অ্যাকসেসিবিলিটি লিংক

চাঁদের পিঠে ভারতের নতুন ও পুরনো বিক্রমের দেখা হওয়া নিয়ে প্রবল আগ্রহ মহাকাশ বিজ্ঞানী মহলে


চাঁদের পিঠে ভারতের নতুন ও পুরনো বিক্রমের দেখা হওয়া নিয়ে প্রবল আগ্রহ মহাকাশ বিজ্ঞানী মহলে
চাঁদের পিঠে ভারতের নতুন ও পুরনো বিক্রমের দেখা হওয়া নিয়ে প্রবল আগ্রহ মহাকাশ বিজ্ঞানী মহলে

চার বছর আগে ভারতের ব্যর্থ হওয়া চন্দ্রাভিযান মিশনে চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার ছিল বিক্রম। চার বছর ধরে তার খোঁজ পায়নি দ্বিতীয় চন্দ্রযানের অরবিটার। পৃথিবী থেকে পাঠানো রেডিও সিগন্যালেও জেগে ওঠেনি বিক্রম। ২১ সেপ্টেম্বর শেষবার ল্যান্ডার বিক্রমের ঘুম ভাঙানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। চাঁদের দক্ষিণ মেরুর নিকষ আঁধারে কোথায় হারিয়ে গেছে বিক্রম তার খোঁজও চলেছিল। এরপর বহুবার অরবিটারের পাঠানো ছবি, নাসার বিজ্ঞানীদের তোলা ছবিতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ছায়া দেখে বিক্রম বলে ভ্রম হয়েছিল। বিক্রমকে জাগানোর কাজ যে বন্ধ করে দিয়ে দিয়েছে অরবিটার এমনটাও নয়।

গত ২৯ দিনে একবার চাঁদের দক্ষিণ পিঠের উপর পুরোপুরি পাক খেয়েছে অরবিটার। পুরোটা পরিক্রমা করতে তার সময় লেগেছে মোট ৬দিন। তার মধ্যেই দক্ষিণ মেরুর আনাচেকানাচে ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিয়েছে সে। অরবিটারের ডেটা বলছে, বিক্রমের ট্রান্সমিটার অকেজো। অ্যান্টেনা রেডিও সংযোগের ক্ষমতা হারিয়েছে। সোলার প্যানেলকে অ্যাকটিভ করার উপায় নেই, কারণ সূর্যের আলো এখন সরাসরি চাঁদের দক্ষিণ পিঠে পড়ছে না। কাজেই বিক্রম আর রোভারের কাজের বেশ কিছুটা করতে হয়েছে অরবিটারকেই।

চাঁদের আঁধার পিঠে আবারও যাচ্ছে ভারতের চন্দ্রযান। তৃতীয় চন্দ্রযানেরও ল্যান্ডার আছে এবং তার নামও বিক্রম। দুই বিক্রমের দেখা হবে কি না তাই নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে কৌতুহল তৈরি হয়েছে।

চাঁদের পিঠে ভারতের নতুন ও পুরনো বিক্রমের দেখা হওয়া নিয়ে প্রবল আগ্রহ মহাকাশ বিজ্ঞানী মহলে
চাঁদের পিঠে ভারতের নতুন ও পুরনো বিক্রমের দেখা হওয়া নিয়ে প্রবল আগ্রহ মহাকাশ বিজ্ঞানী মহলে

২২ জুলাই শ্রীহরিকোটার সতীশ ধবন মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের দ্বিতীয় লঞ্চ প্যাড থেকে উৎক্ষেপণের পরে ৬ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করার কথা ছিল চন্দ্রযান ২-এর ল্যান্ডার বিক্রমের। ঠিকঠাক সফট ল্যান্ডিং হলে ওই দিনই ভোর রাতে বিক্রমের পেট থেকে বেরিয়ে আসত রোভার ‘প্রজ্ঞান।’ টানা ১৪ দিন ধরে চাঁদের দক্ষিণ পিঠে ঘুরে ঘুরে নিজের কাজ করত সে। পৃথিবীর হিসেবে চাঁদের এক পক্ষকাল অর্থাৎ এই ১৪ দিনই চাঁদের দক্ষিণ পিঠে দিন। অর্থাৎ সূর্যের আলো সোজাসুজি পড়বে ওই পিঠে। এই হিসেবেই চন্দ্রযানের উৎক্ষেপণ এবং ল্যান্ডিং প্রোগ্রাম করেছিল ইসরো।

কিন্তু সেই মিশন ব্যর্থ হয়। ইসরো সরাসরি না বললেও, বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি ওই দিন অবতরণের সময় গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি বিক্রম। ৩৫*১০১ কিলোমিটার কক্ষপথ ধরে সোজা চাঁদের মাটিতে নেমে আসার কথা ছিল ল্যান্ডার বিক্রমের। এই ৩৫ কিলোমিটার দূরত্ব পার করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোগ্রামিং ল্যান্ডারের মধ্যে করে রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। সোজা নামতে নামতে শেষ ৫ কিলোমিটারে মুখ ৯০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে চাঁদের পিঠে নামার কথা ছিল বিক্রমের। এই পর্যায়ে গতি এমন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কথা যাতে ভার্টিকালি ঘুরে গিয়ে পালকের মতো চাঁদের মাটিতে নামতে পারে ল্যান্ডার। যাকে বলে সফট ল্যান্ডিং। এই ৯০ ডিগ্রি রোটেশন হয়নি। বরং ২.১ কিলোমিটার থেকে পুরোপুরি উল্টে গিয়ে সজোরে চাঁদের মাটিতে ধাক্কা খেয়েছে সে। এই হার্ড ল্যান্ড বা ক্র্যাশ ল্যান্ড- এর কারণে বিক্রমের অ্যান্টেনা অকেজো হয়ে গেছে, যার কারণে রেডিও যোগাযোগের ক্ষমতা হারিয়েছে বিক্রম। তাই আজ পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

আপাতত চাঁদে চন্দ্রযান ৩ পৌঁছানোর পর পুরনো ও নতুন বিক্রমের দেখা হবে কি না তাই নিয়েও ভারতের মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মধ্যে আগ্রহ রয়ে গেছে।

XS
SM
MD
LG