অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্ধুর খোঁজে বিজেপি


ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্ধুর খোঁজে বিজেপি
ভারতে আগামী লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিভিন্ন রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক বন্ধুর খোঁজে বিজেপি

ভারতে ২০২৪-এ আগামী লোকসভা নির্বাচন নিয়ে কৌশল বদল করছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি। বিভিন্ন রাজ্যে নতুন রাজনৈতিক মিত্র খুঁজতে শুরু করেছে বিজেপি শিবির। আগামী রবি ও সোমবার মানে ১১ ও ১২ জুন রাজধ দিল্লিতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সভাপতিদের বৈঠক ডেকেছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেই বৈঠকে কোন রাজ্যে কোন দলকে নতুন বন্ধু হিসাবে কাছে পাওয়া যেতে পারে সে ব্যাপারে রাজ্য নেতৃত্ব নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরবেন। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিত থাকার কথা। প্রথম দিনের আলোচনায় থাকবেন সভাপতি জেপি নাড্ডা সহ দলের সাংগঠনিক পদে থাকা নেতারা।

এ বছরের শুরুতেই বিজেপি জানিয়েছিল, ২০২৪-এ তারা চারশো আসনের টার্গেট করে লড়াইয়ে নামবে। দল নিশ্চিত, অন্তত সাড়ে তিনশো আসনে জয় আসবেই। বাকি আসন তারা শরিকদের সঙ্গে বোঝাপড়া করবে।

কিন্তু কর্নাটকের ভোটের ফল এবং বিরোধী শিবিরের তৎপরতা দেখে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে আগের কৌশলে লক্ষ্যপূরণ হবে না। বরং বিরোধীদের আটকাতে হলে বেশ কিছু আসন ছোট ছোট দলকে ছেড়ে দেওয়া দরকার। এই কাজটি তারা নিষ্ঠার সঙ্গে করেছে উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলিতে। সেখানে এমন দলও বিজেপির শরিক যাদের সংসদে পা রাখার সৌভাগ্য হয়নি। মোদী-শাহ-নাড্ডা জুটি মনে করছে এই সব দলকে উপেক্ষা না করে বরং পাশে দাঁড়ালে আসল লক্ষ্যপূরণ অর্থাৎ বিরোধী জোটকে আটকে দেওয়া যাবে।

নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী মোদী বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী, উপমুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্য সভাপতিদের সঙ্গে দলীয় দফতরে বৈঠক করেছিলেন। সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী ইঙ্গিত দেন এনডিএ অর্থাৎ ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্টকে ফের চাঙা করা হবে। পুরনো শরিকদের ফেরানোর পাশাপাশি নতুন দলকে জোটে আনার চেষ্টা হবে।

কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তরফে এই কাজ শুরু করেছেন অমিত শাহ। তিনি সম্প্রতি তেলগু দেশম পার্টির নেতা তথা এনডিএ-র পুরনো শরিক চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন। নাইডুকে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার পাটনার বিরোধী সমাবেশেও আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। ২৩ জুনের ওই সমাবেশে থাকা না থাকা নিয়ে নাইডু কিছুই স্পষ্ট করেননি। ফলে দুই শিবিরের জন্যই নাইডু অবস্থান ঝুলিয়ে রেখেছেন।

নাইডুর দল অন্ধ্রপ্রদেশে বেশি শক্তিশালী। তবে তেলেঙ্গানাতেও তাঁর প্রভাব আছে। যদিও তেলেঙ্গানায় এখন টিডিপি ভেঙে তৈরি আর একটি দল এখন বেশ সাড়া ফেলেছে। বিজেপি শিবির কে চন্দ্রশেখর রাওকে ক্ষমতাচ্যুত করতে সেই নতুন দলের সঙ্গে বোঝাপড়া গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিজেপি বিহারে থাবা বসিয়েছে শাসক মহাজোটে। সেখানে মহাগঠবন্ধনের শরিক হিন্দুস্থায়ী আম মোর্চার নেতা প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জীতন রাম মাঝির সঙ্গে সম্প্রতি দিল্লিতে বৈঠক করেন শাহ। ওই বৈঠকের আলোচ্য নিয়ে এখনও মুখ খোলেননি মাঝি। তবে যেভাবে তিনি মহাজোটের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন তাতে মনে করা হচ্ছে মাঝি বিহারে বিজেপির পঞ্চম শরিক হতে চলেছেন।

পরিস্থিতি আঁচ করে আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব দিন তিন-চার আগে মাঝির সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। শোনেন তাঁর ক্ষোভের কথা। লালুপ্রসাদের পরামর্শেই সিদ্ধান্ত হয়েছে, বিহারের প্রতিটি জেলা এবং ব্লকে মহাগঠবন্ধনের শরিকদের কমিটি গড়া হবে। যাতে কেউ কারও ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতে না পারে। মাঝির অভিযোগ, পুরনো শক্রুতার কারণে নীতীশ তাঁর দলকে শেষ করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। এই সুযোগে মাঝির দিকে হাত বাড়িয়েছে বিজেপি।

গত মাসে দু’দিনের সফরে তামিলনাড়ুতে গিয়েছিলেন বিজেপি সভাপতি নাড্ডা। তাঁর সফরসঙ্গী হয়েছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ। চেন্নাইয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁদের বৈঠকের মূল আলোচ্য ছিল প্রয়াত জয়ললিতার পার্টি এআইএডিএমকে বাদে আর কোন কোন দলকে পাশে পাওয়া যেতে পারে। এআইএডিএমকে-র অন্দরে এখন তুমুল বিরোধ চলছে দুই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ইকে পালানাস্বামী এবং ও পানিরসেলভমের। ফলে ২০২৪-এর লড়াইয়ে বিজেপি পুরনো এই শরিক দলের উপর পুরোপুরি ভরসা করতে পারছে না। তাছাড়া, দক্ষিণের এই রাজ্যে শাসক দল ডিএমকে এবং কংগ্রেসের বোঝাপড়া বেশ ভাল।

কর্নাটকে বিজেপি সদ্য ক্ষমতা হারিয়েছে। ভোটের পর জনতা দল সেকুলারের সঙ্গে বিজেপি নেতৃত্বের কয়েক দফা কথা হয়েছে। বিরোধী দলগুলির আহ্বান প্রত্যাখান করে জেডিইউ নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিল। হাজির ছিলেন স্বয়ং দলের প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া। অনুষ্ঠানে প্রাক্তনীকে বিশেষভাবে সম্মান জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী।

মোদীর সঙ্গে দেবগৌড়ার ব্যক্তিগত সম্পর্ক বেশ ভাল। ওড়িশার রেল দুর্ঘটনা নিয়ে গোটা বিরোধী শিবির কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে রেলমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করলেও দেবগৌড়া ঢালাও প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রের। বলেছেন, রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো নজির সৃষ্টি করেছেন। দুর্ঘটনাস্থলে টানা ৫৬ ঘণ্টা এক কাপড়ে কাটিয়েছেন। উদ্বার কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেখানে ছিলেন। তাঁর পদত্যাগের দাবি অনৈতিক। সূত্রের খবর, জেডিএস ৯৩ বছর বয়সি দেবগৌড়ার জন্য রাষ্ট্রীয় সম্মান দাবি করেছে। তা নিয়ে এখন কথা চালাচালি চলছে। গত বছরই প্রাক্তন কংগ্রেসি বর্তমানে বিজেপি এসএম কৃষ্ণাকে পদ্মবিভূষণ সম্মানে ভূষিত করা হয়েছে।

XS
SM
MD
LG