েছে গৃহযুদ্ধ, কিন্তু পরিস্থিতি তখনও রীতিমতো উত্তপ্ত। যার আঁচ এসে লাগল ভারতের ক্রিকেট টুর্নামেন্ট আইপিএল-এ। তামিলনাড়ুর তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা চিঠি লিখলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে—"তামিলনাড়ু সরকার আইপিএলের ম্যাচ করতে দিতে সম্মতি দেবে, যদি আয়োজকরা লিখিতভাবে বলেন, কোনও শ্রীলঙ্কার খেলোয়াড়, আম্পায়ার, অফিশিয়াল এমনকী সাপোর্ট স্টাফও সেই ম্যাচে থাকবে না…।"

ঠিক দশ বছর পরের কথা। চেন্নাই সুপার কিংস দলের দুই প্রধান অস্ত্র হয়ে উঠেছেন কুড়ি ও বাইশ বছরের দুই শ্রীলঙ্কার বোলার—মাথিসা পাথিরানা ও মাহিষ থিকসানা।

তিন দশকের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শ্রীলঙ্কায়। গোটা দ্বীপরাষ্ট্র একেবারে ছিন্নভিন্ন। প্রাণ হারিয়েছেন এক লক্ষেরও বেশি। আর এই সবকিছুর কেন্দ্রে ছিল জাতি ও ভাষার লড়াই। যার একদিকে শ্রীলঙ্কার সংখ্যাগুরু, ক্ষমতাসীন সিংহলিরা। স্বাধীনতার পর থেকেই যাদের দাবি ছিল, শুধুমাত্র সিংহলি ভাষাই হবে শ্রীলঙ্কার একমাত্র সরকারি ভাষা। এদিকে শ্রীলঙ্কা বহু ভাষা, বহু ধর্মের দেশ। যাদের মধ্যে সিংহলির পরেই রয়েছে তামিল। দেশের উত্তর থেকে পুবে দীর্ঘদিন ধরে বাস করছেন তামিলভাষীরা। শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে যাদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক অবদান অসীম।

স্বাভাবিকভাবেই এই লড়াইয়ের সুদীর্ঘ ছায়া পড়েছিল ভারতের ওপর। নানাভাবে এতে জড়িয়ে যায় ভারত। শ্রীলঙ্কায় দীর্ঘদিন ধরে চলা তামিল-বিরোধী হামলা, হত্যালীলার তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয় ভারতের তামিলনাড়ু জুড়ে। বহু মানুষের আত্মীয়-পরিজনরা পক প্রণালীর এপারে ওপারে ছড়িয়ে আছেন। ফলে যুদ্ধের আঁচে পুড়েছিল ক্রিকেট। এতটাই তার আঁচ যে, শ্রীলঙ্কার কিংবদন্তী ক্রিকেটার মুথাইয়া মুরলীথরণের “বায়োপিক” ভারতে হবে, তাতে বিখ্যাত দক্ষিণী তারকা বিজয় সেতুপতি অভিনয় করবেন শুনে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল কাবেরীর দুই তীরে। বিজয় কিছুদিনের মধ্যেই জানিয়ে দেন, তিনি অভিনয় করছেন না।

ভারতে আইপিএল ক্রিকেট
ভারতে আইপিএল ক্রিকেট

ঘটনাচক্রে, মুরলীথরণ জাতিতে তামিল। তাঁর দাদু ভারত থেকেই চা-বাগানের চাকরিতে গিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কায়। পরে ফিরেও আসেন। থেকে যান তাঁর পুত্র, মুরলীর বাবা চিন্নাস্বামী। মুরলীর স্ত্রী আবার ভারতীয় তামিল, চেন্নাইয়ের বাসিন্দা। এই সূত্রে মুরলী “ভারতীয় ওভারসিজ সিটিজেন”, যার ফলে ভারতে আসতে তাঁর ভিসা লাগে না।

এইরকম পরিস্থিতিতে চিপকে চেন্নাইয়ের ঘরের মাঠে খেলছে চেন্নাই সুপার কিংস এবং তাদের অন্যতম বোলিং অস্ত্র একজন শ্রীলঙ্কার বিশ বছরের সিংহলি—এটা প্রায় কল্পনা করারও বাইরে। অথচ একদম সেটাই হচ্ছে, কোনও সমস্যা ছাড়াই হচ্ছে। পরিস্থিতি এখন অনেকটাই আয়ত্তে। বস্তুত, শ্রীলঙ্কায় রাজাপক্ষে পরিবার প্রায় কোণঠাসা। অর্থনীতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে। দেউলিয়া হবার কিনারায় দাঁড়িয়ে সে দেশ। পাশাপাশি ভারতের সঙ্গেও সম্পর্ক অনেকটা ভাল হয়েছে এখন। যার প্রমাণ, আইপিএলে চেন্নাই দল ও তাঁদের সিংহলি প্রতিভা।

চেন্নাইয়ের মন জিতে নিয়েছেন মাথিসা পাথিরানা। মুরলীর মত তিনিও শ্রীলঙ্কার পাহাড়ি শহর ক্যান্ডির বাসিন্দা। তাঁর বোলিং অ্যাকশন দেখে একবাক্যে সকলে বলছেন, নতুন মালিঙ্গা। কার্যত ওই অ্যাকশনই তাঁর ব্রহ্মাস্ত্র। ডেলিভারির আগে ডান হাত এতটাই পিছনে নিয়ে যান তিনি যে, কার্যত গোলার মত ছিটকে বেরোয় ইয়র্কার বা ফুল লেংথ। আর এতেই ঘুম ছোটে ব্যাটারের। হাতের অদ্ভুত অবস্থানের জন্যই অন্তত বলের চরিত্র বুঝতে শেষ মুহূর্ত অবধি অপেক্ষা করতে হয়।

মাহিষ থিকসানা আবার শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর সদস্য। পাথিরানার মত ‘এলেন, দেখলেন, জয় করলেন’ গোছের সাফল্য না এলেও, প্লে-অফে নিজের জাত চিনিয়েছেন এই অফস্পিনার। চেন্নাইয়ের অন্দরমহলে খবর, পাতিরানাকে স্পট করেছিলেন স্বয়ং মহেন্দ্র সিং ধোনি।

XS
SM
MD
LG